সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: মুক্তির অপেক্ষায় রাজর্ষি দে-র ছবি মায়া। ম্যাকবেথের অনুপ্রেরণায় তৈরি এই ছবি। সেই ছবিতে মায়াঙ্কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ও পারিপার্শ্বিক নানা বিষয়ে আড্ডায় অভিনেতা।
ম্যাকবেথের ম্যালকম চরিত্রে দেখা যাবে আপনাকে?
রাহুল: ডানকানের বড় ছেলে ঠিকই। তবে চরিত্রটা একটু ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর জীবনে কিছু সমস্যা রয়েছে তবে সেটা শেক্সপিয়ারিয়ান কমপ্লিকেশনের থেকে আলাদা। মজার ম্যালকম। মজাটা যে সবসময় হাস্যরস উদ্দীপক হয়, তা নয়। এ ছোটবেলায় দেখেছে যে এর বাবা তার মাকে খুন করেছে। শৈশবটা ছারখার হয়ে গেছে। তাই ওর জীবনে দোষের শেষ নেই। ছেলেটার মাথার ঠিক নেই। ওর জীবনে এত ক্রাইসিস যে, আর সেই ক্রাইসিস থেকে চরিত্রটা এত ডার্ক, যে চরিত্রটা করতে মজা পেয়েছি।
সেই কারণেই এই ছবিতে করতে রাজি হলেন?
রাহুল: রাজর্ষি আগেও মাস্টি কাস্টিং নিয়ে কাজ করেছে। আবার কাঞ্জনজঙ্ঘায় আমি দেবেশ করেছি। যা আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। রাজর্ষি আমার কাছে কিছু চরিত্র নিয়ে এলে আমি না করতে পারি না। ও আমার কাছে সেই বন্ধু। রাজর্ষি যখন বলেছে ওকে চোখ বন্ধ করতে ভরসা করতে, তখন ভরসা করেছি।
এখানে অনেক চেনা মুখ, যাঁদের সঙ্গে আপনি অনেকদিন কাজ করছেন, কেমন ছিল শ্যুটিং?
রাহুল: সত্যি বলতে প্রচুর মজা করেছি। আমার সৌভাগ্য যে এই ছবিতে সুদীপ্তা চক্রবর্তী আমার স্ত্রীয়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন। আমার কাছে ফ্যান বয় মোমেন্ট। একসময় টুম্পাদির সাহায্য, টুম্পাদির থেকে শেখা তারপর সেই টুম্পাদি শটের শেষে বলছে তুই এতো ভালো অভিনয় করিস কী করে, তখন মন ভালো হয়ে যায়। শিক্ষকের থেকে প্রশংসা পাওয়া বড় পাওনা। টুম্পাদি আমার সেই শিক্ষক। থাপ্পড় খেয়ে খেয়ে শিখেছি টুম্পাদির থেকে। আমি, টুম্পাদি, কমলদা আগে পিউপা করেছি। তারপর এই ছবি। রাজর্ষি অভিনেতাদের তুলোয় করে রাখে, সেটা থেকেই অভিনয়টা উন্নত করে। দুঃখজনকভাবে অনেকসময়েই সেটা পাওয়া যায় না। সেটা বাজেটের কারণে তবে রাজর্ষি সেটা সীমিত বাজেটেও আমাদের দেয়।
কেরিয়ারের এই সময়ে দাঁড়িয়ে ছোটপর্দা না বড়পর্দা, কোনটা প্রেফার করেন?
রাহুল: সিবিআই, ইডি না ডেকে যেভাবে রোজগার করা যায়, সেই সব কটা পথ আমার ভালো লাগে। সিরিয়াল, সিনেমা, সিরিজ যাই হোক আমি সবক্ষেত্রেই সৎ।
আরও পড়ুন- Pori Moni: পরীমণির বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ! আদালতে রিপোর্ট ২৩ অগস্ট...
ছোটপর্দার কনটেন্ট নিয়ে অনেক কথা হয়, এমনকী ব্যাক টু ব্যাক সিরিয়াল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে...
