জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাখব হাত তোর কাঁধে, গল্পেরা ওই ঘাসে, তোর টিমে, তোর পাশে… জীবনে চলার পথে অনেকের সঙ্গেই পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চলে যায়, কিন্তু কয়েকজন থেকেও যায়। তাদের আমরা নানারকম নাম দিয়ে থাকি। প্রিয় বন্ধু, প্রেমিক বা প্রেমিকা আরও কত কী! এক কথায়, যাদের আমরা কাছের মানুষ বলে থাকি। তাদের ছোট থেকে বড় ভুল আমরা বহুক্ষেত্রে এড়িয়ে যাই এবং নিজের অজান্তে টক্সিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। একটা টক্সিক সম্পর্ক শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়েই ক্ষতি করে। তবে বেশিরভাগ সময়ই আমরা সেই মানুষটার উপর এতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ি, যে বেরিয়ে আসতে পারি না। বার বার নিজেদের ভুল বোঝাই। ফলে অজান্তেই একটা বিষাক্ত সম্পর্ক আর তার নিরন্তর বোঝা বয়ে বেড়াই আমরা। আপনারও এমন তীব্র বিভীষিকাময় নয় তো জীবন? আপনি যে সম্পর্কে আছেন তা টক্সিক বা বিষাক্ত কিনা বোঝাটা জরুরি। এই প্রতিবেদন আপনাকে তা বুঝতে সাহায্য করব। বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়াবে, কী করণীয় তা জানাবেও। কী দেখে বুঝবেন...
কাছের মানুষের কাছে অন্যান্যদের তুলনায় আমরা অনেক বেশি খোলামেলা থাকতে পারি। বহু ছোট ছোট ভাবনাচিন্তা, কথা মন খুলে বলতে পারি কারণ আমরা তাদের ভরসা করি, আর পাঁচজনের থেকে এই মানুষটি আমাদের আবেগ বা অনুভূতি বেশি বুঝবে। কিন্তু সেই মানুষটিই যদি কথায় কথায় অবজ্ঞা করতে শুরু করে, তা হলে নিঃসন্দেহে তা উদ্বেগের।
আমরা যখন কারোর জীবনে গভীর ভাবে জড়িয়ে পড়ি, তাদের খুঁটিনাটি সব বিষয়ে জানতে চাই। তাদের ছোটখাটো ত্রুটি খারাপ লাগে। নিজের সবথেকে প্রিয় জিনিসের মতো তাকেও সবসময় কাছে ও আগলে রাখতে চাই। কিন্তু এটা কখনওই সম্ভব নয়। কারণ সে একজন স্বতন্ত্র মানুষ, কোনও পণ্য নয়। তাই যতই সে কাছের হোক, তার নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে যাতে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত অধিকার থাকতে পারে। কিন্তু সেই সীমা পেরিয়ে যখন বার বার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়, তখনই সম্পর্কের শালীনতা থাকে না। তা হয়ে পড়ে বিষাক্ত হয়ে পড়ে।
যেমনটা আগেই উল্লেখ করা হল, প্রত্যেকেরই নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবন আছে। তেমনই প্রত্যেকেরই নিজস্ব ভালো লাগা, খারাপ লাগা, আবেগের বহিঃপ্রকাশের ধরন আছে। আমরা বহুক্ষেত্রে এমন অনেক মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি, যারা আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত যত্ন নেয় এবং নিজের ক্ষেত্রেও ঠিক এই ব্যবহার আশা করে। তারা নিজেদের জীবনের থেকেও বেশি ব্যস্ত তার পার্টনার বা বন্ধুর জীবন নিয়ে। এই ধরনের মানুষগুলি আদতে নিজেদেরও ভালো রাখতে পারে না। বরং অন্যকে ভালো রাখার চেষ্টাও আদতে অত্যাচারে রূপান্তরিত হয়।
একটা সম্পর্ক আদৌ টক্সিক কি না, তার এরকম নির্দিষ্ট কোনও মাপকাঠি করা সম্ভব নয়। বহুক্ষেত্রে আমরা এমন অনেক বিষয়ের সম্মুখীন হই, যা আমাদের ভীষণ ভাবে মানসিক যন্ত্রণা দেয়। যেমন ব্যক্তিগত জীবনে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও ভালো না, তেমনই একদমই খোঁজখবর না রাখা, চূড়ান্ত অবহেলাও ভালো নয়। সুতরাং, দিনের শেষে আপনি যদি আপনার কাছের মানুষটার কাছ থেকে মানসিক শান্তিই না পান, তা হলে সেই সম্পর্ক বয়ে নিয়ে যাওয়া, আর পায়ে ভারী পাথর বেধে দৌড়নো, একই।
সম্পর্ক গড়তে যত সময় লাগে ভাঙতে তার বিন্দুমাত্রও সময় লাগে না। একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া একেবারেই সহজ কাজ না। সেক্ষেত্রে সামনের মানুষটির সঙ্গে বিষয়গুলি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, সামনের মানুষটি নিজের অজান্তেই আপনাকে কষ্ট দেওয়ার কাজগুলি করে যাচ্ছেন। তবে, যদি আপনার মনে হয় বিষয়গুলি আর ঠিক হওয়ার নয় বরং যত দিন যাচ্ছে একে ওপরের প্রতি তিক্ততা বাড়ছে হচ্ছে, তা হলে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসাই শ্রেয়।