জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: অবশেষে দেশবাসীর অপেক্ষার প্রহর কেটেছে। ১৪ জুলাই শুক্রবার দুপুর ২ টো ৩৫ মিনিটে 'চন্দ্রযান-৩' (Chandrayaan 3) এর সফল উৎক্ষেপণ হয়েছে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বভাবতই ট্রেন্ড করছে #Chandrayaan3। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন ওরফে ইসরোর (ISRO) বিজ্ঞানীদের কুর্নিশ জানিয়ে ট্যুইট করেছে নেটপাড়া। আর এই ফাঁকে কলকাতা পুলিসও (Kolkata Police) তাদের কাজটি সেরে ফেলল। চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণে অভিনন্দন জানিয়েই পুলিশ একটি কার্ড পোস্ট করেছে। সেই কার্ডটি পোস্ট করার ৫০ মিনিটের মধ্যে শতাধিক শেয়ার হয়েছে। ফের একবার পুলিসের রসবোধে মুগ্ধ হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।
আরও পড়ুন: Chandrayaan-3: অবশেষে ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর সফল উৎক্ষেপণ, ৪০ দিনে পৌঁছাবে চাঁদে
কলকাতা পুলিস যে কার্ড পোস্ট করেছে, সেখানে উপর-নীচে দু'টি ছবি দেখা যাচ্ছে। উপরে রয়েছে ভারতের সবচেয়ে ভারী রকেটের চাঁদের দেশে পাড়ি দেওয়ার মুহূর্ত। নীচের ছবিতে রয়েছে এক ব্যক্তির বেপরোয়া ভাবে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পারাপারের দৃশ্য়। এই ছবিতে বোল্ড করে কলকাতা পুলিস ক্যাপশন দিয়েছে যে, 'চাঁদেই যদি যেতে হয়, চন্দ্রযানেই যান নাহয়'! কলকাতা পুলিস খুব সহজে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এভাবে রাস্তা পার হলে সোজা চাঁদে যেতে হবে। তাই জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে, ট্রাফিক সিগন্যাল দেখে, পথ নিরাপত্তার সচেতনতা বার্তা দিল পুলিস। নেটিজেনরা যা দেখে ফের পুলিসের প্রশংসা করেছে। ঘটনাচক্র কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বই পুলিসের পোস্ট প্রায়ই ভাইরাল হয়। তারা মানুষকে আইন-কানুনের বিষয়ে সচেতন করার জন্য এরকম মিমের হাতই ধরেছে।
ভারতের মহাকাশপ্রযুক্তির দিক থেকে বড় ঘটনা ঘটে গেল। এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণও এই কারণে যে, এর আগের মিশন, 'চন্দ্রযান-২', ব্যর্থ হয়েছে। যে-ব্যর্থতার ক্ষত এখনও দগদগে। ভারতের হেভিয়েস্ট জিএসএলভি। তৈরি হয়েছে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে। চাঁদে এটি সফ্ট ল্যান্ডিং করবে। এই ল্যান্ডিংটা খুবই জরুরি। কেননা, আগের চন্দ্রাভিযান মিশন 'চন্দ্রযান-২' চাঁদের মাটিতে হার্ড ল্যান্ডিয়ের জন্য ব্যর্থ হয়েছিল। সেই ব্যর্থতা এবার মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর ভারত, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভারতের মহাকাশবিজ্ঞানীর দল। চাঁদে পাড়ি দেওয়ার আগে তাদের মহাকাশযান ধারণকারী পেলোড ফেয়ারিংকে জিওসিঙ্ক্রোনাস লঞ্চ ভেহিকেল মার্ক থ্রি-র সঙ্গে জুড়ে নিয়েছে 'ইসরো'। ভারতের সবচেয়ে ভারী রকেটের সঙ্গে পেলোড ফেয়ারিংয়ের জুড়ে দেওয়ার কাজটি শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারেই করা হয়েছে। 'ইসরো'-প্রধান এস সোমনাথ আগেই জানিয়েছিলেন, ১২ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই দিনগুলিই উৎক্ষেপণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ, 'অরবিটাল ডায়নামিকস' অনুসারে, চাঁদে পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে চন্দ্রযানটির এই সময়েই সবচেয়ে কম জ্বালানি (মিনিমাল ফুয়েল) লাগবে এবং এর কর্মক্ষমতাও এই সময়ে চূড়ান্ত (হায়ার এফিসিয়েন্সি) থাকবে।
এই প্রকল্প নিয়ে 'ইসরো' খুবই আত্মবিশ্বাসী ও উচ্ছ্বসিত। তারা জানিয়েছে, লুনার সারফেসে বা চাঁদের মাটিতে ঘোরার সময়ে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের ভূ-প্রকৃতি ও তার পরিবেশ নিয়ে 'ইন-সিটু কেমিক্যাল অ্যানালিসিস' চালাবে। এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু-অঞ্চলেই মূলত ঘোরাফেরা করবে। চন্দ্রযান-৩-এর তিনটি অংশ-- প্রোপালশন মডিউল, ল্যান্ডার, রোভার। প্রোপালশন মডিউলটি চাঁদের কক্ষপথের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে এসে ল্যান্ডার ও রোভারকে ঠেলে দেবে। এর পরের মূল দায়িত্ব ল্যান্ডারের উপরই। তার কাজ রোভারটিকে চাঁদের পিঠে সফ্ট ল্যান্ডিং করানো। একবার সফল ভাবে সফ্ট ল্যান্ডিং হয়ে গেলেই তখন এই অভিযানের সমস্ত দায়িত্বভার একার কাঁধে তুলে নেবে রোভার। সে শুরু করে দেবে তার গবেষণা-- মাটি পরীক্ষা, খনিজনমুনা সংগ্রহ, চাঁদের মাটির তাপ ও ভৌত-রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ ইত্যাদি। আর এই চন্দ্রযান-৩-এর মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে রোভার নামিয়ে চাঁদ-চর্চা শুরু করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মহাকাশচর্চার ক্ষেত্রে রেকর্ড করে ফেলবে ভারত। কেননা, জটিল কঠিন ও বিরল এই কাজটি সুষ্ঠু ভাবে করার ক্ষেত্রে বিশ্বে চতুর্থ দেশ হতে চলেছে সে।
আরও পড়ুন: Liquor Price: সকাল বিকেল ফ্রিতে মদ চাই, রাজ্য সরকার দাম বাড়াতেই আন্দোলনে শ্রমিকরা