সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: 'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...', এই দিনেই বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত ও আব্দুল জব্বাররা। ভাষার এই মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামকে স্মরণীয় রাখতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ। এরপর থেকেই সারা বিশ্বের বাংলাভাষীরা এই দিনটি পালন করেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে। প্রতিবছরের মতো এই বছরও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কিন্তু আমন্ত্রিতের তালিকা থেকে উঠছে নানা প্রশ্ন কারণ বাদ পড়েছেন এমন অনেকেই যাঁদের প্রায়শই দেখা যায় এই মঞ্চে।
প্রতি বছর এই মঞ্চে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য হাজির থাকলেও এবার সেই আমন্ত্রিতের তালিকায় নাম ছিল তাঁর তবে অবশেষে তিনি এলেন। কিছুদিন আগেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায় ও কবীর সুমন। এই অনুষ্ঠানে প্রতুল মুখোপাধ্যায় থাকলেও হাজির থাকছেন না কবীর সুমন। বুধবার সকালে দিল্লিতে ইডির কাছে হাজিরা দিতে গিয়েছেন দেব, কিন্তু সেই দেবের নাম রয়েছে আমন্ত্রিত তালিকার সবার প্রথমে। অথচ তারকা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন সাংসদ মিমি চক্রবর্তী, সাংসদ নুসরত জাহান থেকে শুরু করে কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের মতো তারকা।
দেশপ্রিয় পার্কে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, অথচ তার ঠিক পাশের লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মিমি ডাক পেলেন না অনুষ্ঠানে। বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও সায়ন্তিকা ডাক পেলেন, তবে আমন্ত্রণ পেলেন না কৌশানী। কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে মুকুল রায়ের কাছে হেরেছিলেন কৌশানী। সেই মুকুল রায় এখন তৃণমূলে, সেই কারণেই কি কৌশানী একটু দূরত্ব বজায় রাখছেন? তাহলে কি মিমির মতোই রাজনীতি থেকে দূরত্ব বাড়ছে কৌশানীর?
বাদ পড়েছেন বসিরহাটের বহুল চর্চিত সাংসদ নুসরত জাহান। প্রায়শই বিতর্কে থাকেন তিনি। এমনকী সম্প্রতি সন্দেশখালি নিয়ে তাঁকে কথা শুনতে হচ্ছে নেটপাড়ায়। বিতর্ক এড়াতেই কি বাদ পড়লেন নুসরত? একদিকে যেমন আমন্ত্রিত বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, অন্যদিকে কিন্তু এই তারকা তালিকায় নাম নেই উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের। সম্প্রতি বিয়ে নিয়ে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। তাহলে কি এক্ষেত্রেও বিতর্ক এড়াতে আমন্ত্রিতের তালিকায় কাটছাঁট? প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তর কিন্তু অজানা।
আরও পড়ুন- Virat Kohli-Anushka Sharma: জল্পনা শেষ, বিরুষ্কার পুত্র লাভ...
প্রসঙ্গত গতবছর ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘আমরা দেখছি বহু কারণে, নানান সাম্প্রদায়িক ছাপ বাংলা ভাষায় চলে এসেছে। যে শব্দগুলোকে আমরা কখনও বাংলা বলি না, ভাবি না, সেই শব্দ এখন বাংলা ভাষায় ঢুকছে। আমরা কোনও দিন বাংলা ভাষায় পানি ব্যবহার করি না। আমরা কোনও দিন কখনও দাওয়াত দিই না। সুতরাং, ভাবতে হবে কোন ভাষা আমাদের ভাষা।’’ মঞ্চে দাঁড়িয়েই শুভাপ্রসন্নর এই বক্তব্য খারিজ করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শব্দকে এইভাবে সম্প্রদায় দিয়ে বেঁধে রাখা যায় কিনা, প্রশ্ন তোলেন মমতা নিজেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘শুভাদাকে একটা কথা বলব। দেখুন, কতগুলি শব্দ রয়েছে, যেগুলি সারা বিশ্বের। যেমন ‘মা’ বললে সবাই জানে দু’টি শব্দ রয়েছে। একটা ‘মা’ আর একটা ‘মাদার’। আর একটা শব্দ রয়েছে ‘জল’ বা ‘ওয়াটার’। কিন্তু ওয়াটারকে কেউ কেউ ‘পানি’ বলে। এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। মাকে কেউ ‘আম্মা’ বলে। এটাকে মেনে নিতে হবে।’’ তবে শুধু মঞ্চেই নয়, শুভাপ্রসন্নর এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিজীবী মহলেও নানান তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এরপরে শুভাপ্রসন্ন বলেন, তিনি রাজনীতি করেন না তাই কোনও সম্প্রদায়কে খুশি রাখার তাগিদ তাঁর নেই। তাঁর দাবি, বাংলা ভাষায় দিন দিন ‘সাম্প্রদায়িকতার ছায়া’ পড়ছে। সেই সূ্ত্রেই মনে করা হয়েছিল এবার সরকারি বিজ্ঞাপনে শুভাপ্রসন্নের নাম না থাকা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। যদিও এদিন ঘোষণা ছাড়াই একুশের অনুষ্ঠানে রীতি মেনে হাসিমুখে হাজির হয়ে শুভাপ্রসন্ন বার্তা দিলেন, তিনি মমতার পাশেই।
যদিও বিতর্ক থেকে যাচ্ছে অন্য় আরেক মমতা ঘনিষ্ঠ বিদ্বজ্জন সম্পর্কে। তিনি পুরাণবিদ অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। গত একুশের মঞ্চেও হাজির ছিলেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক অতীতে বাংলা দিবস বিতর্কে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঈষত্ দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলেই তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অভিমত। এদিন তাত্পর্যপূর্ণ অনুপস্থিতি তাঁর। বিতর্ক উস্কে তাঁকে দেখা গেল পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে রাজ্যপালের ভাষা দিবস অনুষ্ঠানে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)