জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর' (Operation Sindoor) অভিযানের মাত্র ৯০ দিনের মধ্যেই পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-এ অন্তত ১৫টি নতুন জঙ্গি শিবির ও লঞ্চপ্যাড পুনরায় তৈরি করা হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির একটি নতুন রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই নতুন শিবিরগুলি জঙ্গি সংগঠন যেমন জইশ-ই-মুহাম্মদ (JeM), লস্কর-ই-তৈবা (LeT) এবং হিজবুল মুজাহিদিন (HM)-কে সমর্থন করছে বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ISI এই জঙ্গি শিবিরগুলো পুনর্গঠনে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে। তারা নতুন জঙ্গি নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে। এই পুনর্গঠনের জন্য ISI ১০০ কোটি পাকিস্তানি রুপির বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছে।
একনজরে:
1. ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপারেশন সিন্দুরে ধ্বংস হওয়া জঙ্গি ঘাঁটিগুলি পুনরায় গড়ে তোলা হয়েছে।
2. ISI ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সহায়তায় এই ঘাঁটিগুলি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
3. নতুন ঘাঁটিগুলি ছোট আকারের, যাতে প্রায় ২০-২৫ জন জঙ্গি থাকে—আগে এই সংখ্যা ছিল ১০০-এর কাছাকাছি।
4. জঙ্গিরা এখন ড্রোন, রাডার ক্যামোফ্লাজ, স্যাটেলাইট মাস্কিং-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
5. নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
6. ISI প্রায় ১০০ কোটি পাকিস্তানি রুপি বরাদ্দ করেছে এই পুনর্গঠনের জন্য।
7. জইশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা, হিজবুল মুজাহিদিন, TRF-এর মতো সংগঠন নতুন কৌশল নির্ধারণে বৈঠক করেছে।
নতুন সন্ত্রাসবাদী আস্তানা:
জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনী যখন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান জোরদার করছে, তখন সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের সমর্থন থেমে নেই। সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় বাহিনীর "অপারেশন সিনদূর"-এ ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনে পাকিস্তান সক্রিয়ভাবে প্রধান সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সহায়তা করছে।
গত ৯০ দিনে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) ১৫টিরও বেশি সন্ত্রাস শিবির ও লঞ্চপ্যাড গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলোর মতে, এসব শিবির পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (ISI) ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সহায়তায় পুনর্নির্মিত হচ্ছে, যারা শুধু নিহত সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়, বরং তাদের নেটওয়ার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টায় পুরোপুরি সমর্থন করছে।
কোথায় হয়েছে এই ঘাঁটি:
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত এই সন্ত্রাসবাদীরা এখন নজরদারি এড়াতে এবং তাদের সামরিক ক্ষমতা বাড়াতে নতুন পদ্ধতি ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। শুধু পুনর্গঠনই নয়, সন্ত্রাসী শিবিরগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নতুনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে—কেল, শারদি, দুধনিয়াল, আথমুকাম, জুরা, লিপা ভ্যালি, টান্ডাপানি, ন্যায়ালি, জানকোট এবং চাকোথি।
নতুন লঞ্চপ্যাড:
তথ্য অনুযায়ী, জম্মু অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর আরও চারটি লঞ্চপ্যাড—মাসরুর, চাপরার—এবং শাকরগড়ে একটি ড্রোন কেন্দ্র পুনরায় সক্রিয় করা হচ্ছে। এবার পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীরা একত্রিত না হয়ে বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে যাতে ভারতীয় বাহিনীর নজরদারিতে পড়ে না যায়। যেহেতু ভারত ‘অপারেশন সিনদূর’ চালু রেখেছে, সন্ত্রাসীরা আরও হামলার আশঙ্কায় রয়েছে।
বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে, তারা এখন ছোট ছোট শিবির নির্মাণ করছে, যেখানে প্রতি শিবিরে প্রায় দুই ডজন সন্ত্রাসী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আগে প্রতিটি শিবিরে এই সংখ্যা পাঁচ গুণ বেশি ছিল। সূত্র মতে, তাদের চলাচলের ধরণও পরিবর্তন করা হয়েছে।
জঙ্গিদের নতুন কৌশল:
নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, জঙ্গিরা এবার তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। বড় ক্যাম্প তৈরির পরিবর্তে তারা ছোট ছোট শিবির তৈরি করছে, যেখানে প্রায় দুই ডজন জঙ্গি থাকতে পারে। এতে করে ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলায় বড় ধরনের ক্ষতির ঝুঁকি কমে যাবে।
এই শিবিরগুলি অত্যন্ত ঘন জঙ্গলের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে এবং সেগুলোতে রাডার ও স্যাটেলাইট থেকে নিজেদের আড়াল করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, জঙ্গিরা ড্রোন এবং অন্যান্য নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এমনকি তারা ভারতীয় বাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে নারী ও শিশুদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
নতুন নিয়োগ এবং নেতৃত্ব:
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গি সংগঠনগুলি তাদের নেতৃত্ব কাঠামোতেও পরিবর্তন আনছে। তারা পাকিস্তান এবং জম্মু ও কাশ্মীরের যুবকদের নতুন করে জঙ্গি কার্যকলাপে নিয়োগের চেষ্টা করছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)