জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: এই সময়ে ছোটপর্দার সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি জীতু কামাল (Jeetu Kamal) ও দিতিপ্রিয়া রায় (Ditipriya Roy)। তবে আচমকাই ছন্দপতন। কিছুদিন আগেই জীতু ও দিতিপ্রিয়ার একটি ছবি নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। সোমবার সরাসরি জীতুর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক কিছু অভিযোগ করেন দিতিপ্রিয়া। সেই অভিযোগ শুনে চুপ থাকেননি জীতু। অভিনেতার দাবি, দিতিপ্রিয়াকে কিছু ব্যক্তি প্ররোচনা দিচ্ছে জীতুর বিরোধিতায়। এদিন একাধিক স্ক্রিনশট শেয়ার করেন জীতু।
দিতিপ্রিয়ার অভিযোগ, "গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা আমাকে নিয়ে নানা রকমের স্পেকুলেশন নিয়ে আমি স্বভাবতই চুপ ছিলাম। কারণ আমি বিশ্বাস করি “Ignorance is bliss”। প্রথমত, একটি ছবি পোস্ট করা নিয়ে জলঘোলা শুরু। প্রোডাকশন টিম সবসময়েই আমাদের কিছু ছবি দিয়ে থাকে দুজনকেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার জন্য। আমার কো-অ্যাক্টর সেই সব ছবিই পোস্ট করেন। সেই ছবিগুলোর মধ্যে একটি আমার ব্যক্তিগতভাবে একেবারেই ভালো লাগেনা। ছবিটা তিনি ডিলিট করেন। তার পর বিভিন্ন ইন্টারভিউতে বারবার বলেছেন, "আমার পোস্ট করা ছবিতে নাকি অনেক খারাপ ও নোংরা কমেন্ট এসেছে, তাই ও (আমি) খুব কষ্ট পেয়েছে "। কিন্তু আমি তো তার সঙ্গে কথাই বলিনি"!
"আমি শুধুমাত্র প্রোডাকশনকে জানিয়েছিলাম, কারণ ছবিটা তাদেরই তোলা ছিল আর ছবিটা আমার দৃষ্টিতে ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট মনে হয়। আমি কোনোরকম নোংরা বা অশ্লীল কমেন্টের কথা কখনোই বলিনি এবং কেউ-ই এই আমার ছবিটি ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট লাগা কে নিয়ে সেইসময় আমায় কোনও আপত্তি জানায়নি। বরং পরবর্তীকালে বারবার শুনতে হয়েছে, আমি নাকি, তাই স্পন্টেনিয়াসলি হ্যান্ডেল করতে পারি না! একটা ছবি তো, তা নিয়ে এত কিছু! তিনি আরো বলেন, “আমি দিতিপ্রিয়াকে খুব শ্রদ্ধা করি এবং স্নেহ করি। ওর ডেডিকেশন অন্যরকমের”। আমার কো-অ্যাক্টর আমাকে ভীষণ সম্মান করেন ও স্নেহ করেন—এটাই আমি বিশ্বাস করতে চাই", দাবি অভিনেত্রীর।
দিতিপ্রিয়া আরও লেখেন, "প্রথম এক মাসের পর থেকেই আমার কো-অ্যাক্টর আমার সঙ্গে কথা বলেন না, শুধু হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখেন। আমি তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন, "তোমার মা-কে ভয় পাই, কিন্তু তোমাকে ভীষণ সম্মান করি।" এতটাই স্নেহ করেন ও সম্মান করেন যে একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “ওই ইভেন্টে যাচ্ছো?” আমি বলি, “না, আমার ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে।” তিনি জানতে চান, “কেন, তুমি কি প্রেগন্যান্ট?”আরেকটি ঘটনায়, একটি AI-তে বানানো ছবি যেখানে দেখা যায় আমরা চুম্বন করছি—ওই ছবি আমাকে মাঝরাতে পাঠিয়ে লেখেন, “বেশ হয়েছে, এটা বয়ফ্রেন্ডকে পাঠাও”। সাথে লেখেন, “এই রাতেই ব্রেকআপ হয়ে যাবে ”।
