জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: 'আদর্শ ভারতীয় স্ত্রী কে?' - মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের উত্তরে দেশ জুড়ে তোলপাড়।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় 'আদর্শ ভারতীয় স্ত্রী' সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে। প্রায় দুই দশক ধরে স্বামীর দ্বারা পরিত্যক্ত হওয়া সত্ত্বেও একজন নারী যেভাবে তার বৈবাহিক ধর্ম পালন করেছেন, আদালত তার প্রশংসা করে এই মন্তব্য করে। আদালত বলেন, একজন আদর্শ ভারতীয় স্ত্রী তার ধর্ম, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং বৈবাহিক সম্পর্কের পবিত্রতার প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন, এমনকি যখন তার স্বামী তাকে পরিত্যাগ করেন।
মামলার প্রেক্ষাপট:
এক ব্যক্তি প্রায় দুই দশক আগে তার স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যান। এরপরও তার স্ত্রী শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যান এবং পরিবারের যত্ন নিতে থাকেন। সম্প্রতি, ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার অভিযোগ তুলে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। নিম্ন আদালত তার এই আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ:
বিচারপতি বিবেক রুসিয়া এবং বিনোদ কুমার দ্বিবেদীর বেঞ্চ স্বামীর আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, এই নারী তার স্বামীর অনুপস্থিতিতেও শ্বশুর-শাশুড়ির যত্ন নেওয়া এবং পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এটি তার নৈতিক দৃঢ়তাকেই প্রমাণ করে।
হাইকোর্টের মন্তব্য:
আদালত আরও বলেন, 'একজন আদর্শ ভারতীয় স্ত্রী, স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত হলেও, তার শক্তি, মর্যাদা এবং সততাকে ধরে রাখেন। তার আচরণ ধর্ম, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং বৈবাহিক বন্ধনের পবিত্রতার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।'
আদালত এই নারীকে 'শক্তির' হিন্দু আদর্শের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, তিনি দুর্বল নন, বরং তার ধৈর্য এবং মর্যাদার মধ্যে তিনি শক্তিশালী এবং বিনয়ী। আদালত আরও বলেন যে, তিনি তার দুঃখকে সহানুভূতি অর্জনের জন্য ব্যবহার করেননি।
'তিনি একা হয়ে গেলেও তার সিঁদুর, মঙ্গলসূত্র বা বিবাহের প্রতীকগুলো পরিত্যাগ করেননি, কারণ তার কাছে বিবাহ কোনও চুক্তি নয়, বরং একটি 'সংস্কার' - যা অবিচ্ছেদ্য।'
আদালত এই মামলাটিকে একটি 'অনন্য' ঘটনা বলে উল্লেখ করে বলেন, এই নারী তার শ্বশুরবাড়িতেই থেকেছেন এবং একজন সাধারণ ভারতীয় নারীর মতো তার বিশ্বস্ততা দেখিয়েছেন, যিনি তার পারিবারিক জীবন রক্ষা করার জন্য সবকিছু করেন। আদালত আরও মন্তব্য করেন যে, অনেক ক্ষেত্রেই এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রীরা একা বা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
সমালোচনার ঝড়:
এই রায়টি প্রশংসিত হলেও অনেক মহল থেকে এর সমালোচনাও হয়েছে। অনেক আইনি বিশেষজ্ঞ ও নারীবাদী এই রায়কে 'কেলেঙ্কারী' এবং 'অপ্রচলিত' বলে অভিহিত করেছেন, যা নারীদের প্রতি পিতৃতান্ত্রিক ধারণা চাপিয়ে দেয়। সমালোচকদের মতে, এই ধরনের মন্তব্য আধুনিক সমাজে নারীর সমানাধিকার এবং মর্যাদার ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)