জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আগামিকাল অর্থাত্ ১৬ জুলাই ইয়েমেন ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা কেরালার নার্স নিমিশা প্রিয়ার। খুনের অপরাধে তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ইয়েমেনের আদালত। গতকাল কেন্দ্র সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়ে দিয়েছে নিমিশার ফাঁসি রুখতে সরকারের তেমন কিছুই করার নেই। এরকম এক পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখছে নিমিশার পরিবার।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর, নিমিশার ফাঁসি আপাতত স্থগিত করেছে ইয়েমেনের স্থানীয় প্রশাসন। এমনটাই জানিয়েছেন নিমিশার আইনজীবী। পাশাপাশি, নিমিশাকে বাঁচাতে নিমিশার হাতে নিহত তালাত আবদো মাহাদির পরিবারে সঙ্গে কথা বলছেন ভারতের এক মুফতি। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ওই ধর্মীয় নেতার নাম কান্থাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার। তিনি গ্রান্ড মুফতি অব ইন্ডিয়া নামে পরিচিত। তিনি কথা বলছেন তালাতের পরিবারের সঙ্গে যাতে তারা 'ব্লাড মানি' নিয়ে নিমিশাকে ক্ষমা করে দেন। ফলে নিমিশার বেঁচে যাওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
কান্থাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার(৯৪) কথা বলছেন ইয়েমে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে। তার জেরেই আজ আবুবকরের সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে ইয়েমেনের ধর্মীয় ও সুফি নেতা শেখ হাবিব উমর বিন হাফিজের সঙ্গে। এর পরই উমর বিন হাফিজের প্রতিনিধিরা কথা বলবেন তালাত আবদো মাহাদির পরিবারের সঙ্গে।
আবুবকর মুসলিয়ার জানিয়েছেন তালাত আবদো মাহাদির এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ইয়েমেনের হোদিয়া স্টেট কাউন্সিল কোর্টের বিচারক এবং ইয়েমেনি সুরা কাউন্সিলের সদস্য। তিনি ধামারে এসে পৌঁছেছেন। তাঁকে আলোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন ইয়েমেনের ধর্মীয় নেতা উমর বি হাফিজ।
সংবাদসংস্থা পিটিআই কান্থাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার দফতরকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, তালাতের ওই আত্মীয় উমর বিন হাফিজের শিষ্য। তিনি আবার ইয়েমেনের এক সুফি নেতার সন্তানও। ফলে আশা করা যাচ্ছে তাদের অনুরোধ ফেরাতে নাও পারে নিহত তালাতের পরিবার। পাশাপাশি তালাতের ওই আত্মীয় কথা বলবেন ইয়েমেনের অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলবেন যাতে ফাঁসি আপাতত স্থাগিত করা যায়।
ইয়েমেনের নাগরিকের হত্যাকে খুব বড় করে দেখছে তার পরিবার ও ধামার অঞ্চলের মানুষজন। সংবাদসংস্থায় পিটিআইয়ের খবর, নিহতরে পরিবারে ব্লাড মানি নিতে অস্বীকার করেছে। এরকম এক অচলাবস্থায় কান্থাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার মধ্যস্থতায় প্রথমবার পরিবারের সঙ্গে বৈঠক হতে চলেছে। ফলে একটা ক্ষীণ আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন-আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, ভারতের নাগরিক হতে গেলে থাকতে হবে এই ৪ নথি
আরও পড়ুন-আর একদিন পরই ইয়েমেনে ফাঁ*সি কেরালার নার্সের, সুপ্রিম কোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল কেন্দ্র
কী হয়েছিল নিমিশা প্রিয়ার মামলায়?
নিজস্ব ক্লিনিক খোলার জন্য তালাত আবদো মাহদি নামে এক ইয়েমেনিকে পার্টনার হিসেবে নেন নিমিশা। কিন্তু তালাত নিমিশার পাসপার্ট হাতিয়ে নেয়। পাসপোর্ট-সহ অন্যান্য নথি উদ্ধারের জন্য তালাতকে একবার ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয় নিমিশা। কিন্তু তার ডোজ বেশি হয়ে যাওয়ায় মৃত্যু হয় তালাতের। এরপর নিমিশা যখন ইয়েমেন ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে গ্রেফতার করে পুলিস। এটি ২০১৭ সালের ঘটনা। ওই গ্রেফতারের পর শুরু হয় নিমিশার বিচারপর্ব। ২০১৮ সালে খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় নিমিশাকে। ২০২০ সালে নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ইয়েমেনের ট্রায়াল কোর্ট। ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্টও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখে। ওই বছরের শেষ দিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশে সিলমোহর দেন ইয়েমেনের প্রসিডেন্ট রাসাদ আল আলিমি। এর পর খোলা রয়েছে ব্লাড মানি নেওয়ার বিষয়টি।
খুনের মামলার ক্ষেত্রে আদালত মৃত্যুদণ্ড দিলে পড়ে থাকে এই সুযোগ। এক্ষেত্রে মৃতের আত্মীয়রা যদি টাকার বিনিময় সাজাপ্রাপ্তকে ক্ষমা করতে চায় তাহলে তাতে অনুমতি দেয় সরকার। ওই টাকাকেই বলে ব্লাড মানি বা 'দিয়া'।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)