অভিনেত্রীর আরও দাবি, "এরপর আরেকদিন আমাকে মেসেজ করে বলেন, “আমার তোমার সঙ্গে কথা আছে, দেখো যেন তোমার মা না জানতে পারেন । কাকিমাকে আমি ভয় পাই।”এই সব ঘটনাগুলো প্রাথমিক ভাবে মজার ছলে নিয়ে থাকলেও পরবর্তীকালে আমাকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। সেটেও কিছু বিষয় নিয়ে আমার অস্বস্তি শুরু হয়েছিল। আমাদের শ্যুটিং ফ্লোরে প্রায় সবাই জানে এই ঘটনা। আমি এতদিন চুপ ছিলাম কারণ এসব নিয়ে গণ্ডগোল করে কাজ নষ্ট করতে আমার পরিবার আমাকে শেখায়নি।আমাদের দারুণ চলতে থাক শো’টা ব্যহত হোক আমি চাইনি। আর চুপ থাকতে পারলাম না। কিছু মানুষ মুখ বুজে সহ্য করে গেলে, কিছু মানুষ সীমা ছাড়িয়ে যায়। আমি কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি, আর করবোও না। প্রতিদিনের এই কাঁটাছেঁড়া এখন খুব একতরফা হয়ে যাচ্ছে। আমার সিরিয়ালের কো-অ্যাক্টরের আরও বেশ কয়েকটি কাজেই কো-অ্যাক্টরদের সঙ্গে নানা ভাবে সমস্যা হয়েছে বলে শোনা যায়। তবে আমার কাজ উনি শুরু থেকেই খুব অ্যাপ্রিসিয়েট করেছেন—আমিও চেষ্টা করেছি রেসিপ্রোকেট করার"।
শেষে দিতিপ্রিয়া লেখেন, "আমি যাঁকে সম্মান করি, তাকে সব সময় সব জায়গায় একই রকম ভাবে সম্মান করে এসেছি, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় হোক কিংবা সামনাসামনি। একেক জায়গায় একেক রূপ আমার নেই—এই দ্বিচারিতা আমার একেবারেই অপছন্দ। রইল বাকি আমার “স্পন্টেনিয়াস” হওয়া। ‘ডাকঘর’ নামের একটি সিরিজের প্রমো চলাকালীন আমি ও আমার সেই সিরিজের কো-অ্যাক্টর ‘It’s official’ লিখে সমাজমাধ্যমে একটি রোমান্টিক ছবি পোস্ট করি—এর একটাই উদ্দেশ্য গুঞ্জন ছড়ানো! কারণ এটা ছিল একটি “স্পন্টেনিয়াস” প্রোমোশনাল স্ট্র্যাটেজি। মানুষের সুবুদ্ধি হোক, এই কামনাই করি"।
মঙ্গলবার জীতু শেয়ার করলেন কথোপকথনের একাধিক স্ক্রিনশট। নাম না করেই অভিনেতা লেখেন, "নিজের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আমি কখনোই সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনরকম মতামত দিই না, কিন্তু এটা তো নিছক ব্যক্তিগত নয়। এটা পেশাগত একটা ছোট্ট থেকে ছোট্টতর সমস্যা। ছোট্ট থেকে ছোট্টতর কেন বললাম! কারণ একটা ছোট্ট মেয়ে,বাচ্চা মেয়ে। যে কাজটা করে ফেলেছে,সে নিজেও হয়তো জানেনা যা করেছে সেটা কতটা গভীর। "রাখাল যেদিন সত্যি মানুষখেকো বাঘের মুখে পড়বে সেদিন কেউ সেটা বিশ্বাস করবে না।” তবুও ছোট তো একটু স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে মার্জনা করবেন"।
অভিনেতার আরও দাবি, "আমি সামনাসামনি কথা বলি না। সত্য কথা। আমি স্টুডিয়োতে গিয়ে নিজের কাজ ছাড়া অন্য কোন বিষয় নিয়ে চর্চা করি না। সত্য কথা। আমি হোয়াটসঅ্যাপে ওর সঙ্গে কথা বলি সত্য কথা। কিন্তু,কী কথা বলি সেটাই নিয়েই তো প্রশ্ন! এই নিন। নিজের বাবা-মার সম্মানার্থে আমি সবার সামনে আনতে বাধ্য হলাম। আমি সবটা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম, যদি বলেন ভুল,সরাসরি বলবেন আমি নিজেকে পাল্টে নেব। তবে বাচ্চা মেয়েটির ফোন নাম্বারটা ঝাপসা করলাম, হাজারও হোক মেয়েটি বিপদে পড়তে পারে,তার ফোনটা অফ করে দিতে হতে পারে, সেটা সিনিয়র হিসেবে দেখাটা আমারই কর্তব্য।
সবশেষে জীতু লেখেন, "ভিকটিম কার্ড” খেলাটা আমাদের সমাজে প্রথম নয়। অনেক উদাহরণ আছে কিন্তু এই মেয়েটির কোন দোষ নেই, এই মেয়েটি নিরপরাধ। এই মেয়েটিকে পেছন থেকে প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। যারা দিচ্ছে তারা কিন্তু এই মেয়েটির বিপদের সময় পাশে দাঁড়াবে না। প্লিজ মেয়েটিকে মেয়েটির পথে থাকতে দিন। কাজ করতে দিন। মেয়েটি ভালো। শিক্ষিত মেয়ে। হ্যাঁ,একটু অপরিণত,আর নিজের প্রেমিকের জন্য জীবনটুকু পর্যন্ত দিতে পারে। আর প্রেমিক মহাশয়কে বলছি এনাকে যত্ন করে রাখবেন প্লিজ হাতছাড়া করবেন না,আপনি রত্ন পেয়েছেন"।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)