ওয়েব ডেস্ক: বাদল অধিবেশন অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত মুলতুবি। শেষদিনও প্রত্যাশামত হট্টগোল, কথা ছোঁড়া ছুঁড়ি করে শেষ হল 'নিস্ফলা' বাদল অধিবেশন। কার্যত নিস্ফলাই। তিন সপ্তাহ ধরে চলা এই অধিবেশনে মোদী সরকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল ধুয়ে সাফ করে দিল কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দল।
প্রতিদিন দিনের শুরু থেকেই বিজেপি সরকারের বিতর্কিত ললিতগেট, ব্যপম কাণ্ড নিয়ে সংসদ উত্তাল। দফায় দফায় মুলতুবি। কখনও বিরোধিতা চরমে উঠে গিয়ে ৫ দিনের জন্য সাসপেন্ড হয়েছে কংগ্রেস সাংসদরা। এঘটনা ভারতীয় সংসদে বিরলতম ঘটনা বলে মনে করছেন অনেক রাজনীতিবিদ। আবার তৃণমূল ও বাম যেভাবে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে সাংসদ সাসপেন্ড নিয়ে সরব হয়েছে তাতে রাজনীতি প্রেক্ষাপটে নতুন সংযোজন নিয়ে এসেছে এই বাদল অধিবেশনে।
তবে বিশেষজ্ঞরা এই বাদল অধিবেশনকে সম্পূর্ণ 'নিস্ফলা' বলতে নারাজ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন অধিবেশন অচল হলেও বেশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে কংগ্রেস- বিজেপির তরজা থেকে।
বাদল অধিবেশন শুরু আগেই মোদী সরকারের আশঙ্কা ছিল লোলিত গেট ও ব্যপম নিয়ে উত্তাল হতে পারে সংসদ। যার জেরে জমি অধিগ্রহণ বিল, পণ্য পরিষেবা কর আবাসন নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন বিল এবং শ্রম আইন সংস্কারের মতো একগুচ্ছ বিল পাস করাতে গেলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। বাস্তবে তাই হল। এই বিল পাস করাতে গিয়ে মোদী সরকারের যে সম্পূর্ণ ব্যর্থতা প্রকাশ পেল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজের পদত্যাগ নিয়ে হিমশিম খেয়েছে মোদী বাহিনী। সুষমার ললিত নিয়ে মানবিকতার প্রসঙ্গে চিড়ে ভেজেনি বিরোধীদের।
অনেকদিন পর কংগ্রেস শামুকের খোল থেকে বেড়িয়ে একের পর এক ইস্যু নিয়ে চার- ছক্কা হাঁকাল এবারে বাদল অধিবেশনে। সুষমা স্বরাজ বফর্স থেকে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে যেভাবে একের পর এক রাহুল গান্ধীকে ব্যক্তি আক্রমণ করেছেন, তা আক্রমণাত্বক ভঙ্গিতে স্টেপ আউট হয়েছে রাহুল। এমনকী সোনিয়া গান্ধী ওয়েলে নেমে সুষমার ইস্তফার দাবি জানায়। কংগ্রেসের ২৭ জন সাংসদের পাঁচ দিনের সাসপেণ্ড সংসদে অন্তত বিরল ঘটনা ছিল। এর আগে ১৯৮৯-এ ঠক্কর কমিশনের রিপোর্ট পেশ নিয়ে ৫৮ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। নজিরবিহীন ঘটনা সাংসদ সাসপেন্ড নিয়ে একঘরে হতে হয় বিজেপিকে। সবকিছু নিয়ে কংগ্রেস এই মুহূর্তে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ফুরফুরে মেজাজে কংগ্রেস ঘটনাক্রমে সংসদের ঘরে বাইরে কাছে পায় বাম-তৃণমূলকে।
তবে বাদল অধিবশনে লাগাতার অচলাবস্থায় যে দেশের অনেক বড় ক্ষতি হচ্ছে এনিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কংগ্রেস আমলে অচলাবস্থা নিয়ে মনমোহন সরকারের যুক্তি ছিল একদিন সংসদ অচল হলে ক্ষতি হয় ৯ কোটি টাকা। প্রতি মিনিটে ক্ষতি আড়াই লক্ষ টাকা। ইউপিএ সরকারের আমলে কয়লা, টেলিকম দুর্নীতি নিয়ে যেভাবে দিনের পর দিন সংসদ অচল হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বিজেপি সরকারেও। সংসদে অচলায়তন স্বাভাবিক ঘটনা হলেও বিপুল ক্ষতিপূরণের দায় কে নেবে? জনগণের অর্থ অপচয় করে বাদল অধিবশনে সবকিছু ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল সমস্ত বিলের ভবিষ্যত। এই ঘটনাকে প্রাক্তন লোকসভা স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
তবে আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় সংসদে তৃণমূলের দ্বিচারিতা। ডালে আবডালে কখন নীরব কখন সরব তৃণমূল। ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান নেয় তৃণমূল। কংগ্রেসের সাংসদ সাসপেন্ড হওয়ার প্রতিবাদে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ায় মমতার দল। বামও একইসঙ্গে যোগ দেয়। যদিও মমতার বক্তব্য, “গণতন্ত্রকে বাঁচানোর স্বার্থেই সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের পাশে দাঁড়িয়েছে দল।”