সৃজিতা মৈত্র : ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে, কালো মেঘের কালো হরিণ-চোখ…’। বহুকাল আগে ঠিক তাঁর জন্যই যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটি লিখেছিলেন।
এখন সৌন্দর্যের সংজ্ঞা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। ফর্সা, কালো, মোটা, রোগা, টিকালো নাক, টানা টানা চোখ, সব কিছুই এখন আপেক্ষিক। শুধু দৈহিক গড়নে নয়, মানসিকতা, চিন্তাধারা সবটা মিলিয়ে একজন মানুষকে সুন্দর বলা যায়। তেমনই এক সুন্দরীর সাহসিকতায় ও রূপে এই নেট দুনিয়া এখন তোলপাড়।
তাঁর নাম নায়াকিম গাতওয়েচ (Nyakim Gatwech)। দেখে মনে হবে যেন গ্রানাইট পাথরকে ভালো করে পালিশ করে একটি মানব মূর্তি গঠন করা হয়েছে। ঠিক এতটাই কৃষ্ণবর্ণের তিনি। আজও হাজার হাজার মানুষ নিজেকে সামান্য ফর্সা করার জন্য নামী-দামী নানা কসমেটিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পাশপাশি সার্জারিও করাচ্ছেন। সেখানে তিনি নিজের গায়ে রঙকেই হাতিয়ার করে সবার মন জয় করে নিয়েছেন।
তাঁর এই আত্মবিশ্বাসকে কুর্নিশ জানিয়ে নাম রাখা হয়েছে ‘অন্ধকারের রানি’। সত্যিই তো দিনের আলোয় হীরেও চকচক করে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে উজ্জ্বল ক’জন?
প্রায় ৩০ বছর বয়সী এই মডেল ভীষণই সাহসী। ২০১৭ সালে তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে এক উবার ড্রাইভারের সঙ্গে কথোপকথন শেয়ার করেছিলেন। উবার ড্রাইভার তাঁকে বলেছিলেন, আপনাকে যদি ১০ হাজার ডলার দেওয়া হয়, আপনি কি আপনার গায়ের রঙ ফর্সা করে নেবেন? নায়াকিম গাতওয়েচ একটুও উত্তেজিত না হয়ে হাসি মুখে উত্তর দিয়েছিলেন, যে ত্বক তাঁর কাছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ সেই ত্বককে তিনি ফর্সা করতে যাবেনই বা কেন?
প্রসঙ্গত এই ঘটনা প্রথম নয়। ছোট থেকেই তাঁকে গায়ের রঙের জন্য ট্যাঁরা বেঁকা নানা কথার শিকার হতেই হয়েছে। কিন্তু এটাকে কোনওদিন নিজের দুর্বলতা হতে দেননি।
বরং আজ নিজেকে ভালবেসে নিজের গায়ের রঙে তিনি রঙিন। পিছনে ফেলে এসেছেন তাবড় তাবড় শেতাঙ্গ মডেলকে। এমনকী তাঁর আয়ের পরিমাণও তাঁদের থেকে অনেক বেশি। জানা যায়, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুল্যে যা প্রায় ৭৫ কোটি টাকার সমান।
যদিও মাঝে কুইন অব ডার্কনেসকে নিয়ে একটি গুজব ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায়। বলা হচ্ছিল, পৃথিবীর সবথেকে কালো মহিলার তালিকায় তিনি নাকি গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। পরবর্তীকালে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়, গায়ের রঙ নিয়ে তাঁদের কোনও তালিকাই নেই।
দক্ষিণ সুদানের মডেল নায়াকিম গাতওয়েচ সকলের কাছেই একটি অনুপ্রেরণা। নিজেকে ভালবাসলেই যে পৃথিবীর সব সমস্যা সহজ হয়ে যায়, তা তিনি আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন।