Rath Yatra 2025: মৃত্যুর মুহূর্তে সেই ভক্ত বলেছিলেন, 'আপনি তো আমার কাছে এলেনই না।' তখন জগন্নাথ দেব বলেছিলেন, 'আজ থেকে আমার রথ তোমার দরজায় না থেমে কখনোই এগোবে না।' এই রীতি আজও চলেছে। রথযাত্রা বের হয়, আর সেই ভক্তের মাজারে বিশ্রাম না নিয়ে রথ এক কদমও এগোয় না।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভগবান জগন্নাথের লীলা ও লোককথার কোনও শেষ নেই। যেমন তাঁর কাহিনি অসীম, তেমনই তাঁর ভক্তদের গল্পও অগণিত। ভগবান জগন্নাথ এতটাই সহজ ও সবার জন্য উপলভ্য যে, যেকোনও মানুষই তাঁর ভক্ত হতে পারেন। এই বিশ্বাসকে আরও জোরালো করে তোলে একটি জনপ্রিয় লোককথা।
বলা হয়, একবার মহাপ্রভুর রথযাত্রার রথ একজন ভক্তের ডাকে থেমে গিয়েছিল। এই মহান ভক্তের নাম ছিল সালবেগ। বলা হয়ে থাকে, পুরী মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দির যাওয়ার পথে ভক্ত সালবেগের সমাধি (মাজার) রয়েছে। মহাপ্রভু জগন্নাথের রথ সেই মাজারের সামনে এসে থেমে যায়।
একবার রথযাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রীমন্দির থেকে গুন্ডিচা ধাম পর্যন্ত এক ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই। কিন্তু… হঠাৎ শ্রীমন্দির থেকে কিছুটা দূর যাওয়ার পর রথ হঠাৎ একটি স্থানে এসে থেমে গেল। ভক্তরা আরও জোর দিয়ে আবার রথ টানার চেষ্টা করলেন।
কিন্তু রথ না এক চুল সরল, না যাত্রা এগোলো। সবাই ভাবতে শুরু করল, “প্রভু জগন্নাথ কি রুষ্ট হয়েছেন?” ঠিক তখনই এক বৃদ্ধ, হাতে লাঠি, ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে এসে মূল রথের সামনে এলেন। বললেন, “আমি চেষ্টা করতে পারি রথ এগিয়ে নিয়ে যেতে—শুধু আমার কথা মেনে নিন।”
বৃদ্ধ লোকটি শুধু আঙুল তুলে সামনে একটি দিক দেখালেন। সেই দিকেই ছিল একটি মাজার। বৃদ্ধ লোকটি কারও কানে ফিসফিস করে কিছু বললেন—আর মুহূর্তের মধ্যে ভিড়ের চোখে আলো ঝলকে উঠল। একবার জোরে ধ্বনি উঠল: “জয় জগন্নাথ!” তারপরই শোনা গেল: “জয় ভক্ত সালবেগ!” এই কথাগুলো উচ্চারিত হওয়া মাত্রই রথের চাকা আপনা থেকেই ঘুরে গেল।
কিন্তু কে এই ভক্ত সালবেগ? সালবেগ কীভাবে হলেন জগন্নাথের ভক্ত? এই প্রশ্নের উত্তরে যাঁরা কাহিনি বলেন, তাঁরা জানান, ঘটনাটি সেই সময়কার, যখন ভারতে মুঘলদের শাসন চলছিল। সেই মুঘল সেনাবাহিনীতেই সালবেগ নামের এক সাহসী সৈনিক ছিলেন।
এক মুসলিম পিতা ও হিন্দু মাতার সন্তান সালবেগ, তিনি যেমন আল্লাতে বিশ্বাস করতেন, তেমনই ঈশ্বরেও গভীর আস্থা রাখতেন। একবার এক যুদ্ধে সালবেগের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। গভীরভাবে আহত হওয়ার ফলে তিনি আর সেনাবাহিনীতে থাকতে পারেননি। ছেলের হতাশা দেখে সালবেগের মা তাকে বলেছিলেন, “তুই জগন্নাথ প্রভুর শরণাপন্ন হ।”এই বলে মা তাকে প্রভুর মাহাত্ম্য ও লীলার অনেক কাহিনি শুনিয়েছিলেন। সেই সব গল্প শুনে সালবেগের মনে প্রভুর দর্শন পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগে।
তিনি যখন মন্দিরে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে ‘অমুসলিম’ অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তখন তাঁর মা বলেন, “তুই বাইরে থেকেই প্রভুর নাম জপ কর। যদি তোর ভক্তি সত্যি হয়, তবে জগন্নাথ স্বয়ং তোর দ্বারে আসবেন।” এরপর রথযাত্রার পথে, তিনি একটি ছোট আশ্রয় (মঠিয়া) বানিয়ে সেখানে থাকতে শুরু করলেন এবং “জয় জগন্নাথ” নামে ভজন গাইতে লাগলেন। বলা হয়ে থাকে, তাঁর গভীর ভক্তি দেখে জগন্নাথ প্রভু এক রাতে স্বপ্নে তাঁকে দর্শন দেন। আর সেই রাতেই সালবেগ এই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন।
(Disclaimer: প্রচলিত ধর্মীয় রীতি, শাস্ত্র বা তত্ত্বের ভিত্তিতে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটি মানা বা না মানার সুপারিশ করা হচ্ছে না। বিশ্বাস ব্যক্তিগত বিষয়। সচেতন পাঠক যা করবেন স্বদায়িত্বে। আমাদের সম্পাদকীয় দফতরের কোনও দায়বদ্ধতা নেই।)