জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কাকা বালিশ চাপা দিয়ে বাবাকে মেরে ফেলেছে। মা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। হাড়হিম জবানবন্দি ৯ বছরের ছেলের। আর এই একরত্তি ছেলেই পর্দাফাঁস করল মা-কাকার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের (Extra Marital Affair) ও বাবার মৃত্যুর আসল কারণের (Wife Killed Husband)। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানের আলওয়ারে (Rajasthan Murder)। মৃতের নাম বীরু ওরফে মান সিংস যাদব। বাড়িতেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় মান সিংকে। তাঁর স্ত্রী অনিতা দাবি করেন, হঠাৎ করেই শরীর খারাপ করে স্বামী বীরুর ও তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু মা-কাকার এই নাটক ও মিথ্যে দাবি ধোপে টেকেনি। পুলিস তদন্তে নামতেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে 'দুধ কা দুধ, পানি কা পানি' হয়ে যায়। অনিতার ৯ বছরের ছেলেই ধরিয়ে দেয় বাবার 'খুনি' মা-কে! কী করে বাবাকে খুন করা হয়েছে, সেই বর্ণনাও দেয় সে...
কী ঘটে সেদিন রাতে?
অভিযোগ, অনিতা ও তাঁর 'প্রেমিক' কাশিরাম (কাকা) এবং ভাড়াটে খুনিরা মিলে খুন করেছে বীরু ওরফে মান সিংস যাদবকে। খুনের নেপথ্যে প্রধান কারণ পরকীয়া। যেখানে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্বামী বীরু। ৭ জুন রাতে রাজস্থানের আলওয়ারের খেরলি এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ৯ বছরের ওই শিশু তার বয়ানে বলেছে, অনিতা সেদিন রাতে ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ির প্রধান ফটক খোলা রেখেছিলেন। মাঝ রাতের দিকে চারজন লোক, 'কাশী আঙ্কল' তথা অনিতার প্রেমিক কাশীরাম প্রজাপত ঘরের ভিতর ঢোকেন। বিছানায় বীরুকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করেন। মারধরও করেন। সে কাছেই শুয়ে ঘুমের ভান করেছিল, তাই বাবাকে খুনের পুরো ঘটনাক্রমই সে দেখেছে।
৯ বছরের শিশুর হাড়হিম বর্ণনা
শিশুটির কথায়, "আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঠিক তখনই দরজায় একটা মৃদু শব্দ শুনতে পাই। চোখ খুলে দেখি মা গেট খুলছে। কাশী আঙ্কল বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর সঙ্গে আরও চারজন লোক। আমি ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু আমি উঠিনি। আমি চুপচাপ শুয়ে সবকিছু দেখতে থাকি। ওরা আমাদের ঘরে এসে ঢোকে। আমি দেখি মা বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর ওই লোকগুলো বাবাকে ঘুষি মারছে। পা মুচড়ে দিচ্ছে। কাশী আঙ্কল বালিশ দিয়ে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে রেখেছে। আমি যেই বাবার দিকে হাত বাড়ালাম, তখন কাশী আঙ্কল আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ধমক দিল। আমি ভয়ে চুপ করে যাই। কয়েক মিনিট পরই বাবা মরে গেল... তারপর সবাই চলে গেল।"
পরকীয়ায় পথের কাঁটা স্বামী!
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস জানিয়েছে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক-ই এই খুনের প্রধান কারণ। অনিতা খেরলিতে একটি ছোট জেনারেল স্টোর চালান। যেখানে স্থানীয় আরেক বিক্রেতা কাশীরাম প্রায়ই যেতেন। সময়ের সঙ্গে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দুজনে। এরপর অনিতা ও কাশীরাম চারজন কন্ট্রাক্ট কিলারকে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বীরুকে খুনের পরিকল্পনা করেন। ৭ জুন রাতে পরিকল্পনা মতো অনিতা মূল দরজা খোলা রাখে। ভাড়াটে খুনিরা মোটরসাইকেলে করে কাশীরামের সঙ্গে বাড়িতে আসে। এরপর ঘুমন্ত অবস্থায় বীরুর উপর হামলা করা হয় ও তাঁকে খুন করা হয়। পরদিন সকালে প্ল্যানমাফিক বীরুকে মৃত ঘোষণা করেন অনিতা।
সন্দেহ... তদন্ত ও গ্রেফতার!
আত্মীয়দেরও অনিতা জানান যে বীরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বীরুর শারীরিক অবস্থা, দেহে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন, ভাঙা দাঁত ও শ্বাসরোধের চিহ্ন দেখে সন্দেহ তৈরি হতেই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। তাতেই তাঁকে খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়। এরপরই বীরুর ভাই গব্বর পুলিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস তদন্ত শুরু করে। তদন্তে নেমে পুলিস ওই এলাকা থেকে ১০০টিরও বেশি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেইসঙ্গে কল রেকর্ড খতিয়ে দেখে। তারপরই বীরুকে খুনের দায়ে অনিতা, কাশীরাম এবং ব্রিজেশ জাটভ নামে এক কন্ট্রাক্ট কিলারকে গ্রেফতার করে পুলিস। বাকি তিন অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)