Dharmasthala mass-burial case the horrifying accounts of victims family: ধর্ষণ-খুন থেকে জীবন্ত পুড়িয়ে খুন! পবিত্র তীর্থস্থান আসলে কতটা 'অপবিত্র' এবার সেই মুখোশ খোলার পালা। ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা মুখ ফুটে জানিয়েছেন ২০০৩ সালে ধর্মস্থলে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া অনন্যা ভাটের মা। গায়ে কাটা দিয়ে ওঠা মেয়ের নারকীয় খুনের কথা বলেছেন ২০১২ সালে ওই ধর্মস্থল থেকেই নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ২ বোনের মা। এরা কেউ-ই পেরে ওঠেননি 'দোদ্দাভারু'র সঙ্গে লড়াইয়ে! কে এই 'দোদ্দাভারু'?
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দশকেরও বেশি সময় ধরে চলেছে ধর্ষণ, খুন, কবর ও দেহ লোপাটের পালা। সামনে এসেছে কর্নাটকের ধর্মস্থলের গণকবরের হাড়হিম সত্যি। আর তারপরই নেত্রাবতী নদীর তীরে অবস্থিত ধর্মস্থলকে ঘিরে তোলপাড় সারা দেশ।
ধর্মস্থল মন্দির, কর্নাটকের একটি বিখ্যাত তীর্থস্থান। কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলায় নেত্রাবতী নদী ও পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঘন জঙ্গলের উপকণ্ঠে অবস্থিত এই ধর্মস্থল মন্দির সারা দেশের মধ্যে অন্যতম পবিত্র হিন্দু তীর্থস্থান বলে পরিচিত। এখানেই আছে স্বামী মঞ্জুনাথের মন্দির। বহু পুণ্যার্থী এখানে পুণ্যলাভের আশায় সারা বছর ছুটে আসেন। র্তীর্থস্থান দর্শনের টানে আসেন ভ্রমণার্থীরাও।
এমনই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা মুখ ফুটে জানিয়েছেন ২০০৩ সালে ধর্মস্থলে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া অনন্যা ভাটের মা। জানিয়েছেন ২০১২ সালে ওই ধর্মস্থল থেকেই নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ২ বোনের মা। ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরী যখন নিখোঁজ হয়ে যায়, তখন সে শ্রী ধর্মস্থল মঞ্জুনাথেশ্বর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল।
২০১২-র অভিশপ্ত ৯ অক্টোবরের কথা মনে করে শিউরে ওঠেন ওই কিশোরীর মা। জানান, তাঁর ৫ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ছিল ওই কিশোরী। দেরি হয়ে যাওয়ায় কিছু না খেয়েই তাড়াতাড়ি কলেজের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল মেয়ে। সেদিন ছিল হোসা-আক্কি উৎসব- প্রথম ফসল কাটার উৎসব উদযাপনের দিন। যেখানে নতুন চাল, নারকেলের দুধ এবং গুড় দিয়ে একটি খাবার তৈরি করা হত।
বাড়িতে বলে গিয়েছিল যে বাইরে খাবে না, বাড়িতে খেতে আসবে। এমনকি বন্ধুদেরও তাই বলেছিল ওই কিশোরী। কিন্তু মেয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। পরদিন দোপাট্টা ও কলেজের পরিচয়পত্রের ফিতে দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল ওই কিশোরীর দেহ। দেহের উপরের অংশে কোনও কাপড় ছিল না। পাঁজরের হাড় ছিল ভাঙা। শরীরে একাধিক কাটা দাগ।
ওই কিশোরীর পরিবারের পুরুষরা ৪ প্রজন্ম ধরে ধর্মস্থল মন্দিরেরই মাহুতের কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু ওই কিশোরীর বাবা তাঁদের ৪০০ বছরের পুরনো বাড়িটি যে জমির উপর, সেই জমি মন্দিরকে দিতে অস্বীকার করাতেই, ১৭ বছরের ওই কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের পর খুন করা হয়। এমনকি এরপর ওই কিশোরীর বাবা ও বোনকেও হত্যা করা হয়। সেই খুনের ঘটনায় ওই কিশোরীর মা পুলিসের কাছে অভিযোগ করলে, বাড়িতে গিয়ে তাঁদের হুমকি দিয়ে আসেন বীরেন্দ্র হেগড়ের ভাই হর্ষেন্দ্র।
