জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: অপারেশন মহাদেব (Operation Mahadev) নামটির নামকরণ করা হয়েছে ভগবান শিবের 'মহাদেব' নামের সাথে মিলিয়ে। ভারতীয় সেনাবাহিনী (Indian Army) জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চালায়, তার সাংকেতিক নাম ছিল এটি। যেহেতু শিবকে 'মহাদেব' বলা হয়, তাই এই নামকরণ করা হয়েছে, যা সম্ভবত এই অভিযানের গুরুত্ব এবং কঠোরতাকে বোঝায়। জঙ্গি দমনে কাশ্মীরে নতুন অভিযান ‘অপারেশন মহাদেব’ (Operation Mahadev)
ভারতীয় সেনাবাহিনীর বড় সাফল্য:
কাশ্মীর পুলিশ ও সিআরপিএফের এই যৌথ অভিযানে (Operation Mahadev) দাচিগাম (Dachigam) বনাঞ্চলের উপরের অংশে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। অভিযান চলাকালীন আচমকা গুলির শব্দ ছড়িয়ে পড়ে, যা এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি করে। তদন্তকারীদের দাবি, এই তিন জঙ্গি ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) নামক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সদস্য এবং এরাই পহেলগাঁও হামলার (Pahalgam Terror Attack) পেছনে মূল অভিযুক্ত। কয়েকদিন আগে তাদের বিশেষ যোগাযোগ প্রযুক্তির সূত্র ধরে সেনা জঙ্গিদের অবস্থান চিহ্নিত করে এবং সোমবার অভিযান চালায়।
পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার বদলা:
সম্প্রতি, শ্রীনগরের মহাদেব শিখরের কাছে লিডওয়াস (Lidwas) এলাকায় একটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে 'অপারেশন মহাদেব'। এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী তিনজন সন্ত্রাসীকে নিকেশ করেছে। এই সন্ত্রাসীরা গত ২২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী এবং এর সঙ্গে জড়িত ছিল। পহেলগাঁও হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ২৫ জন হিন্দু পর্যটক এবং একজন স্থানীয় মুসলিম ঘোড়ার মালিক ছিলেন। জঙ্গিরা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে হিন্দুদের আলাদা করে হত্যা করেছিল।
জানুয়ারিতেও দাচিগাম অভিযান:
এর আগে জানুয়ারিতেও দাচিগামের গভীর জঙ্গলে TRF-র একটি আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছিল, তখনও সেনাবাহিনীকে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। এইবারেও একই রকম প্রস্তুতি নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। এলাকাটি পুরোপুরি ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যৌথ অভিযান:
'অপারেশন মহাদেব' ভারতীয় সেনাবাহিনী, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং সিআরপিএফ-এর একটি যৌথ অভিযান ছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান শুরু হয়। জানা গেছে, নিহত সন্ত্রাসীরা পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার (LeT) শাখা 'দ্য রেজিস্টেন্স ফ্রন্ট' (TRF)-এর সাথে যুক্ত বিদেশী নাগরিক ছিল। পহেলগাম হামলার মূল পরিকল্পনাকারী লস্কর-ই-তৈবার শীর্ষ কমান্ডার সুলেমান শাহ ওরফে মুসা ফৌজি এই সংঘর্ষে নিহত হওয়া তিন জঙ্গির মধ্যে একজন। এই অভিযানের সময় এবং স্থান গুরুত্বপূর্ণ কারণ মহাদেব শিখর কাশ্মীরি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে একটি জীবন্ত ঐশ্বরিক স্মৃতির প্রতীক।
কারণ কী:
১. মহাদেব:
হিন্দু ধর্মে শিবকে 'মহাদেব' বলা হয়, যার অর্থ 'মহান ঈশ্বর' বা 'দেবতাদের ঈশ্বর'।
২. শক্তি ও ধ্বংস:
