অর্ণবাংশু নিয়োগী: প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্ত-ই বহাল রাখল ডিভিশন বেঞ্চে। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়-ই বহাল রাখল ডিভিশন বেঞ্চ। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সিঙ্গল বেঞ্চের সেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হয়। মামলা করে প্রাথমিক বোর্ড, অপসারিত পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং একাধিক পক্ষ। সেই মামলারই শুনানি শেষ হয় ১৯ জুলাই। এদিন তার রায় ঘোষণা করল বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি লপিতা বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। মোট ৮৫ পাতার নির্দেশ দিল এদিন ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রাথমিক শিক্ষক মামলায় সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি নিয়োগে গরমিল থাকার অভিযোগে ২৬৯ জনের চাকরি বাতিলেরও নির্দেশ দিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ। একইসঙ্গে পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের অপসারণের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশও বহাল থাকবে বলে এদিন জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সিবিআই-এর রিপোর্ট থেকে এটা স্পষ্ট যে অনেকেই টেট ফেল করেও চাকরি পেয়েছেন। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ২৬৯ জনকে কোনওভাবেই পুনর্বহাল নয়। এককথায় ২৬৯ জন প্রার্থীর চাকরি বাতিলের নির্দেশে সিলমোহর দিল ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত এদিন স্পষ্ট আরও জানিয়ে দিল যে, এই ২৬৯ জন বরখাস্ত প্রার্থী দ্রুত শুনানির আর্জিও জানাতে পারবেন না। পাশাপাশি, বহাল থাকল অপসারিত পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর ও তাঁর পরিবারের সম্পত্তির হিসাব পেশের নির্দেশও।
ডিভিশন বেঞ্চের স্পষ্ট নির্দেশ, যতদিন না তদন্ত শেষ হচ্ছে, সিবিআই ও ফরেনসিক তদন্তে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। একক বেঞ্চের নজরদারিতে তদন্ত হবে। আদালত সময় মতো রিপোর্ট চাইবে তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকে। প্রাথমিক মামলায় বিচারপতির অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একাধিক নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল মামলার সঙ্গে যুক্ত একাধিক পক্ষ। ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, মানিক ভট্টাচার্য এবং চাকরি বাতিল হওয়া ব্যক্তিরা। আজ রায়দান করল বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি লপিতা বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। এদিন ৮৫ পাতার নির্দেশনামায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকেই মান্যতা দিল বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি লপিতা বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
আরও পড়ুন, Primary TET: 'আস্তে আস্তে পরিবর্তন হবে', পর্ষদের নয়া কমিটির প্রশংসা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের
ডিভিশন বেঞ্চের সাফ পর্যবেক্ষণ, সিঙ্গল বেঞ্চের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রাথমিক পর্ষদ। কেন ২৬৯ জনকে বাড়তি ১ নম্বর দেওয়া হয়েছিল, তা আজ পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। OMR শিট সহ একাধিক নথি সিঙ্গল বেঞ্চের সামনে পেশ করেনি পর্ষদ। বারবার নথি চেয়ে কোনও ভুল করেনি সিঙ্গল বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চের সামনে পেশ করা সিবিআই-এর স্ট্যাটাস রিপোর্ট প্রত্যাশামান অর্জন করেনি। তাই পর্ষদের নথি ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ বহাল থাকবে। এদিন ডিভিশন বেঞ্চের রায় প্রসঙ্গে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, 'তদন্তে যেন আর ঢিলেমি না হয়। সিবিআই ঠিকমতো তদন্ত করবে কিনা, সেটাই দেখার।' বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'এই রায়দান প্রত্যাশিত ছিল। এসএসসি দুর্নীতিতে কারা যুক্ত ছিল, প্রতিষ্ঠিত হল।' কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, 'আদালতের প্রতি বিশ্বাস আরও দৃঢ় হল।' অন্যদিকে, তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের প্রতিক্রিয়া, 'এখনও কেউ দোষী প্রমাণিত হয়নি।'