বুকে নবনির্মিত জগন্নাথ ধামের শুভ দ্বারোদঘাটন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুর ৩:১১ মিনিটে শুভ লগ্নে এই ঐতিহাসিক মন্দিরের ...
কিরণ মান্না: দীঘায় জগন্নাথ ধামের শুভ উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তীর্থ কেন্দ্র হিসেবে নতুন পরিচয় পেল দীঘা।
বুধবার দীঘার বুকে নবনির্মিত জগন্নাথ ধামের শুভ দ্বারোদঘাটন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুর ৩:১১ মিনিটে শুভ লগ্নে এই ঐতিহাসিক মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত করেন তিনি।
দ্বারদোঘাটনের আগে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মাতোয়ারা হয়ে ওঠে সমগ্র দীঘা। বাংলার চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতের তারকারা মিলে এক অপূর্ব সন্ধ্যার সৃষ্টি করেন।
উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সংগীতশিল্পী অদিতি মুন্সি, ইমন চক্রবর্তী, রূপঙ্কর বাগচী, নৃত্যশিল্পী ডোনা গাঙ্গুলী সহ বহু গুণী শিল্পী। তাদের পরিবেশনা মঞ্চে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে তোলে।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, অরিন্দম শীল, দিগন্ত বাগচী, লাভলি মৈত্র, শ্রীকান্ত মোহতা সহ আরও অনেকে।
মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে রাজ্যবাসী, স্থানীয় প্রশাসন, ইসকনের রাধা রামন দাস, পুরীর রাজ পরিবারের প্রতিনিধি রাজেশ দৈত্যপতি, হিডকো এবং নির্মাণে যুক্ত সকল শিল্পী ও কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান স্থানীয় জনগণের প্রতি, যাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হত না।
মন্দিরে আজ বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মূর্তির সামনে আরতি করেন, পাখা দিয়ে বাতাস করেন ও সোনার ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করেন।
মন্দির চত্বরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যেই ৫০০টি গাছ রোপণ করা হয়েছে। রত্ন বেদীর উপর স্থাপিত কাঠ ও পাথরের অপূর্ব মূর্তি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই জগন্নাথ ধাম রাজ্যের নতুন তীর্থ কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
তিনি ঘোষণা করেন, মন্দিরের প্রসাদ ও ছবি প্রতিটি গৃহে পৌঁছে দেওয়া হবে।
শুধু রাজ্যেই নয়, সারা দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের কাছেও তা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই দায়িত্ব থাকবে রাজ্য সরকারের আইএনসি বিভাগের উপর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, '১০৮ উপকরণ দিয়ে করা হল প্রভুর অভিষেক। প্রভুর প্রভু শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের পাদস্পর্শে ধন্য হোক বাংলার মাটি'।
মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'আদ্যাপীঠ, দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় মঠ, কামারপুকুর, জয়রামবাটি, কচুয়া লোকনাথধাম- সব জায়গা থেকেই সমস্ত ধর্মের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন'।
'আমি শিল্পী ও স্থপতিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি, তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সৃষ্টি এই জগন্নাথ মন্দির। মা-মাটি-মানুষ আমার গোত্র, আমি তাঁদের উৎসর্গ করলাম এই নবনির্মিত দিঘার জগন্নাথ মন্দির', জানান মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'এই বিশেষ দিনে আগামীর ইতিহাস বিশ্বের মানুষের সামনে বাংলাকে তুলে ধরবে এক নতুন আলোয়। বাংলার এই মিলনস্থল যুগ-যুগান্ত ধরে বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে থেকে যাবে'।
'ধর্ম কখনও মুখে প্রচার করা যায় না, ধর্ম হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। মানুষে আস্থা, ভরসা, বিশ্বাস ও ভালবাসা রাখাই ধর্ম', বলেন মমতা।
'জগন্নাথদেবের অপার মহিমায় কল্যাণ, শান্তি, সৌহার্দ্য বর্ষিত হোক বিশ্বচরাচরে। নবনির্মিত এই তীর্থক্ষেত্রই হোক জনমানসের মিলনক্ষেত্র', লেখেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার বিকেল থেকেই জগন্নাথ মন্দির সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
দীঘার এই নতুন তীর্থযাত্রা আগামী দিনে রাজ্যের পর্যটন ও ধর্মীয় ভাবনার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।