রাজীব চক্রবর্তী: দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তাল বাংলার রাজ্য-রাজনীতি (Bengal Politics)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ডাকে সেই দীঘার জগন্নাথ মন্দির (Digha Jagannath Temple) দর্শন করে আসার পর থেকেই। তবে, সম্প্রতি দিলীপ-বিতর্ক যেন বেশি করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে দিল্লি থেকে ডাক এল তাঁর। কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বান। দেখা করলেন তিনি। দিল্লিতে (Delhi) গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন দিলীপ। আর তার পরেই যেন পুরনো ছন্দে ফিরে এলেন দিলীপ ঘোষ।
নানা বিষয়ে কথা বললেন। কী কী বললেন? লোকসভায় আসন পরিবর্তন, শমীক ভট্টাচার্যের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়া প্রসঙ্গে বললেন, 'শুধু এই দুটোই নয়, এর আগেও বহু ঘটনা ঘটেছে। আমাকে মিটিংয়ে চেয়ার দেওয়া হয়নি, এমন ঘটনাও ঘটেছে। বহু অপমান সহ্য করেছি। তবুও আমি দল ছেড়ে যাইনি। যাঁদের জল্পনা করা কাজ, রটানো কাজ, তাঁরা তাই করছেন।' দিল্লি আসা নিয়ে বললেন, 'দল আমাকে গত এক-দেড় বছর কোনও দায়িত্ব দেয়নি। দায়িত্ব দিলে আমি তা পালন করব। বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করলে লড়ব। আমার নিজের এলাকা খড়গপুর। সেখান থেকেই লড়তে চাই।'
দীঘা জগন্নাথ মন্দির এবং মমতা
দীঘায় জগন্নাথমন্দিরে যাওয়ায় বিতর্ক প্রসঙ্গে বললেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতে সকলের নয়, কর্মী-সমর্থকদেরও নয়, দলের কিছু লোকের অসুবিধা হয়েছে। দল থেকে আমাকে তাড়ানোর চক্রান্ত হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে পছন্দ করে ডেকেছেন, তাতেই অনেকের গাত্রদাহ হয়েছে। তাঁরাই চাইছিলেন আমি দল থেকে বেরিয়ে যাই। আমি তো কোনও অন্যায় কথা বলিনি। বলেছি, যাঁরা বড় বড় কথা বলছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বহু মামলা রয়েছে। মমতার বিরুদ্ধে তো নেই!'
ব়্যাপিড ফায়ার
তাঁর দিল্লি আসা নিয়ে দিলীপ বলেন, 'শিবপ্রকাশ জির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। বাংলা সম্বন্ধে ওঁর অভিজ্ঞতা আছে। পশ্চিমবঙ্গের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এর পরই দিলীপের দিকে নানা প্রশ্ন ধেয়ে যায়:
প্র: আগামী নির্বাচনে কী হবে?
'চেষ্টা হচ্ছে। আরও ১০০ সংখ্যা লাগবে।'
প্র: কোনও বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হল?
'বাড়তি দায়িত্ব এখনও কিছু হয়নি। এখানে কেন্দ্রীয় কমিটি হবে। তারপর তারা ঠিক করবে।'
২১ তারিখ আপনার প্রোগ্রামের কী হবে?
'দেখা যাক, ২১ তারিখ কিছু করার চেষ্টা চলছে।'
মান-অভিমানের পালা কি মিটেছে?
'মান-অভিমান পার্টিতে চলতে পারে না।'
এবার কি আপনাকে সক্রিয় ভাবে দেখা যাবে?
'আমি সক্রিয় আছি। প্রত্যেকদিন টিভিতে লোক দেখেছেন আমাকে। পার্টির সাংগঠনিক কাজে হয়তো সক্রিয় নেই। পার্টি আমাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়নি। সেটা এক বছর হল। ২০২৪ পর্যন্ত আমি কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলাম। আবার নির্বাচন আসছে। পার্টি যদি আমাকে দায়িত্ব দেয়, আমি আবার দায়িত্ব পালন করব।'
বিধানসভায় ক্যান্ডিডেট হবেন কি?
