জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: শীতকাল মানেই শহর ও রাজ্য জুড়ে নানা অনুষ্ঠান, জলসার আয়োজন চলছে। সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে নয়া বিতর্ক। কলকাতার এক তৃণমূল (TMC) কাউন্সিলরের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে লগ্নজিতা চক্রবর্তীকে (Lagnajita Chakraborty) প্রধান শিল্পী হিসেবে ডাকা হয়। সেখান থেকেই দলের অন্দরে দেখা যায় ক্ষোভ। সোশ্যাল মিডিয়ায় আর জি কর কাণ্ডে (RG Kar Issue) প্রতিবাদে পথে নামা শিল্পীদের বয়কটের ডাক দেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। আর এরপরেই সেই অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়েন লগ্নজিতা। তার বদলে সেই জায়গায় আমন্ত্রণ জানানো হয় নচিকেতা চক্রবর্তীকে (Nachiketa Chakraborty)।
আরও পড়ুন- Raas: নিজের জীবনের গল্প নিয়ে বড়পর্দায় পরিচালক তথাগত, প্রথমবার জুটিতে বিক্রম-দেবলীনা...
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় বিচার চেয়ে রাজ্যের একাধিক শিল্পী পথে নেমেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন জনপ্রিয় গায়িকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী। তবে তাঁর প্রতিবাদ ছিল রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ করে। এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয় তৃণমূলের একাংশ। দলীয় কর্মীরা তাঁকে বয়কট করার দাবি তোলেন। তবে শুধু সংগীতশিল্পী লগ্নজিতা শুধু নয়, শিলাজিতকে ঘিরেও দলীয় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। শিলাজিৎ মজুমদারও আর জি কর ইস্যুতে পথে নামেন এবং বিচারের দাবি জানান। তবে তাঁর অবস্থান ছিল অপেক্ষাকৃত মৃদু। শিলাজিৎ সরাসরি রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেননি। এই বিষয়টি ব্যবহার করে তৃণমূলের একাংশ শিলাজিতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। দেবাংশু ভট্টাচার্যের মতো তৃণমূলের তরুণ নেতারা এই বিতর্কে সরব হয়েছেন। দেবাংশু স্পষ্টই জানিয়েছেন, “কর্মীদের আবেগকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্পী এবং সংস্কৃতি কখনো রাজনীতির বলি হতে পারে না।”
বেশ কিছু বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে দলের অন্দরেই। সেই বিভ্রান্তি মেটাতেই ফের মঙ্গলবার সকালে এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে দলের অবস্তান স্পষ্ট করেন কুণাল ঘোষ। তিনি লেখেন, 'বিভ্রান্তি রাখবেন না। আবার বলছি। প্রথমত আরজিকর-এর জঘন্য ঘটনার আমরা সবাই প্রতিবাদী। যাঁরা মিছিল, সভা করেছেন, করতেই পারেন। দ্বিতীয়ত, বিরোধী দল তাদের কাজ করবে। করতেই পারে। তৃতীয়ত, নাগরিকরা উদ্বেগ জানাবেন। জানাতেই পারেন। শিল্পীরাও প্রতিবাদী মিছিলে হাঁটতেই পারেন। কিন্তু যে শিল্পীরা পরিকল্পিত কুৎসা করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীসহ সরকার ও দলকে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন, সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন, তৃণমূল সমর্থকদের কুৎসিত ভাষায় অপমান করেছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্ররোচনা ছড়িয়েছেন, তাঁদের এই শীতের মঞ্চে তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত জলসা বা অনুষ্ঠানে যেন মঞ্চে না দেখা যায়। এই শীতে এঁদের বয়কট করা হোক। কোনো তৃণমূল নেতার কোনো বিভ্রান্তি থাকলে উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে নিন। কর্মী সমর্থকদের আবেগকে সম্মান দিন'।
বিভ্রান্তি রাখবেন না। আবার বলছি।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) December 31, 2024
1) RGKar এর জঘন্য ঘটনার আমরা সবাই প্রতিবাদী। যাঁরা মিছিল, সভা করেছেন, করতেই পারেন।
2) বিরোধী দল তাদের কাজ করবে। করতেই পারে।
3) নাগরিকরা উদ্বেগ জানাবেন। জানাতেই পারেন। শিল্পীরাও প্রতিবাদী মিছিলে হাঁটতেই পারেন।
কিন্তু যে শিল্পীরা পরিকল্পিত কুৎসা…
তৃণমূলের একাংশের দাবি, শিল্পী লগ্নজিতার অবস্থান এবং বক্তব্য দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। কেউ কেউ মনে করেন, শিল্পীদের পথে নামা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু লগ্নজিতা যে ভাষায় রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। অন্যদিকে শিলাজিৎ বিচারের দাবি জানালেও কখনোই রাজ্যের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেননি। অন্যদিকে আরেক দলের মত, একদিকে শিলাজিতকে মঞ্চে ডাকা হয়, অন্যদিকে লগ্নজিতাকে বয়কটের কথা বলা হয়। তাহলে কি শিল্পীরাও রাজনৈতিক বিভাজনের শিকার হবেন?এই বিতর্কের ফলে তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি এবং দলের সংস্কৃতিমূলক অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)