মৌমিতা চক্রবর্তী
এনআরসি নিয়ে রাজ্যে এসে কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন কানহাইয়া কুমার। আর তাতে যারপরনাই অসন্তুষ্ট রাজ্যের বাম নেতা-সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কানহাইয়ার বিরুদ্ধে উগরে দিচ্ছেন ক্ষোভ। কেউ কেউ তো বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নিয়ে একেবারেই অজ্ঞ কানহাইয়া কুমার। কানহাইয়ার সঙ্গে দলের অবস্থানের যে ফারাক আছে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস।
শুক্রবার শিলিগুড়ির বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাবের একটি সভায় কানহাইয়া কুমার বলেন,''রাজ্যে এনআরসি হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এটা সদর্থক পদক্ষেপ। আমরাও এনআরসি বিরোধী আন্দোলন চালাচ্ছি।'' এমনকি মুখ্যমন্ত্রী এনআরসি বিরোধী লড়াই করতে চাইলে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে বলেও বার্তা দিয়েছেন সিপিআই নেতা। রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে বামেরা। এমন প্রেক্ষাপটে দেশে বাম আন্দোলনের 'ভাইরাল নেতা' কানহাইয়ার মন্তব্যে রাজনৈতিক ডিভিডেন্ট পাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মনে করছেন সিপিএম নেতারা। কানহাইয়া ওই মন্তব্যের পর একের পর এক অভিযোগে তিতিবিরক্ত সিপিআই-ও।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর সমালোচনার মুখে কানহাইয়া কুমার। সিপিএম সমর্থকরা খোলাখুলি ফেসবুকে লিখেছেন, মমতা আর বিজেপির পক্ষে যারা আমরা তাদেরই বিরুদ্ধে। যে যত বড় মাতব্বরই হোক! সে যত বড় সেলেব্রিটিই হোক! কেউ লিখেছেন, যাই হোক ইউটিউব নেতার শুভাকাঙ্ক্ষীরা পারলে নেতাকে জানিয়ে দেবেন যে পশ্চিমবঙ্গে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করার জমি দিয়েছেন মমতা। এরাজ্যের বুকে সাম্প্রদায়িক জিগির মমতার হাত দিয়ে তৈরি। বিজেপি তাকেই তা দিয়ে আজ ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। সর্বোপরি এ রাজ্যের বুকে মমতাই হাত ধরে বিজেপিকে নিয়ে এসেছে।
এর মধ্যে আবার ছড়িয়েছে কানহাইয়া কুমারের সঙ্গে আসানসোলের মেয়র জিতেন তিওয়ারির ছবি। দাবি করা হয়েছে, ছবিটা ২০১৭ সালের। জিতেনের সঙ্গে চা খেয়েছিলেন কানহাইয়া। সিপিএম সমর্থকদের একাংশের মন্তব্য, সবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছেন কানহাইয়া। তাও লোকসভা ভোটে বিশাল ব্যবধানে হেরেছেন নিজের গড়েই। দু'দিন ছাত্র আন্দোলন করার পরে প্রকাশ করাত কেও হেয় করার সাহস পায়। তোলাবাজ জিতেন তিওয়ারির সঙ্গে দেখা করছেন। নিজেকে সেলিব্রেটি মনে করে ফেলেছেন কানহাইয়া। সিপিআই নেতার মন্তব্যে অসন্তুষ্ট এসএফআই-ও। ময়ূখ বিশ্বাসের কথায়,''এনআরসি নিয়ে বাম ও সিপিএমের সঙ্গে কানহাইয়ার অবস্থানের ফারাক রয়েছে।''
বাম নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, কানহাইয়ার বক্তব্যে জনমানসে একটা বার্তা যাচ্ছে, এনআরসি বিরোধী লড়াইয়ে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিরুদ্ধে তিনিই যে সক্ষম মুখ, তা ফলাও করে প্রচার করেন তৃণমূল নেত্রী। সেই দাবিকেই তো কার্যত শিলমোহর দিলেন কানহাইয়া। এতে ধাক্কা খাবে বামেদের সাম্প্রদায়িক বিরোধী ও রুটিরুজির আন্দোলন।
আরও পড়ুন- 'নগ্ন' করে শাস্তি পড়ুয়াদের! বোলপুরের স্কুলের ঘটনায় রিপোর্ট তলব ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রীর