'দেখি পার্টি কীভাবে চায়। আমি তো বিধানসভায় আগে ক্যান্ডিডেট হয়েছি, লোকসভায় হয়েছি। পার্টির প্রয়োজনে যেটা দরকার, সেটা করব। বাংলায় পার্টি জোটবদ্ধ আছে। যাঁরা জোটবদ্ধ নয় ভাবছেন, তাঁদের বিজেপি সম্পর্কে ধারণা নেই।'
শমীক সভাপতি হওয়ার পর কি আপনি আরও বেশি সক্রিয় হলেন?
'শমীক সভাপতি হওয়ার পর একবার দেখা হয়েছে। উনি বলেছেন, সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। উনি সভাপতি, উনি যেটা বলবেন, সেটাই হবে। উনি বলার পরে সবাই একটু উৎসাহিত হয়েছেন।'
আপনার তৃণমূল-জল্পনা তৈরি হয়েছে!
'যাঁরা জল্পনা করার তাঁরা জল্পনা করবেন, যাঁরা কাজ করেন তাঁরা কাজ করবেন।
জল্পনা এখন চলবে। এটা পার হয়ে ২১ তারিখ চলে যাবে। তারপর আবার নতুন কোনও জল্পনা হবে। বিধানসভায় টিকিট পাওয়া নিশ্চিত করতেই কি টিকিট না কেটে এসেছেন? আমি টিকিট না করেই দিল্লি এসেছি। বিধানসভা নির্বাচন আসুক, পার্টি ঠিক করবে, কে লড়বে।'
মেদিনীপুরে লড়বেন কি?
'খড়গপুর আমার নিজের জায়গা। যদি লড়তে হয়, ওখানে লড়ব। পার্টি ঠিক করবে, কী করব। লোকসভায় পার্টি বলল-- যাও বর্ধমান, লাভ-ক্ষতি কী হল, সবাই জানেন।'
ক্ষতি তো হয়েছে?
'পার্টির সেটা ভাবা উচিত।'
আপনাকে মিটিংয়ে না ডাকা, শমীকের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে না ডাকা নিয়ে ক্ষোভ একটু কমছে?
'এর আগে থেকে অনেক ঘটনা আছে। পার্টির মিটিংয়ে আমাকে চেয়ার দেওয়া হত না। আমি তো কাজ করেছি, পার্টি ছেড়ে চলে যাইনি। যাঁরা আমাকে পার্টি ছাড়াতে চেয়েছিলেন তাঁরা অনেক চেষ্টা করেছেন। দিলীপ ঘোষ ছাড়বে কখনও বলেনি। যে পার্টি দাঁড় করিয়েছে, সে পার্টি ছাড়বে কেন? ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তখন লড়ব।'
মমতা-প্রসঙ্গে
'আমি তো সবার প্রশংসা করি। আমার সঙ্গে তো কারো শত্রুতা নেই। যাঁরা বড় বড় কথা বলছেন, তাঁদের নামে তো অনেক কেস আছে। যাঁকে নিয়ে এত চর্চা, তাঁর নামে কেস নেই? যাঁর নামে কেস নেই, চোর-ডাকাত বলে যাকে প্রমাণ করা যায়নি, তাঁর পাশে যদি আমি বসি, তাহলে আমি খারাপ হয়ে গেলাম? আমি ওখানে যাওয়ার জন্য পার্টির কর্মীরা নন, কিছু লোক অস্বস্তিতে ছিলেন। সমস্যা হচ্ছে, মমতা ব্যানার্জি আমাকে এত গুরুত্ব দিয়েছেন কেন? এজন্য অনেকে কষ্ট পেয়েছেন।'
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)