জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: প্রায় সাত বছর আগে 'মি টু' আন্দোলনের সময় নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে ঝড় তুলেছিলেন অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত (Tanushree Dutta)। ২০১৮-য় সমাজমাধ্যম উত্তাল হয়েছিল ‘মিটু’ ( Me Too) আন্দোলন নিয়ে। অভিনেতা নানা পটেকরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার (Sexual harrasment) অভিযোগ এনেছিলেন অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল নানা পটেকরের (Nana Patekar) বিরুদ্ধে। কিন্তু যথাযথ সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে সেই মামলাটি বন্ধ করা হয়। তার পর মাঝে কয়েকটা বছর বিদেশে ছিলেন। এখন যদিও দেশে ফিরে এসেছেন। তাও বছর দুয়েক হল। যদিও দেশে ফিরে জানান আধ্যাত্মিকতায় (Spiritualism) পথেই হাঁটছেন তিনি। এ বার সমাজমাধ্যমে পাতায় একটি ভিডিয়োতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তনুশ্রী। জানান, হেনস্থার (Harrasment) শিকার তিনি। ফের একবার আলোচনায় উঠে এলেন তিনি। তবে এবার আরও বেশি অসহায় ও আতঙ্কিত! তাঁর অভিযোগ, নিজের বাড়িতেই দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে মানসিকভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। শীঘ্রই পুলিশের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান।
তনুশ্রীর ইন্সটাগ্রাম পোস্ট:
মঙ্গলবার রাতে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন অভিনেত্রী (Tanushree Dutta Posted a Instagram video)। সেখানে কথা বলতে গিয়ে নিজের কান্না চেপে রাখতে পারেননি তনুশ্রী। তিনি বলেন, 'আমাকে বাড়িতে ভয় দেখানো হচ্ছে। পুলিশকে ডেকেছিলাম, ওরা বলল FIR করতে হলে থানায় যেতে হবে। শরীর খারাপ, কাল যাব।'
অভিযোগ:
তনুশ্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমাকে নিজের বাড়িতেই হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। সেই ২০১৮ সাল থেকে চলছে। আর পারছি না। আমি পুলিশকে ফোন করেছি। তাঁরা এসে বললেন থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে। হয়তো কাল যাব থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিতে। গত পাঁচ বছর ধরে হেনস্থার শিকার আমি। আমার শরীর খুব খারাপ। বাড়িতে কোনও সাহায্যের লোক নেই। একাই সব কাজ করি। কেউ আমাকে সাহায্য করুন।' কাতর অনুরোধ তনুশ্রীর। সমাজমাধ্যমে অনেকেই তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও বাড়ির মধ্যে কে বা কারা তাঁকে হেনস্থা করছে সেই বিষয়ে খোলসা করে কিছু জানাননি অভিনেত্রী।
'গত কয়েক বছর ধরে এমনভাবে আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে যে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। বাড়িতে কাজের লোক রাখতে পারছি না। কেউ একজন বা কয়েকজন আমার বাড়িতে কাজ করতে এসে চুরি করেছে, বাজে ব্যবহার করেছে। এখন সব কাজ আমাকে একাই করতে হয়।'
কথা বলতে বলতেই এক জায়গায় এসে থেমে যান তনুশ্রী। তারপর বলেন, 'দরজার বাইরে কে যেন দাঁড়িয়ে থাকে!' আর কিছু বলেননি, কিন্তু তাঁর চোখে মুখে আতঙ্কটা স্পষ্ট ছিল।
বাড়িতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি:
আরও একটি ভিডিয়োতে তনুশ্রী দেখান, রাতে কীভাবে তাঁর বাড়ির ছাদে বা দরজার কাছে অস্বাভাবিক শব্দ হয়। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, 'রাত হলেই এইসব ভয়ানক শব্দ শুরু হয়। ২০২০ সাল থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। অনেকবার বিল্ডিং ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছি, কোনও লাভ হয়নি।'
এই ঘটনার ফলে তনুশ্রী এখন ক্রোনিক ফ্যাটিক সিনড্রমে (Chronic Fatigue Syndrome) ভুগছেন বলে জানান। তিনি বলেন, 'প্রতিদিন এত মানসিক চাপ, ভয় আর যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যে শরীর আর ঠিক নেই। এখন মন্ত্র জপ করে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করি।' তাঁর আরও অভিযোগ, 'কাল একটা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলাম, আর আজই এইসব শুরু হয়ে গেল! আমি জানি এফআইআর-এর সময় আমাকে অনেক কিছু লিখতে হবে।'
এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরে নেটিজেনদের একাংশ তনুশ্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের মতে, এত চাপের মধ্যেও তিনি যেভাবে মুখ খুলেছেন, তা করতে অনেকটা সাহসের প্রয়োজন।
২০০৮ এর ঘটনা:
সমস্যার সূত্রপাত, ২০০৮ সালে 'হর্ন ওকে প্লিজ়' ছবি মুক্তির সময় থেকে। এই ছবিতে একটি গানের দৃশ্যে তনুশ্রীর একা অভিনয় করার কথা ছিল। চিত্রনাট্যে এমনই ছিল বলে জানান অভিনেত্রী। কিন্তু পরে সেই দৃশ্যে নিয়ে আসা হয় নানা পটেকরকেও। এই গানের শুটিং-এর সময়ই নাকি অভিনেতা নানা, অভিনেত্রী তনুশ্রীর সঙ্গে শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
নাচ শেখানোর নামে নাকি শারীরিক ভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করেছিলেন নানা। একইসঙ্গে অভিযোগ ছিল, পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীও তাঁকে জোর করে কাপড় খুলে নাচতে বলেছিলেন। পরে নানা পাটেকরকে ক্লিনচিট দেয় পুলিশ। বিবেক অগ্নিহোত্রী অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। পরবর্তীকালে অভিনেতা সংবাদমাধ্যমের কাছে ঘটনাটি প্রসঙ্গে বলেন, 'আমি জানতাম এই অভিযোগ মিথ্যা। তাই আমি মাথা গরম করিনি। আর এ অনেক পুরনো কথা। আর এগুলি নিয়ে কথা বলারও প্রয়োজন নেই।'
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)