জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বহুমুখী। বিচিত্রধর্মী। বিচিত্রকর্মাও বলা চলে তাঁকে। তিনি নাটক-থিয়েটার-যাত্রা-সিনেমা-- নানা মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে খুঁজে নিয়েছিলেন তাঁর প্রতিভার নিজস্ব সৃজনক্ষেত্র। সত্যজিৎ রায় মৃণাল সেনের সঙ্গে কাজ করেছেন, উত্তম-সুচিত্রার সঙ্গে কাজ করেছেন। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন টলিউড-বলিউড। নিজেকে গড়েছেনও যেমন, ভেঙেছেনও তেমন নির্মম ভাবে। তিনি কখনও ভিলেন, কখনও নিছক ভাঁড়, কখনও আবার দোর্দণ্ডপ্রতাপ ফাদার ফিগার, কখনও বিশুদ্ধ কমেডিয়ান। ২৯ মার্চ এহেন উৎপল দত্তের জন্মদিন।
আরও পড়ুন: Shah Rukh Khan: পাঠানের সাফল্যে সাহসী শাহরুখ, পর পর ফেলবেন ৯ বোম...
১৯২৯ সালের ২৯ মার্চ অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন উৎপল দত্ত। বাবা ছিলেন গিরিজারঞ্জন দত্ত। প্রাথমিকভাবে শিলংয়ের স্কুলে পড়াশোনা করেন, পরবর্তীকালে প্রথমে কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুল, ১৯৪৫ সালে সেখান থেকে ম্যাট্রিকুলেশান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৯ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইংরেজিতে সাম্মানিক স্নাতক।
প্রথম থেকেই নাট্যশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন তিনি। ইংরেজি নাটক, মূলত শেক্সপিয়রের নাটক নিয়ে কাজ শুরু করেন। পরে নানা বাঁক বদল ঘটে তাঁর শিল্প-ভাবনায়। শেক্সপিরীয় নাট্যভুবনেই তাঁর মূল প্রোথিত ছিল তবে বিশেষ করে গণনাট্যের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। এর পর তিনি নিজেকে ক্রমশ টেনে নিয়ে গিয়েছেন নতুন নতুন সৃজনবৃত্তে। শেক্সপিয়রের অভিজাত অভিনয়শিল্প থেকে ক্রমে সাধারণের মনোভাবনার স্তরে চলে এসেছিলেন।
দর্শনের দিক থেকে তিনি ছিলেন বামপন্থী ও মার্ক্সবাদী। তাঁর এই বামপন্থী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটত থিয়েটারমঞ্চে। তাঁর বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রয়েছে 'টিনের তলোয়ার', 'মানুষের অধিকার' 'কল্লোল' 'ব্যারিকেড'। তাঁর নাটকগুলিকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়-- পূর্ণাঙ্গ নাটক, পথনাটিকা, যাত্রাপালা।
শোনা যায়, তিনি নাকি বলতেন, তিনি পর্দায় অভিনয় করেন টাকার জন্য, নাটকই তাঁর প্রকৃত কর্মক্ষেত্র। কিন্তু চলচ্চিত্রে যাঁরা তাঁর অভিনয় দেখেছেন তাঁরা সম্ভবত এ কথা বিশ্বাস করবেন না। কেননা, হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে বহু ছবিতে তিনি অসাধারণ অভিনয়কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।
নিজের কাজের জন্য নানা স্বীকৃতি সম্মান পেয়েছেন উৎপল দত্ত। ১৯৯০ সালে সংগীত নাটক একাডেমি ফেলোশিপ পেয়েছিলেন থিয়েটার জগতে অসামান্য অবদানের জন্য। ১৯৭০ সালে মৃণাল সেনের ভুবন সোম ছবিতে ভুবন সোম চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট অ্যাক্টর সম্মান পান। কমেডিয়ান রোলে সেরা অভিনেতা হিসেবে তিনি ১৯৮০ ১৯৮২ এবং ১৯৮৭ সালে ফিল্ম ফেয়ার ফর বেস্ট কমেডিয়ান বিভাগে পুরস্কার পান। ১৯৯৩ সালে আগন্তুক সিনেমায় অভিনয়ের জন্য বেঙ্গলি ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাশোসিয়েশান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।
কিন্তু কয়েকটি মাত্র পুরস্কার দিয়ে উৎপল দত্তের মতো শিল্পীকে মাপা যায় না। বাঙালির বিনোদনে-মননে তিনি এক অন্যরকম মিশ্রণ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।