মহাদেবের একটি দিক হল ধ্বংস, যা এই অভিযানের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
৩. সংকল্প ও দৃঢ়তা:
এই নামকরণ অভিযানের দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোরতাকে বোঝায়।
৪. সংকেত:
সাংকেতিক নাম:
এটি একটি সাংকেতিক নাম যা অভিযানের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অতএব, অপারেশন মহাদেব নামটি অভিযানের গুরুত্ব এবং কঠোরতা বোঝাতে শিবের 'মহাদেব' নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে।
কাশ্মীরের মহাদেব পর্বত শিখর হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এটি শ্রীনগর জেলায় অবস্থিত এবং জাবারওয়ান রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া। এটিকে প্রায়শই 'শ্রীনগরের অভিভাবক পর্বত' হিসাবে উল্লেখ করা হয় এবং এর উচ্চতা প্রায় ৩,৯৬৬ মিটার (১৩,০১২ ফুট)। হিন্দু পুরাণে এই চূড়াকে ভগবান শিবের বাসস্থান বলে মনে করা হয়। প্রতি বছর শ্রাবণ পূর্ণিমাতে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা এই পবিত্র শিখরে তীর্থযাত্রা করতেন, যদিও উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদের কারণে ব্যাপক তীর্থযাত্রা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
শিবের বাসস্থান:
এর উল্লেখ প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ এবং কাশ্মীরি লোককথায় পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি ভগবান শিবের বাসস্থান হিসেবে বিবেচিত। এই শিখরটি শ্রীনগর জেলায় অবস্থিত এবং এটি জাবারওয়ান পর্বতশ্রেণীর সর্বোচ্চ চূড়া। প্রতি বছর শ্রাবণ পূর্ণিমাতে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা এই শিখরে তীর্থযাত্রা করতেন। এই অপারেশন মহাদেব অভিযানটি শ্রাবণ পূর্ণিমার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই হয়েছে, যখন ঐতিহ্যগতভাবে তীর্থযাত্রীরা মহাদেব শিখরে যাত্রা করতেন।
মহাদেব পাহাড়ের গুরুত্ব:
কাশ্মীরি ইতিহাসবিদ পীর হাসান শাহের মতে, মহাদেব শিখর হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র স্থান। এর চূড়ায় একটি প্রাচীন হিমবাহ রয়েছে যা বারো মাস বরফ হয়ে থাকে। কিছু লোক সেখান থেকে বরফ সংগ্রহ করে শহরের রাস্তায় বিক্রি করে। শ্রাবণ পূর্ণিমাতে পণ্ডিতরা এই স্থানে তীর্থযাত্রা করেন।
এই এনকাউন্টারের স্থান ও সময় তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সন্ত্রাসীদের নিহত হওয়ার স্থানটি কেবল একটি পর্বতশৃঙ্গ নয়, এটি কাশ্মীরি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এক জীবন্ত ঐশ্বরিক স্মৃতির প্রতিমূর্তি।
মহাদেব শিখর: শ্রীনগরের গর্ব
১৩,০০০ ফুটেরও বেশি (৩,৯৬২ মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত মহাদেব শিখর কাশ্মীর উপত্যকার ধর্মপ্রাণ পণ্ডিত সম্প্রদায়ের চোখে কোনো সাধারণ পর্বত নয়। তারা প্রতি বছর এই চূড়ায় তীর্থযাত্রা করতে যেতেন। শ্রীনগর জেলার জাবারওয়ান রেঞ্জের অংশ এই মহাদেব শিখর কাশ্মীরে আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রীনগর শহরের বেশিরভাগ অংশ থেকে দৃশ্যমান এই পবিত্র শিখরটি "শ্রীনগরের শিখর" নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের সর্বোচ্চ চূড়া, মহাদেব শিখর, স্থানীয়ভাবে 'মহাদেব গালি' নামে পরিচিত। কাশ্মীরি পণ্ডিতরা এটিকে হিন্দু পুরাণে ধ্বংস ও ধ্যানের দেবতা ভগবান শিবের বাসস্থান হিসাবে পুজা করে।