জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: হায়দরাবাদের (Hyderabad) নামপল্লি এলাকার একটি ফাঁকা বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে কঙ্কাল (Skeleton)। কঙ্কালের বয়স ১০ বছর সম্ভবত।
ঘটনার সূত্রপাত:
পাড়ায় ক্রিকেট খেলছিলেন এক দল যুবক। তাঁদের মধ্যে এক যুবক জোরে বল মারায় সেটি একটি পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে গিয়ে পড়ে। বল আনতে ওই বাড়িতে ঢোকেন যুবকদের মধ্যে এক জন। প্রথমেই তাঁর নজরে পড়েছিল বাড়ির একটি ঘরের দরজা খোলা। একটু কৌতূহল হয় তাঁর। তার মধ্যে বল কোথায় পড়েছে সেটাও খুঁজছিলেন। ভেবেছিলেন ঘরে মধ্যেও হয়তো ঢুকে যেতে পারে ক্রিকেট বল। ওই ঘরে উঁকি মারতেই চিৎকার করে ওঠেন। তাঁর চিৎকার শুনে বাকি যুবকেরাও ছুটে আসেন।
সকলে দেখেন, ঘরের ভিতরে একটি কঙ্কাল। উপুড় হয়ে পড়ে। কঙ্কালটির পাশের বাসনপত্র ছড়ানো। এ ছাড়াও পুরনো অচল হয়ে যাওয়া ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিলও পড়ে রয়েছে কয়েকটা। কার কঙ্কাল? এ নিয়ে যখন এলাকায় জোর চর্চা চলছে, তখন ওই কঙ্কালের পাশ থেকে পুরনো একটি সাদা-কালো ফোন উদ্ধার হয়।
আর সেই ফোন থেকেই কঙ্কালটিকে শনাক্ত করা হয়। ঘটনাটি হায়দরাবাদের। সোমবার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ওই কঙ্কালটি উদ্ধার হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।
মৃতদেহের পরিচয়:
সম্ভবত ১০ বছর আগে নিখোঁজ ব্যক্তি আমির খানের দেহ বলেই মনে করছে পুলিস। মঙ্গলবার এমনই জানিয়েছিলেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাঁরা মনে করছেন, ১০ বছর আগে এই বাড়িতেই মৃত্যু হয়েছিল আমিরের। কিন্তু কেউ খোঁজ না নেওয়ায় তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে কেউ জানতেই পারেননি।
ওই বাড়িটির মালিক মুনির খান নামে এক ব্যক্তি, যাঁর ১০ জন সন্তান রয়েছে। এলাকাবাসীদের দাবি, বাড়িটি গত সাত বছর ধরে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মুনির খানের চতুর্থ সন্তান আমির। বাকি ভাইবোনেরা অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। সোমবার এক স্থানীয় যুবক ক্রিকেট বল খুঁজতে গিয়ে ওই বাড়ির ভিতর ঢুকে কঙ্কালটি দেখতে পান এবং ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন।
তদন্তে নেমে পুলিস ওই ঘর থেকে একটি পুরনো নোকিয়া ফোন ও বাতিল হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার করেছে। ফোনটি অনেকদিন বন্ধ ছিল। সারিয়ে ফের চালু করার পর দেখা যায়, ২০১৫ সালে ৮৪টি মিসড কলের রেকর্ড রয়েছে।
পুলিসি তদন্ত:
হায়দরাবাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিস (এসিপি) কিশান কুমার জানান, সমস্ত তথ্য মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি আমির খানের দেহাবশেষ। তাঁর বয়স সম্ভবত ৫০-এর কাছাকাছি ছিল। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পুলিশ আধিকারিক। এসিপির কথায়, 'কোনও আঘাতের চিহ্ন বা রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছে, স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছে।'
পাশাপাশি, মৃতের ভাই শাদাব খান পুলিশকে জানিয়েছেন, কঙ্কালের পাশে পাওয়া একটি আঙটির মাধ্যমে তিনি তাঁর দাদাকে শনাক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে মৃতদেহের সঙ্গে পাওয়া হাফপ্যান্টও আমির খানের বলে নিশ্চিত করেছেন শাদাব। পুলিসের অনুমান, আমিরের মৃত্যু ২০১৫ বা তার কিছু আগে হয়েছে। কারণ, তাঁর ফোনে সর্বশেষ কলের রেকর্ডও সেই সময়ের। এছাড়া, বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বাতিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ভিত্তিতেও পুলিশ মনে করছে, ২০১৬-র নোট বাতিলের আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
এছাড়া, বাড়ির দরজা অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকায় স্থানীয়দেরও কেউ খোঁজ নেয়নি বলে জানিয়েছেন এসিপি। তিনি আরও বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে কেউ খোঁজ না নেওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আত্মীয়রা দেখতেও আসেননি।'
এ ঘটনায় সোমবারই ঘটনাস্থলে গিয়েছে পুলিশের বিশেষ দল CLUES। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে তারা। মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য, যাতে সঠিক পরিচয় ও মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা যায়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)