জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: টানা জেরার মুখে অবশেষে ভাঙল জঙ্গি তাহাউরের ‘দরজার আগল’। এনআইএ’র জিজ্ঞাসাবাদে তাহাউর স্বীকার করে নিল, সে পাক সেনার সক্রিয় এজেন্ট। কীভাবে ২৬/১১ সন্ত্রাসের নীল নকশা রচিত হয়েছিল সে তথ্যও প্রকাশ্যে এনেছে মুম্বই হামলার মূল ষড়যন্ত্রী। তাহাউরের স্বীকারোক্তি তদন্তকারীদের জন্য বড় সাফল্যতো বটেই, মনে করা হচ্ছে তাহাউরের থেকে পাওয়া তথ্যে পাকিস্তানের চাপ আরও বাড়তে চলেছে।
২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী:
২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানা স্বীকার করলেন যে, তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্যতম বিশ্বস্ত চর ছিলেন। এনআইএ হেফাজতে শেষমেশ পাকিস্তানি চর তাহাউর রানা বয়ান দিয়েছেন, মুম্বই হামলায় তিনি জড়িত ছিলেন।
অবশেষে স্বীকারোক্তি:
তাহাউর হুসেন রানাকে প্রথম থেকেই ভারত সরকার মুম্বই হামলার অন্যতম পান্ডা বলে সব ধরনের প্রমাণ দিয়ে এসেছে। অবশেষে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (NIA) জেরায় রানা কবুল করে নিলেন, ২০০৮ সালের গণহত্যায় তাঁর বিশেষ ভূমিকার কথা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও পাক চর সংস্থা আইএসআইয়ের (ISI) অত্যন্ত বিশ্বাসী ও অনুগত চর হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
পাক সেনার বিশ্বস্ত এজেন্ট:
এনআইএ’র জিজ্ঞাসাবাদে তাহাউর রানা স্বীকার করে নিয়েছে, সে পাক সেনার বিশ্বস্ত এজেন্ট। তার দাবি অনুযায়ী, বন্ধু হেডলির সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের লস্কর ই তইবার একাধিক প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নেয় এই জঙ্গি। এবং লস্করের তরফে তাকে সন্ত্রাসবাদী নেটয়ার্ক তৈরি ও গোপন তথ্য ফাঁস করার জন্য নিয়োগ করা হয়।
হামলার আগে রেইকি:
জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানিয়েছে, ২৬/১১ হামলা চলাকালীন সে মুম্বইতেই ছিল এবং সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান চক্রি ছিল। এমনকী আজমল কাসভরা যাতে মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি স্টেশনে হামলা চালাতে পারে তার জন্য এই এলাকা খতিয়ে দেখে সেখানকার বিস্তারিত তথ্য পাকিস্তানে নিজের ‘আকা’দের কাছে পাঠিয়েছিল তাহাউর।
তিহার জেলে বন্দি:
রানা বর্তমানে এনআইএ হেফাজতে দিল্লির তিহার জেলে বন্দি। মুম্বই অপরাধ দমন শাখার জেরায় তিনি মেনে নিয়েছেন, রানা এবং তাঁর বন্ধু ডেভিড হেডলি পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তোইবার সঙ্গে বেশ কয়েকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। রানা এও জানিয়েছেন, লস্কর মূলত চর হিসেবে কাজ করে পাক বাহিনীর সঙ্গে।
আরও পড়ুন: Jyoti Malhotra: পাকচর জ্যোতি কেরালা পর্যটনের মুখ! চুক্তি প্রকাশ্যে আসতেই বিপাকে বিজয়নের বাম-সরকার...
জঙ্গি ছকের সঙ্গে জড়িত:
সূত্রে জানা গিয়েছে, রানা মেনে নিয়েছেন, মুম্বইয়ে একটি অভিবাসন সংক্রান্ত পরিসেবা সংস্থা খোলার বুদ্ধি তাঁরই। ব্যবসায়িক খরচ দেখিয়েই টাকাপয়সার লেনদেন হয়েছিল। রানা এও কবুল করেছেন, মুম্বই হামলার সময় তিনি শহরেই ছিলেন এবং জঙ্গি ছকের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। রানা নিজে মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসে গিয়ে রেকি করেছিলেন বলে স্বীকার করেন।
খলিজ যুদ্ধের সৈনিক রাণা:
শুধু তাই নয়, পাক সেনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তুলে ধরে তাহাউর জানিয়েছে খলিজ যুদ্ধের সময় পাক সেনার তরফেই তাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। রানার বিরুদ্ধে হেডলির, লস্কর ও হরকত উল জিহাদি ইসলামি সংগঠনের পাশাপাশি আরও একাধিক পাক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে মিলে মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
অন্যতম ষড়যন্ত্রী ডেভিল কোলম্যান হেডলি:
উল্লেখ্য, ২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে যে পাকিস্তানের জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল তাদের অন্যতম মদতদাতা ছিল এই রানা। হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী ছিল মার্কিন নাগরিক ডেভিল কোলম্যান হেডলি। রানা তারই ঘনিষ্ঠ। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলায় অন্তত ১৫০ মানুষের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার প্রায় দেড় দশক ধরে এই অপরাধীকে হাতে পেতে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে ভারত।
ভারতের প্রত্যর্পণের আবেদন:
২০১৩ সালে তাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় আমেরিকার আদালত। ২০২০ সালে স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তাকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কিন্তু ভারতের প্রত্যর্পণের আবেদনে খুনের মামলায় ফের তাকে গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি এই জঙ্গিকে ভারতের প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রি এই জঙ্গিকে জেরা করেই এবার সামনে এল একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)