জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে একের পর হিংসার ঘটনা ঘটছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজনৈতিক অশান্তিতে। এনিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহাকে নিশানা করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এমনকি তিনি মন্তব্য করেছেন, কমিশনার হিসেবে ব্যর্থ রাজীবা। ভোটের ২ দিন আগে কমিশনারকে একপ্রকার তিরস্কার করলেন রাজ্যপাল। এনিয়ে অবশ্য রাজ্যপালকে পাল্টা নিশানা করল তৃণমূল কংগ্রেস। এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করে চলেছেন রাজ্যপাল, বললেন স্পিকার।
আরও পড়ুন-স্পর্শকাতর বুথের তালিকা তৈরি কমিশনের, মোট কত বুথের মধ্যে কত স্পর্শকাতর?
কী বললেন রাজ্য়পাল? সি ভি আনন্দ বোস আজ বলেন, এইসব অশান্তিতে খুনি কে? রাজ্যপাল বলেন, 'আপনি আপনার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। আগুন ও রক্ত নিয়ে খেলা চলছে। এই হিংসার জন্য দায় কার? আমি দেখেছি সন্তান হারিয়ে মায়ের কান্না। পঞ্চায়েত ভোটের হিংসায় খুনি কে? হিংসার ছবি দেখে আমি শঙ্কিত। রক্ত নিয়ে খেলা বন্ধ করতে হবে। আমি জেনে এসেছিলাম যে এটা গুরুদেবের ভূমি। চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির।' কিন্তু বাস্তবের ছবিটা তা নয় বলেই মত রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের। তাঁর কথায়, 'আমার মোহভঙ্গ হয়েছে। হিংসাদীর্ণ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি দেখেছি, মানুষের মন ভয়ে ভর্তি। তাঁরা মাথা নিচু করে বাঁচছেন। মানুষ শুধু একটাই প্রশ্ন আপনাকে করছে, আমাদের জীবন ফেরত দিন। নির্বাচনকে বুলেটপ্রুফ বানান, ব্যালটপ্রুফ নয়। বুধে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করুন। সিসিটিভি বসান, নজরদারি চালান। ভুয়ো ব্যালট ছাপা বন্ধ করুন।'
রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, রাজ্যপাল বিজেপির এজেন্ট। রাজ্যপাল হিসেবে সি ভি আনন্দ বোস সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রাজভবনকে ব্যক্তিগত কাজে ব্য়বহার করছেন উনি। রাজভবনের টাকা নিজের বই ছাপছেন। অশোক স্তম্ভ বসাচ্ছেন আর ভোটের শেষ দিকে উনি বিরোধীদের হয়ে প্রচার করতে লাগলেন। উনি প্রমাণ করে দিলেন, উনি রাজনীতিটাই করছেন। রাজনীতি করার জন্য বিরোধীরা অশান্তি পাকাচ্ছেন। গতকাল আমাদের এক তৃণমূল কর্মীর ছেলেকে বোমা বিস্ফোরণ করে মেরে ফেলেছে। সেগুলো উনি বলছেন না। বিজেপির হয়ে দালালি করছেন উনি। হঠাত্ নেতাজির মতো টুপি পরে নেতাজি সাজা যায় না। উনি আশারাম বাপুর মতো আনন্দরামজি বাপুর মতো বাংলার মানুষকে কুত্সিতভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলেন। অবিলম্বে ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কমিশনের। শেষদিন উনি রাজনৈতিক দলের নেতার মতো প্রচার করলেন। নির্বাচনী আচরণবিধি সাংবিধানিক পদ দিয়ে প্রভাবিত করছেন।
এদিকে, রাজ্য়পালের ওই মন্তব্য নিয়ে সিপিএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্য যা ঘটছে সেটাই বলছেন রাজ্যপাল। কিন্তু তার জন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা দরকার। তা যদি না করতে পারেন তাহলে ব্যক্তিগতভাবে তার বেশিকিছু করার রয়েছে বলে মনে করি না। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। কমিশন যে ব্যর্থ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কমিশন যে ব্যর্থ হচ্ছে তার কারণ রাজ্য প্রশাসন কমিশনকে ব্যর্থতার দিকেই নিয়ে য়াচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের যে ভূমিকা সেটা নিয়ে রাজ্যপাল যত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেবেন ততই ভালো। যা ঘটছে সেটাই বলছেন রাজ্যপাল। তাতে যদি তৃণমূল কংগ্রেসের রাগ হয় তাহলে বুঝতে হবে তৃণমূল কংগ্রেস চাইছে এই বর্বরতা বজায় থাকুক।
অন্যদিকে, রাজ্যপালের ওই মন্তব্য নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যপাল ব্যর্থ হবেন এটা জেনেই তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকার পশ্চিমবঙ্গে তাদের সম্পূর্ণ দখলদারি কায়েম করতে চায়। তারা চাইছে বিনা বাধায় জয়লাভ করতে। সেই কারণেই ওই কমিশনারকে কমিশনে বসানো হয়েছে। রাজ্যপালের একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। হয়তো তিনি সরাসরি রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে যেতে পারেন না। রাজ্যের মানুষ জানেন রাজ্য কী হচ্ছে, কী হতে চলেছে। এই অবস্থায় নির্বাচন করার মতো পরিস্থিতি নেই। তৃণমূল অনেক কদর্য ভাষা বলতে পারে। যতদিন ওদের সরকারে রয়েছে ততদিন এই আক্রমণটা চলবে।