কলকাতা: সম্ভবত সরছেন বিমান বসু। কিন্তু রাজ্য সিপিআইএমে বিমান বাবুর উত্তরসূরি হচ্ছেন কে? এতদিন পর্যন্ত সূর্যকান্ত মিশ্রকেই পরবর্তী রাজ্য সম্পাদক হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছিল। গৌতম দেব অপারেশন করিয়ে ফেরার পর যদিও দলের একাংশ থেকে জোরালোভাবে তুলে ধরা হচ্ছে তাঁর নামও। অর্থাত্ সিপিআইএমের NEXT STATE SECRETARY হয় সূর্যকান্ত, নয় গৌতম।
অনিল বিশ্বাসের মৃত্যুর পর রাজ্য সম্পাদক হন বিমান বসু। ইতিমধ্যেই তিন দফায় রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দলীয় নিয়ম মেনে এবার নতুন রাজ্য সম্পাদক নির্বাচনের সময়।
সামনের মার্চে সিপিআইএমের রাজ্য সম্মেলন। সেখানেই বিমান বসুর হাত থেকে ব্যাটন যাবে নতুন কারও হাতে। কিন্তু কার হাতে যাবে সেই গুরুদায়িত্ব?
সময়টা রীতিমত কঠিন। রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর, এখন প্রধান বিরোধী দলের জায়গা ধরে রাখাটাও চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার কাঁধে ভরসা রাখবে রাজ্য সম্মেলন? দৌড়ে রয়েছেন দুজন। এক- সূর্যকান্ত মিশ্র। দুই- গৌতম দেব।
অন্যান্য কমিউনিস্ট পার্টির মতো সিপিআইএমেও রাজ্য সম্পাদক কে হবেন তা নির্ভর করে বেশকিছু সাংগঠনিক নিয়ম আর সমীকরণের ওপর। জনপ্রিয়তাই সেক্ষেত্রে একমাত্র মাপকাঠি নয়। সাংগঠনিক এই সমীকরণ মাথায় রেখেই গত সাড়ে তিন বছরে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন সূর্যকান্ত। এবং অনেকটাই পিছনে ফেলেছেন গৌতম দেবকে।
উনিশটি জেলা সম্মেলনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে হবে রাজ্য সম্মেলন। এর মধ্যে বারোটির দায়িত্বেই সূর্যকান্ত। জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগে, ঘনিষ্ঠতায় গত সাড়ে তিন বছরে অনেকটা এগিয়ে তিনি। বাম জমানায় ধরা ছোঁওয়ার বাইরে থাকা সূর্যকান্ত নিজের ইমেজ ভেঙেচুড়ে নতুনভাবে গড়েছেন সচেতনভাবেই। জেলায় জেলায় কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটানো, খুন-আক্রান্ত কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে ছুটে যাওয়া, এককথায় দলের নানান স্তরে সংযোগ বাড়ানোর কাজে খামতি রাখেননি। যার ফলে এককালের নাকউঁচু মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র এখন প্রিয় সূর্য দা। এই জায়গায় কিছুটা পিছিয়ে গৌতম দেব। এটা ঘটনা যে,আক্রান্ত কর্মী সমর্থকদের জন্য শুধু নিজের জেলা থেকেই এক কোটি টাকা চাঁদা তুলেছেন গৌতম। কিন্তু শারীরিক কারণে ছুটে বেড়াতে পারেননি।
তবে সার্বিক জনপ্রিয়তায় এগিয়ে কিন্তু গৌতম দেবই। ঝাঁঝালো, ক্যারিসম্যাটিক বক্তব্যেই মূলত বাজিমাত তাঁর। মমতাই হোন বা অন্য কোনও টার্গেট, গৌতম দেবের ধারালো আক্রমণ রেয়াত করে না কাউকেই। জননেতাসুলভ এই ইমেজ বিরোধী দলের কাণ্ডারি হওয়ার দৌড়ে কিন্তু এগিয়ে রেখেছে গৌতমকে।
তবে রাজনৈতিক সংগঠনে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টিও কিন্তু বড় ব্যাপার। সে রাজ্য সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। রাজ্য সম্পাদক পদে দলের শীর্ষনেতৃত্ব কাকে চাইছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কখনও কখনও শেষ কথাও। এখানে এগিয়ে সূর্যকান্ত।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অত্যন্ত প্রিয় গৌতম দেব। দক্ষ সংগঠক হিসেবে বিমান বসুরও পছন্দের তালিকায় আছেন গৌতম। কিন্তু রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও, শৃঙ্খলাপরায়ন সৈনিক হিসেবে বুদ্ধবাবুদের কাছে কদর বেশি সূর্যকান্তরই। ঘনিষ্ঠ মহলে মাঝেমধ্যেই দল বা নেতাদের নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করে থাকা গৌতম এখানে পিছিয়ে। যেমন পিছিয়ে একে গোপলন ভবনের পছন্দের ক্ষেত্রেও। কট্টরপন্থী কারাটের অনেক বেশি পছন্দ সূর্যকান্ত।