Ratanti Kali Puja: বিভিন্ন তিথিতে বিভিন্ন রূপে পুজিত হন মা কালী। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে সারা বছরে মাত্র তিনটি কালী পুজো বড়ো করে পালন করা হয়। প্রথমটি জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালী পুজো, দ্বিতীয়টি কার্তিক মাসে দীপান্বিতা কালী পুজো আর তৃতীয়টি মাঘ মাসে...
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিভিন্ন তিথিতে বিভিন্ন রূপে পুজিত হন মা কালী। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে সারা বছরে মাত্র তিনটি কালী পুজো বড়ো করে পালন করা হয়। প্রথমটি জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালী পুজো, দ্বিতীয়টি কার্তিক মাসে দীপান্বিতা কালী পুজো আর তৃতীয়টি মাঘ মাসে রটন্তী কালী পুজো। অন্যান্য কালী পুজোর মতোই এই পুজোও মহাসমারোহে আয়োজিত হয়। কিন্তু রটন্তী কালীর উৎপত্তি হয়েছে কীভাবে জানেন? এই বছরে কবেই বা পালিত হবে রটন্তী কালী পুজো, কোনটা শুভ যোগ? জানেন কী রটন্তী কালীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলারও একটি গল্প।
শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির ধ্বনি শুনে শ্রীরাধা সংসার-লোকলাজ সকলকিছু ত্যাগ করে ছুটে যান শ্রীকৃষ্ণের কাছে। শ্রীরাধার শাশুড়ি এবং ননদ জটিলা এবং কুটিলা তাঁরা এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন বহুবারই কিন্তু কখনই শ্রীরাধার স্বামী আয়ান ঘোষকে তা বিশ্বাস করাতে পারেননি। মাঘ মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশীতে অন্ধকারের মধ্যে কৃষ্ণের বাঁশির আওয়াজ শুনে শ্রীরাধিকা বাড়ি ছাড়েন। তাঁর পিছু নেন জটিলা-কুটিলা। তাঁরা কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে শ্রীরাধার মিলিত হওয়ার দৃশ্য চাক্ষুষ করে। আয়ান ঘোষকে প্রমাণ দিতে তাঁরা তাঁকে নিয়ে যান কুঞ্জবনে। আয়ান ঘোষ ছিলেন শক্তির উপাসক। শ্রীরাধিকা এই দেখে ভয় পাওয়ায় আশ্বস্ত করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। আয়ান ঘোষ কুঞ্জবনে পৌঁছে দেখন তাঁর আরাধ্যা মা কালী, গাছের তলায় বসে রয়েছেন এবং নিজের কোলে তাঁর পদযুগল রেখে সেবা করছেন শ্রীরাধিকা। দেখে আপ্লুত হলেন আয়ান। এই কথাটাই রটে গেল যে তিনি মা কালীর দর্শন পেয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণও এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন কৃষ্ণ এবং কালীর অভেদ। মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে মা কালীর দর্শন পাওয়ায় ওইদিনটিতে বিশেষভাবে কালীপুজোর প্রচলন শুরু হল। আর তার নাম হয় রটন্তী কালীপুজো।
অনেকে মনে করেন রটন্তী কালী পুজো করলে দাম্পত্য সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। দুশ্চিন্তা, কলহ দূর করতে এই পুজো করে থাকেন অনেকে। বিভিন্ন ধরনের মনোবাসনা পূরণ করতে মায়ের কাছে হাজির হন সকলে এইদিন। অনেকে মনে করেন এই বিশেষ দিনে তন্ত্র মতে বিশেষভাবে পূজা করলে পারে বিশেষ ফল পাওয়া যায় মায়ের কৃপায়।
দক্ষিণেশ্বরে এই কালী পুজোর প্রচলন করেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। ঠাকুর বলেছিলেন এদিন ভোরে তিনি হঠাৎ মা কালীর দর্শন পান। তিনি দেখেন স্বর্গ থেকে দেবতারা গঙ্গায় স্নান করতে আসছেন।
প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরও মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে রীতি মেনে দক্ষিণেশ্বরে পালন করা হবে রটন্তী কালী পুজো।
এদিনই তারাপীঠে পুজো উপলক্ষ্যে মা তারাকে বিশেষরূপে সাজানো হয়। দুপুরে মাকে দেওয়া হয় ভোগ। সন্ধ্যা আরতির পরই মাকে রটন্তী কালী রূপে সাজানো হয়।
মাঘ মাসের চতুর্দশী তিথিতে এই পুজো হয়। অমাবস্যা তিথির একদিন আগে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। রটন্তী কালী পুজোর মাহাত্ম্য এটাই। এই বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে রটন্তী কালী পুজো পড়েছে চতুর্দশী তিথির আগের দিন ২৭ জানুয়ারি (সোমবার) রাত্রি ৭টা ৪৪ মিনিট থেকে শুরু হচ্ছে এবং শেষ হচ্ছে ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ৭ টা ৩১ মিনিটে।
২৭ জানুয়ারী অর্থাৎ আজ রাত ৮:৪৭:০৪ পর্যন্ত এবং তারপর ১১:২৩:১৭ থেকে ০২:৫১:৩৩ পর্যন্ত।
২৭ তারিখ পড়ছে চতুর্দশী তিথি সন্ধ্যা ৭টা থেকে, ২৮ তারিখ তিথি সমাপন হচ্ছে ৭ টা ৩১ মিনিটে। যাঁরা পুজো দিতে চান এই পুজোর তাঁরা এই সময়টা বেছে নিতে পারেন।