জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নাবালিকাদের সুরক্ষার প্রশ্নে একচুলও নড়তে নারাজ কেন্দ্র (Central Government)। সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) হলফনামা দিয়ে কেন্দ্র জানাল, ১৮ বছরই যৌন সম্মতির জন্য নির্ধারিত বয়স হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং যুক্তিসঙ্গত। এর নীচে সম্মতির বয়স নামালে শিশুদের সুরক্ষার (Child Security) কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে এবং এই আইনকে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে।
মামলাটি কী:
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে আলোচিত একটি মামলায় পকসো আইনে (Pocso Act) সাজাপ্রাপ্ত এক পুরুষের পক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং বলেন, অনেকক্ষেত্রেই নাবালিকা ও নাবালকের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতিতে গড়ে ওঠা সম্পর্ক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাই যৌন সম্মতির বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার আর্জি জানান তিনি।
কেন্দ্রের বক্তব্য:
এর বিরোধিতায় কেন্দ্রের পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি সাফ জানান, '১৮ বছর বয়সের সীমা কোনও খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত নয়, এটি বহুদিনের আইনি-সাংবিধানিক ভাবনার ফসল। এই বয়সের আগে কোনও সম্পর্কেই সম্মতি ধরা উচিত নয়, কারণ নাবালিকা বা নাবালকের মানসিক পরিপক্বতা, সামাজিক পরিস্থিতি ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা এই সম্পর্ককে জটিল করে তোলে।'
এই যুক্তিতেই কেন্দ্র POCSO আইনের অধীনে সম্মতির বয়স (age of consent) কমানোর বিরোধিতা করেছে, শিশু নির্যাতনের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে। কেন্দ্র সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে যে, পকসো (POCSO) আইনের অধীনে সম্মতির বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা উচিত নয়। সরকার সতর্ক করেছে যে, এমন পরিবর্তন সমাজে শিশু নির্যাতনের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল (এস.জি.) একটি হলফনামা পেশ করে এই অবস্থান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সম্মতির বয়স কমানো হলে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপর যৌন শোষণ এবং পাচারের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বাড়বে।
কেন্দ্রের মূল যুক্তি:
শিশু পাচার ও শোষণ: এস.জি. আদালতকে জানিয়েছেন যে, ১৬ বছর বয়সীদের যৌন শোষণের জন্য পাচার করা হতে পারে। সম্মতির বয়স কমানো হলে পাচারকারীরা এই আইনের সুযোগ নিয়ে নিজেদের অপরাধকে বৈধ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে।
মেয়েদের দুর্বলতা: কেন্দ্র যুক্তি দিয়েছে যে, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা এখনও শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে সম্পূর্ণ পরিপক্ক নয়। তারা সহজেই প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে এবং ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রেমের সম্পর্ক: অনেক ক্ষেত্রে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা অল্পবয়সী মেয়েদের সঙ্গে তথাকথিত 'প্রেমের সম্পর্ক' তৈরি করে তাদের যৌন শোষণ করে। সম্মতির বয়স কমানো হলে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
আইনের উদ্দেশ্য: পকসো আইনটি মূলত শিশুদের যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এই আইনের মূল উদ্দেশ্যকে দুর্বল করা হলে তা সমাজের জন্য বিপজ্জনক হবে।
আদালতের হাতে থাক সিদ্ধান্ত, আইনে নয়:
হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে আদালত চাইলে প্রয়োজন অনুসারে ছাড় দিতে পারে, কিন্তু আইনের সাধারণ রূপে কোনও ছাড় রাখা উচিত নয়। কেননা এতে করে ‘ভালবাসার সম্পর্ক’ নামে বহু শিশুর শারীরিক ও মানসিক শোষণ, এমনকি পাচারের ঘটনাও বাড়তে পারে।
সরকারের এই অবস্থান এসেছে এমন এক সময়ে, যখন কিছু আইনজীবী এবং অ্যাক্টিভিস্ট পকসো আইনের অধীনে 'সম্মতির বয়স' কমানোর পক্ষে যুক্তি দিচ্ছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, অনেক ক্ষেত্রে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েরা নিজেদের মধ্যে প্রেম বা সম্মতিমূলক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, কিন্তু আইন অনুযায়ী তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এর ফলে অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকেই জেল খাটতে হয়।
তবে, কেন্দ্র সরকার এই যুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, এই ধরনের ব্যক্তিগত ঘটনাগুলির চেয়ে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্মতির বয়স কমানো হলে তা সমাজের বৃহত্তর শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার শুনানি চালিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)