বিশ্বজিত্ মিত্র: কলকাতার আইসারের (IISER) গবেষক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু (unnatural death)! মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে আত্মঘাতী পিএইচডি তৃতীয় বর্ষের (সিনিয়র রিসার্চ) ছাত্র (PhD third year student)। নাম অনামিত্র রায়, বয়স ২৫ বছর। সুইসাইড নোটে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ। অভিযোগ করেছেন শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের। অভিযোগ করেছেন র্যাগিং-এর। অভিযোগ করেছেন থিসিস নকলেরও!
পরিবার ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেতেন ওই ছাত্র। গতকাল সন্ধের পর মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন। রাতে তাঁকে নিয়ে আসা হয় কল্যাণী এইমস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। পরিবারের দাবি, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়িতে ফোন করে জানানো হয় যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলে শারীরিকভাবে স্থিতিশীল। কিন্তু শুক্রবার সকালে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে এসে জানতে পারেন যে ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ সুইসাইড নোট
এদিকে মৃত্যুর আগে সমাজ মাধ্যমে একটি দীর্ঘ লেখা পোস্ট করে গিয়েছেন অনামিত্র রায় নামে ওই মেধাবী ছাত্র। যে লেখার প্রতি লাইনে বাবা-মা ও কলেজের সিনিয়রদের বিরুদ্ধে শারীরিক-মানসিক অত্যাচার-নির্যাতনের বিস্ফোরক অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা সুইসাইড নোটে অনামিত্র রায় নিজেকে অটিজম আক্রান্ত বলেও দাবি করেছেন। তিনি লিখেছেন, "এর সবই শুরু হয়েছিল শৈশবকাল থেকেই। বাবা-মায়ের কাছে বারবার শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার। যাঁরা সবসময়ই খুব রেগে থাকত ও অপরিণত ছিল। সর্বোপরি, আমি অটিজম আক্রান্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছিল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বুলিংয়ের কারণে আমি প্রথম আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলাম। ১৪ বছর বয়সে, দশম শ্রেণিতে, আমি প্রথম মেজর ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হই। বাড়িতে ক্রমাগত নির্যাতনের মধ্যে কোনওভাবে আমি কলেজে ভর্তি হই। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে, তখন আমার বয়স ১৮ বছর, আমি আবার মেজর ডিপ্রেশনে পড়ে যাই। তারপর থেকে এটি আর আমাকে ছেড়ে যায়নি।"
সৌরভ বিশ্বাসের র্যাগিং
এরপরই সৌরভ বিশ্বাস নামে অপর এক পিএইচডি ছাত্রের নামোল্লেখ করে অনামিত্র লিখেছেন, "এখন কেন? আমার অনেক সহকর্মীর সঙ্গে আমিও ল্যাবে পিএইচডি ছাত্র সৌরভ বিশ্বাস নির্যাতনের বারবার শিকার হয়েছি। আমাদের সুপারভাইজার অনিন্দিতা ভদ্রের কাছে বারবার অভিযোগ করার পরও কেউ কানে তোলেননি। ১২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে, ল্যাবে সৌরভ দীর্ঘ সময় ধরে আমার উপর চিৎকার করে। আমি তারপর ইমেইল ও অফিসিয়াল পোর্টালের মাধ্যমে আইআইএসইআর কলকাতা অ্যান্টি-র্যাগিং সেলের কাছে অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু তারা তারপরেও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।"
"আমি এই পৃথিবীর জন্য..."
অনামিত্র লিখেছেন, "আমার সুপারভাইজারও আমার আচরণেই কেবল ত্রুটি খুঁজে পেয়েছিলেন। এর কয়েকদিন পরই আমি আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা হয়নি। আমি থেরাপি এবং ওষুধ চেয়েছিলাম, আজ পর্যন্ত নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। আমার নির্যাতনকারীর সঙ্গে সবাইকে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে দেখা আমার পক্ষে সহজ ছিল না। আমি সৌরভ বিশ্বাসের কাছ থেকে কেবল ক্ষমা চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটাও আমাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়...এমনি সৌরভ বিশ্বাসের থিসিসের বেশিরভাগ অংশই অসৎ উপায়ে করা। সেটা আমার সুপারভাইজার উপেক্ষা করেছেন...মনে হচ্ছে আমি কখনওই এই পৃথিবীর জন্য তৈরি হইনি।"
তাঁর লেখা শেষ চিঠিতে অনামিত্র রায় তাঁর জন্য সবাইকে লড়াই করার কথা বলেছেন। আরও দাবি জানিয়েছেন, যাতে তাঁর নির্যাতনকারী সৌরভ বিশ্বাস কোনওভাবেই পিএইচডি ডিগ্রি না পায়। পাশাপশি তাঁকে র্যাগিং-বিরোধী আইনের আওতায় এনে তাঁর যেন বিচার হয়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
আপনি কি অবসাদগ্রস্ত? বিষণ্ণ? চরম কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনার হাত ধরতে তৈরি অনেকেই। কথা বলুন প্লিজ...
iCALL (সোম-শনি, ১০টা থেকে ৮টা) ৯১৫২৯৮৭৮২১
কলকাতা পুলিস হেল্পলাইন (সকাল ১০টা-রাত ১০টা, ৩৬৫ দিন) ৯০৮৮০৩০৩০৩, ০৩৩-৪০৪৪৭৪৩৭