৭৬ বছর বয়সী বাবু গৌড়া, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নেত্রাবতী নদীর তীরে যাঁর দোকান, তিনি স্মৃতি হাতড়ে বলছেন ধর্মস্থলের চারপাশে গণকবর দেওয়ার ভয়ংকর কাহিনী। বলছেন, জঙ্গলে গ্রামবাসীরা যখন মলত্যাগ করতে যেত তখন মাঝে মাঝেই মৃতদেহ পাওয়া যেত। কোনও কোনও মৃতদেহ বন্য শূয়োর, গোসাপ অর্ধেক খেয়েও ফেলত। মৃতদেহগুলি কেবল মাটির ঢিবি দিয়ে ঢাকা থাকত। এলোমেলোভাবে দেওয়া সেই কবরের মাটি হালকা বৃষ্টিতেই ধুয়ে যেত। তখনই বেরিয়ে আসত মাটির নীচে চাপা দেওয়া ভয়ংকর সত্যি। এমনকি তাঁর দোকানে আসা মন্দিরের সাফাইকর্মীদের কথোপকথনেও মৃতদেহ কবর দেওয়ার কথা শুনতে পেতেন।
তিনি বলেন, এরপর পুলিসে বার বার অভিযোগ দায়েরের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। বলা হয়, তাঁর মেয়ে অনন্যা পালিয়ে গিয়েছে! তিনি 'দোদ্দাভারু'রও সাহায্য চান। তিনিও প্রত্যাখান করেন। বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী মন্দিরে আসছেন। সবার খোঁজ তিনি রাখতে পারেন না। এমনকি এও বলেন যে তাঁর মেয়ে হয়তো পালিয়ে গিয়েছে। এরপরই সুজাতা জানাচ্ছেন মেয়ের খোঁজে গিয়ে তাঁর সেই হাড়হিম অভিজ্ঞতার কথা।
সুজাতা বলেন, "অসহায় অবস্থায় আমি যখন একটি ভবনের পাশে বসে পড়ি, ঠিক তখনই ৩ জন লোক আমার কাছে আসে। বলে, অনন্যা কোথায় আছে তা তারা জানে। এই অজুহাতে তারা আমাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যায়। তারপরই আমাকে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখে। পরদিন ভোরে আমায় হুমকি দেওয়া হয় যে, যদি আমি বাঁচতে চাই, তবে যেন ওই জায়গা ছেড়ে চলে যাই। আমি তা অস্বীকার করলে, আমার মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করা হয়। এরপর ৩ মাস পর আমি কোমা থেকে জেগে উঠি। তখন ম্যাঙ্গালুরুর বাড়িতে ফিরে দেখি, বাড়ি ভাঙা। ভিতরে পুরো তছনছ অবস্থা। সব কাগজপত্র ও ছবি কেউ নিয়ে গিয়েছে ও বাড়ির ভিতরে পুড়িয়ে দিয়েছে।"
জানা যায়, ধর্মস্থল মন্দিরকে নিয়ে বিতর্ক আজকের নয়। মন্দির কর্তৃপক্ষকে কেউ চ্যালেঞ্জ করলেই তাঁকে নির্মমভাবে খুন করা হত। ১৯৭৯ সালে ধর্মস্থল পরিচালিত একটি কলেজের শিক্ষিকা তাঁকে উপেক্ষার অভিযোগে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন ও জিতে যান। এঘটনাকে মন্দিরের "শক্তিশালী পরিবারের" কর্তৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয়। এরপর ওই শিক্ষিকার স্বামী যখন শহরের বাইরে ছিলেন, তখন তাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
দশকেরও বেশি সময় ধরে ধামাচাপা দিয়ে রাখা বিতর্ক, বিক্ষোভ, অভিযোগের ঢেউ এবার 'সুনামি'র আকার নিয়েছে। যে 'সুনামি'র ঢেউ আছড়ে পড়েছে সংসদেও। সংসদে চিঠি দিয়ে ধর্মস্থলে নারী নির্যাতন ও উদ্ধার হওয়া গণকবর নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন সাংসদ। ওদিকে কর্নাটক সরকারও ধর্মস্থল গণকবরের তদন্তে প্রণব মোহান্তির নেতৃত্বে গঠন করেছে সিট। পবিত্র তীর্থস্থান আসলে কতটা 'অপবিত্র' এবার সেই মুখোশ খোলার পালা।