নিজস্ব প্রতিবেদন: মঙ্গলবারও ভাগ্য নির্ধারণ হল না শাহরুখ (Shah Rukh Khan) পুত্র আরিয়ান খানের (Aryan Khan)। মঙ্গলবার স্থগিত রইল আরিয়ানের জামিনের শুনানি। মঙ্গলবার প্রায় ৫০ মিনিট বম্বে হাইকোর্টে সওয়াল জবাব চলে। আগামী কাল অর্থাৎ বুধবার দুপুর ২.৩০ মিনিটে আরিয়ানের মামলার শুনানি হবে বলে ঘোষণা করেন বিচারক নিতিন সাম্বর। ইতিমধ্যেই ১৮ দিন জেল হেফাজতে কাটাচ্ছেন আরিয়ান খান।
মঙ্গলবার আরিয়ানের জামিনের বিরোধিতা করে এনসিবি বম্বে হাইকোর্টে জানায় যে, আরিয়ান খানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। সে শুধুমাত্র মাদকদ্রব্য সেবনই করে না, তার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য কেনা বেচারও অভিযোগ এনেছে এনসিবি। আরিয়ান জামিন পেলে সে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারে। রবিবারই মাদক মামলার সাক্ষী তাঁর বয়ান পরিবর্তন করেছে। এনসিবির তরফ থেকে দাবি করা হয় যে আরিয়ান তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে। তথ্য লোপাটেরও আশংকা প্রকাশ করেছে এনসিবি। এমনকি শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানির বিরুদ্ধেও সাক্ষীকে প্রভাবিত করার অভিযোগ এনেছে এনসিবি।
মঙ্গলবার আদালতে আরিয়ানের আইনজীবী প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি আরিয়ানের সপক্ষে বলেন, 'ইভেন্ট ম্যানেজার প্রতীক গাবার আমন্ত্রণে মাদক পার্টিতে গিয়েছিলেন আরিয়ান। একটি বিজ্ঞাপনের কারণে ২ অক্টোবর প্রতীকের অনুরোধে ঐ পার্টিতে যান আরিয়ান ও আরবাজ। পার্টি শুরু করার আগেই আটক করা হয় তাঁদের। সেদিন আরিয়ানের কাছ থেকে কোনও রকমের মাদক পায়নি এনসিবি। তাই আরিয়ানকে গ্রেফতার করার কোনও কারণই ছিল না এনসিবির কাছে। তাসত্ত্বেও এরপর ৩ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় আরিয়ানকে। রেকর্ড করা হয় ওঁর স্টেটমেন্ট। তারপর আরিয়ান খানের কোনওরকম মেডিক্যাল টেস্ট করা হয়নি। মেডিক্যাল টেস্ট ছাড়া কীভাবে মাদক মামলা ফাইল করা সম্ভব!এরআগে অনেক পিটিশনে আমরা আবেদন করি কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। আরবাজের জুতো থেকে ছয় গ্রাম মাদক পাওয়া গেছে তার জন্য আরিয়ানকে দায়ী করা সঠিক নয়। পাশাপাশি এফআইআর শিটে মোবাইল বাজেয়াপ্ত করার কোনও উল্লেখই নেই অথচ আটক করার পরই মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে আরিয়ানের। মাদক নয়, শুধুমাত্র ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে আরিয়ানকে গ্রেফতার করেছে এনসিবি।'
আরও পড়ুন: Aryan Khan Drug Case: ৮০ হাজারের মাদক অর্ডার, ফাঁস আরিয়ানের চাঞ্চল্যকর চ্যাট
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে কোথাও মাদকপার্টির উল্লেখ নেই, এমনকি মোবাইল চ্যাটের সঙ্গে মাদক পার্টির কোনও সম্পর্কও নেই। যে যে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের কথা বলা হচ্ছে তা ২০১৮ এবং ২০১৯-এর। আমি কোনও এনসিবি অফিসারের বিরোধিতা করছি না। এমনকি তাঁদের সাক্ষী প্রভাকর সৈল বা কেপি গোসাভিকে নিয়েও চিন্তিত নয়। এমনকি আমার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক নেতারও সম্পর্ক নেই। আরিয়ান মাদক পার্টিতে গিয়েছিল, কিন্তু সে কিছুই করেনি অথচ তাঁকে গ্রেফতার করা হল। ঐ পার্টিতে অনেকেই উপস্থিত ছিল,তাঁদের থেকে প্রাপ্ত মাদক অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি তাঁদের একবছরের জেল হতে পারে। তাঁদের নেশামুক্তি কেন্দ্র পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে কোনও মামলাই হতে পারে না। এনসিবিরি দাবি অনুযায়ী অচিত ও আরবাজের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও মাদক পার্টিতে অচিত উপস্থিতই ছিল না। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বাড়ি থেকে। অচিত ও আরিয়ান চ্যাটে শুধুমাত্র অনলাইন গেম নিয়ে আলোচনা করেছিল। এর থেকে বেশি কোনও বিষয়ে কথা বলেননি তাঁরা।' এদিন সুপ্রিম কোর্টের কেস রাগিনী দ্বিবেদী ভার্সেস স্টেট অফ কর্নাটকের উদাহরণ দিয়ে মুকুল রোহাতগি বলেন, সেই কেসেও অভিযুক্তের থেকে কিছু মাদক পাওয়া যায়নি। আরিয়ানের মতোই শুধুমাত্র ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। তাই সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে জামিন দিয়েছিল। এছাড়াও বম্বে হাইকোর্টেরই একটি মামলার উদাহরণ দেন তিনি। শাহরুখ খানের ছেলে হওয়ার কারণেই এই মামলা নিয়ে উৎসাহিত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মিডিয়া। রাজনৈতিক নেতা ও এনসিবি আধিকারিকদের সমস্যার প্রভাব আরিয়ানের মামলায় পড়া অনুচিত বলে দাবি করেন তাঁর আইনজীবী। জামিনের আর্জি জানিয়ে এদিন বক্তব্য শেষ করেন মুকুল রোহাতগি।
গত ২ অক্টোবর মাদকপার্টি থেকে আটক করা হয়েছিল আরিয়ানকে। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা জেরার পর পরদিন এনসিবি গ্রেফতার করে তাঁকে। দুদফায় জামিন খারিজের পর এনসিবি হেফাজত থেকে গত ৮ অক্টোবর জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। তারপর থেকেই আর্থার রোড জেলে বন্দি আরিয়ান খান। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের পর মুম্বই সেশন কোর্টও খারিজ করে দেয় আরিয়ান খানের জামিনের আর্জি। এরপরই বম্বে হাইকোর্টে আরিয়ানের জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী অমিত দেশাই। বম্বে হাইকোর্টে সতীশ মানশিন্ডে বা অমিত দেশাই নয়, আরিয়ানের হয়ে সাওয়াল জবাব করছেন প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি। অন্যদিকে এনসিবির হয়ে সওয়াল জবাব করবেন এএসজি অনিল সিং। বিচারপতি নিতিন সাম্বরের সিঙ্গেল বেঞ্চের কাছে আজ দুই পক্ষই নিজেদের সমর্থনে বক্তব্য পেশ করবেন তিনি। তিনি কথা বলেছেন আরিয়ানের দুই আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে, অমিত দেশাইয়ের সঙ্গে।