জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার ধারালি (Uttarakhand's Uttarkashi Dharali) গ্রামে আকস্মিক জলবন্যার আঘাতে ঘটে গিয়েছে বিরাট বিপর্যয়। গোটা গ্রামটি ফ্ল্যাশফ্লাডের (Flash Floods) জেরে ফুলে ওঠা ক্ষীরগঙ্গার (Kheer Ganga river) ভয়ংকর উত্তাল স্রোতে ধুয়ে-মুছে যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক এই ভয়াল বন্যায় (devastating flood) গ্রামটির অর্ধেক মানুষই প্রাণে বেঁচে যান। কী ভাবে? সে এক আশ্চর্য ব্যাপার! কারও কারও মতে অলৌকিকও হয়তো!
মৃত্যুপ্লাবন নয়
প্রতি বর্ষাতেই কখনও হিমাচল, কখনও উত্তরাখণ্ড ক্লাউডবার্স্ট, ফ্ল্যাশফ্লাডে, বৃষ্টি-ধসে ব্যতিব্যস্ত থাকে বিস্তীর্ণ হিমালয়। এবারও ছবিটা প্রায় একই। এবার কদিন আগে উত্তরকাশীতে ভয়ংকর প্লাবন নামল ধারালি গ্রামের কাছের ক্ষীরগঙ্গায়। ধুয়েমুছে গেল ধারালি গ্রাম গঙ্গোত্রীধামে যেতে এখানে থামেন তীর্থযাত্রীরা। হরশিলের কাছেই এই ধারালি। আশঙ্কা হয়েছিল প্রচুর মানুষের মৃত্যু ঘটবে এতে। মৃত্যু ঘটেছে। এবং প্রতিটি মৃত্যুই সমান দুঃখজনক। তবে, বলতে বাধা নেই, যত মানুষের মৃত্য়ু হতে পারত, তত মানুষ মারা যাননি! এত বড় বিপর্যয় ঘটলেও উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার ধারালি গ্রামের অর্ধেক মানুষই প্রাণে বেঁচে গেলেন। যার কারণ সেদিনের এক বিশেষ আচার।
সর্পদেবীর স্বপ্ন
সেদিনের সেই আকস্মিক বন্যার কয়েক ঘণ্টা আগে ধারালি গ্রামের অধিকাংশ গ্রামবাসী দেবী কৈলা কুঁয়ার মন্দিরে জড়ো হয়েছিলেন। কারণ, গ্রামবাসীর দাবি ছিল, স্থানীয় ওই দেবতা তাঁদের স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন এবং আসন্ন এক বিপদ সম্পর্কে তাঁদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তখন দেবতাকে খুশি করতে এবং তাঁর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য গ্রামবাসীরা সেদিন তখন ওই মন্দিরে পূজা-অর্চনা করছিলেন। ওই দেবী সর্পদেবী হিসেবে পূজিতা হন।
পুজোর ছলে
আর সেদিন যখন গ্রামবাসীরা দেবী কৈলা কুঁয়ার মন্দিরে পুজো করছিলেন, ঠিক সেই সময় আকস্মিক আঘাত হানে ওই ভয়ংকর বন্যা। গ্রামের বহু বাড়ি এবং গৃহসম্পত্তি ভেসে যায়। তবে গ্রামবাসীরা, যাঁরা মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই রক্ষা পান।
অলৌকিক
এর পর ওই দেবীর অলৌকিকতা মুখেমুখে প্রচার হয়ে যায়। ঘটনাটি দেখায়, কীভাবে ঈশ্বরবিশ্বাস এবং এর সঙ্গে বিজড়িত ধর্মসংস্কৃতি মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে, হয়ে ওঠে। আর এমনটা যদি তখন ঘটে যখন তারা প্রাকৃতিক কোনও দুর্যোগের মুখোমুখি হয় এবং তার কবল থেকে রক্ষা পায়। যেমন, সেদিন ঘটেছিল।
ক্ষীরগঙ্গায় প্লাবন
সেদিন ভয়ংকর প্লাবন ঘটে উত্তরাখণ্ডের ক্ষীরগঙ্গায়। ভয়ংকর ক্লাউডবার্স্টে ভেসে গিয়েছিল ধারালি। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, ভয়াল সেই বন্যায় ধারালির ২৫টির মতো হোটেল-হোমস্টে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন। বন্যায় ধারালি মার্কেটের বিপুল ক্ষতি হয়। চারিদিকে সেদিন শুধু ধ্বংসস্তূপ। লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যান। ক্ষীরগঙ্গার ধারেই ছিল প্রাচীন কল্পা কেদার মন্দির। সেই মন্দিরও ঢাকা পড়ে যায়। ক্ষীরগঙ্গার ধারের এই মন্দির হিমালয়ের অতি প্রাচীন শিবমন্দির।
হিমালয়ে বারবার
প্রসঙ্গত, এবার বর্ষায় হিমালয়ে বারবার অঘটন ঘটেছে। কখনও উত্তরাখণ্ডে কখনও হিমাচলে। হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু খুবই শঙ্কিত ছিলেন এ নিয়ে। সেখানে কাজে নেমে পড়েছে স্পেশাল টিম। টিমটি খুঁজবে, বর্ষায় বারবার বিপর্যয় কেন হিমাচলে? পাঁচজনের এই সেন্ট্রাল টিমটির নেতৃত্বে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি অ্যাডভাইসর কর্নেল কেপি সিং। হিমাচলে এবার ভয়াবহ এই ক্লাইডবার্স্টগুলিতে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেই হিসেব করার জন্য অমিত শাহ এই টিম পাঠাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। মাত্র ১৫ মিনিটেই ভোলবদলে গিয়েছিল নদীর। আচমকা বিপুল জল নেমে এসেছিল নদীখাতে! কাছাকাছি ছোট্ট একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল। কয়েকজন কর্মী নিকটস্থ অঞ্চলেই থাকতেন। জলস্তর যখন বাড়তে থাকে তখনই সকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভয়াবহ জলস্রোত টেনে নিয়ে চলে যায় বেশ কয়েকজনকে। কত জন ভেসে গিয়েছেন? সংখ্যাটা এখনও পরিষ্কার নয়। দুজন মারা গিয়েছেন, তাঁদের শনাক্তও করা গিয়েছে। এবারের ক্লাউডবার্স্টের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে হিমাচলের কুলুর সাইঞ্জ ভ্যালিতে। এই ক্লাউডবার্স্টের ঠিক পরেই সেখানে স্থানীয় এক নদীখাত-- জিভ নালায়-- ভয়ংকর স্রোত নেমে আসে। সঙ্গে সঙ্গে জারি হয় সতর্কতা। ভয়ংকর এই জলপ্রবাহের একটি ভিডিয়োও সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ঘুরছে। তাতে দেখা গিয়েছে, কী ভয়ংকর ভাবে বইছে জলধারা! দেখে আঁতকে উঠতে হয়! জল যখন ধেয়ে আসছিল, তখন সেই দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করছিলেন স্থানীয় লোকজন। সমস্ত ঝোপঝাড়, গাছপালা জলের তোড়ে মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এলোমেলো ভাবে ভেসে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময়েই স্থানীয় একটি নদীতে বন্যাও নেমেছিল। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছিল।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)