জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মুসকান, সোনমের পর ফের আর এক স্বামীহন্তা। প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুনের অভিযোগ উঠল স্ত্রীর বিরুদ্ধে। যদিও, মৃত ব্যক্তির প্রাথমিক তদন্ত মনে করা হয়েছিল যে ইলেকট্রিক শকের কারণে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু পরবর্তী তদন্তে মোড় ঘুরিয়ে দেয় গোটা ঘটনার। উঠে আসে হাড়হিম তথ্য, যেখানে জড়িয়ে বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্র।
একটা হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটই পর্দাফাঁস করে দেয় অভিযুক্ত স্ত্রী ও তার প্রেমিকের। ইতোমধ্যেই পুলিস দুজনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গিয়েছে। হাড়হিম ঘটনাটি ঘটে দিল্লির দ্বারকাতে।
ঘটনার শুরু:
১৩ জুলাই দিল্লির স্বামীহন্তা স্ত্রী সুস্মিতা নিজের স্বামীকে দিল্লির মাতা রূপরানি ম্যাগো হাসপাতাল-এ নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সুস্মিতা দাবি করে যে, স্বামী করণের নাকি আচমকা ইলেকট্রিক শক লেগেছে। হাসপাতাল কর্মীরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। করণের পরিবার ছেলের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে ধরে নেয়। এবং তারা ময়নাতদন্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পুলিসের সন্দেহ:
পরিবার পোস্টমর্টেমে সম্মতি না দিলেও দিল্লি পুলিস তাতে জোর দেয়। কারণ পুলিসের সন্দেহ হয় যে, ঘটনাটি দুর্ঘটনা নয়। এরপরই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। করণের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় দীন দয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালে। এই নিয়ে আপত্তি জানায় করণের স্ত্রী সুস্মিতা ও তার খুড়তুতো ভাই রাহুল।
ঘটনার মোড় যেভাবে ঘোরে:
ঘটনার তিন দিন পর, একটি ইনস্টাগ্রাম চ্যাট গোটা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মৃত করণের ছোট ভাই কুণাল দেব একটি ইনস্টাগ্রাম চ্যাট উদ্ধার করে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। যেটা সুস্মিতা ও রাহুলের চ্য়াট ছিল। রাহুল সম্পর্কে করণের এক ভাই ছিল।
আরও পড়ুন:Weather Update: ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে প্রবল বৃষ্টি! কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় দুর্যোগের তাণ্ডব...
কীভাবে প্রমাণ সামনে আসে?
কুনাল ওই চ্যাটের স্ক্রিন রেকর্ডিং করেন এবং ১৬ জুলাই তা দিল্লি পুলিসের হাতে তুলে দেন। চ্যাটে লেখা ছিল, ১২ জুলাই রাতে করণের খাবারে ১৫টি ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়েছিল। কিন্তু ঘুমের ওষুধ কাজ না করায় সুস্মিতা ঘাবড়ে যায়। এই তথ্য সামনে আসার পর পুলিস ঘটনাটিকে পরিকল্পিত খুন হিসাবে তদন্ত শুরু করে। ওই চ্যাট থেকে সাফ বোঝা যায় যে, সুস্মিতা ও দেওর রাহুল সম্পর্কে ছিল। যার কারণে তারা করণকে খুন করে।
বিস্ফোরক চ্যাট:
ঘুমের অসুধ দেওয়ার পরও যখন করণের মরেনি। তখন সুস্মিতা ঘাবড়ে যায়। এবং সুস্মিতা রাহুলকে লেখে, 'দেখো তো, ওষুধ খাওয়ার পর কতক্ষণে মৃত্যু হয়। তিন ঘণ্টা হয়ে গেছে, বমি নেই, কিছুই না... আর মৃত্যু তো হয়নি। এখন কী করব, কিছু সাজেস্ট করো।'
রাহুল: 'কিছু বুঝতে না পারলে, ইলেকট্রিক শক দাও।'
সুস্মিতা: 'শক দেওয়ার জন্য কীভাবে বাঁধব?'
রাহুল: 'টেপ দিয়ে।'
সুস্মিতা: 'ও ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিচ্ছে।'
রাহুল: 'যা কিছু অসুধ আছে সব দিয়ে দাও।'
সুস্মিতা: 'মুখ খুলছে না। জল ঢালতে পারি, কিন্তু অসুধ দিতে পারছি না। তুমি এসো, একসঙ্গে মিলে হয়তো পারব।'
খুনের পরিকল্পনা:
পুলিসি জেরায় সুস্মিতা ও রাহুল নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করে নেয়। পুলিস জানিয়েছে, ঘুমের অসুধ খাওয়ানোর পর করণকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে খুন করা হয়। এবং পুরো ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসাবে সাজানো হয়। মনে করা হচ্ছে, করণের আঙুলে ইলেকট্রিক শক দিয়ে খুন করা হয়।
আরও পড়ুন:North 24 Parganas: এ কেমন মা! পার্স থেকে কেন নিয়েছিস ১০ টাকা? দুই খুদে সন্তানকে খুন্তির ছ্যাঁকা...
কীভাবে ঘটনা সাজানো হয়:
ঘটনার পর সুস্মিতা শ্বশুরবাড়ি গিয়ে বলে, করণ ইলেকট্রিক শক লেগেছে। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ফ্ল্যাটে ছুটে যান ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে করণকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সুস্মিতার স্বীকারোক্তি:
সুস্মিতা পুলিসকে জানায়, করবাচৌথের আগের দিন করণ তাকে চড় মারেন এবং অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। এমনকী করণ প্রায়শই সুস্মিতার থেকে টাকা চাইতেন এবং মানসিক নির্যাতন করতেন। ইতোমধ্যে পুলিস এখন করণের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষায়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)