রাহুল: এটার একটা অর্থনৈতিক কারণ আছে, সেটা বুঝতে হবে। আমরা যখন ছোটবেলায় টিভি দেখতাম তখন দারুন দারুন কাজ হচ্ছে, সিরিয়াল থেকে টেলিফিল্মস। তখন টেলিভিশন ছিল শহুরে। শহরের লোকের বাড়ি টিভি থাকত। এরপর এল মুক্ত অর্থনীতি। তখন টেলিভিশন হয়ে যায় সাধারণের এবং তারপর গ্রামাঞ্চলের। যখন টেলিভিশনে ভালো ভালো কাজ হচ্ছে তখন গ্রামাঞ্চলে চলত বাবা কেন চাকর, সখী তুমি কার, সুজনসখী ইত্যাদি। এবার যখন টেলিভিশন ঢুকে গেল গ্রামে গ্রামে, তখন বাবা কেন চাকর চলে এল টেলিভিশনে। সিনেমাটা এখন হয়ে গেছে শহুরে। তাই এটা পুরোটাই অর্থনৈতিক।
অনেকেই বলেন, ‘দর্শক দেখছে তাই হচ্ছে...’
রাহুল: হ্যাঁ, দর্শক দেখছে তো। আমি গিয়ে একটা মেয়েকে লগ্নভ্রষ্টা হওয়া থেকে বাঁচাচ্ছি, এর কোনও অর্থ নেই। কিন্তু দর্শক এটাই চাইছে, তাই হচ্ছে। আমরা টিআরপি কমেছে বলে ভাবি কিন্তু আসলে তা নয়। অনেকে ওটিটিতে দেখছে।
আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব ভোকাল। সম্প্রতি রাজ চক্রবর্তীর নয়া সিরিজ নিয়ে একটা পোস্ট করেছিলেন, রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে সরাসরি কথা না বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রতিবাদ কেন?
রাহুল: রাজ যদি এক নিউজ পেপারে ওপেনলি বলতে পারে, আমার মতো খারাপ মানুষ হয় না, যেটা ও আমায় সরাসরি বলতে পারত যে আমার সঙ্গে সমস্যা আছে, তাহলে আমি কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় বলব না! রাজ তো আমার ক্ষতি করেছে। তখন ৬ মাস হয়েছে যে আমার সিনেমা হিট হয়েছে তখনই ও সাক্ষাৎকারে বলল, ‘রাহুলের মতো খারাপ মানুষ হয় না। আমি আর ওর সাথে কাজ করব না’। আমার পরিবার, আমার বন্ধু, আমার শিক্ষক, আমার চারপাশে যাঁরা আছেন তাঁদের সামনে আমার কী অবস্থা হয়েছে, আমার কী ডিপ্রেশন হয়েছে সেই কথা ও ভেবেছে? আমি যদি গ্রামের একটা ছেলে হতাম, এই শহরে একা এসে স্ট্রাগল করতাম, আমার যা ডিপ্রেশন হয়েছিল সেই সময় যদি আমার বাবা-মা পাশে না থাকত, প্রিয়াঙ্কা পাশে না থাকত তাহলে এই শহরে একটা সুশান্ত সিং রাজপুত হতে পারত। আমি তো আর কোনও পরিচালকের সম্পর্কে এরকম কখনও বলি না।
আরও পড়ুন- Arfan Nisho Movie: 'হাওয়া'র পর 'সুড়ঙ্গ', কলকাতায় মুক্তি পাচ্ছে আরফান নিশোর ছবি
যে চরিত্রের লুক নিয়ে বলেছেন, সেই চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী রয়েছেন, যিনি আপনার বন্ধু...
রাহুল: ঋত্বিক আমার কাছের বন্ধু। আমার মতে, বাংলার অন্যতম শক্তিশালী অভিনেতা। ঋত্বিক তো আলাদা করবেই। কিন্তু তুমি পরিচালক হয়ে একটা চরিত্রের লুক নিয়ে ন্যুনতম ভাববে না, সেটা কী করে হয়? এটা না সত্যিই আমি রাজের থেকে আশা করিনি। কারণ সবকিছু সরিয়েও যদি দেখি, রাজের মতো স্টার মেকার বাংলায় খুবই কম এসেছে। রাজ এতো স্টারকে জন্ম দিয়েছে, তা খুব কম লোকই পেরেছে। এমনকী দেবের সাফল্যের একটা বড় অংশ চ্যালেঞ্জ। সেটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সেই রাজ যদি কোনও চরিত্রের পিছনে এতটুকু ভাবনা না খরচ করে, সেটা হতাশ তো লাগেই।