জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গত ২০ বছর ধরে গভীর ঘুমে ছিলেন তিনি। জলের মতো অর্থ ব্যয় হয়েছে। কিন্তু রাজপুত্রকে জাগানো যায়নি। কোনও 'সোনার কাঠি' ছুঁইয়ে কোমা থেকে তোলা গেল না সৌদি আরবের রাজপুত্র আল ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল আল সৌদকে (Saudi Prince Alwaleed bin Khaled bin Talal)। শনিবার ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমে তলিয়ে গেলেন তিনি। বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৮ বছর।
১৯৯০ সালের এপ্রিল মাসে জন্মেছিলেন রাজপুত্র আলওয়ালিদ। তিনি প্রিন্স খালেদ বিন তালালের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং সৌদি আরবের অন্যতম ধনকুবের ব্যবসায়ী প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালের ভ্রাতুষ্পুত্র।
সৌদি রাজ পরিবারের সদস্য খালিদ বিন তালাল আল সৌদ পুত্রের মৃত্যুর খবর দেন সংবাদমাধ্যমে। পুত্রশোকে দীর্ঘ বার্তা লিখেছেন তিনি।
২০০৫ সালে লন্ডনে একটি পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন রাজপুত্র আলওয়ালিদ। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তরুণকে। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫। ব্রেন ইনজিওরি এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের জেরে সম্পূর্ণ কোমায় চলে যান।
সেখান থেকেই দীর্ঘ ২০ বছরের লড়াই শুরু হয়। সৌদি আরবের কিং আবদুলআজিজ মেডিক্যাল সিটি 'বাড়ি' হয়ে তাঁর। প্রায় দুই দশক ধরে সেখানেই ছিলেন তিনি, লাইফ সাপোর্টে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মস্তিষ্কে চোট লাগার কারণে তিনি কোমায় চলে গিয়েছেন।
তারপর দীর্ঘ ২০ বছর কোমায় ছিলেন সৌদির 'ঘুমন্ত রাজপুত্র'। বিশ্বের নামী চিকিৎসক, আমেরিকান ও স্প্যানিশ বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা সত্ত্বেও আর জ্ঞান ফিরে আসেনি। চিকিৎসার মাঝে মাঝেই এক-আধবার আঙুল নড়ার মতো ছোট ছোট জিনিস আশার আলো দেখিয়েছিল, বার বার পরিবারের সকলে ভাবতেন, ঠিক হয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু কখনও পুরোপুরি চেতনায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি পরিচিত হন 'দ্য স্লিপিং প্রিন্স' বা 'ঘুমন্ত রাজপুত্র' নামে।
বছর দুই আগেই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন যুবরাজকে 'জাগানো' আর সম্ভব নয়। তবে অত্যাশ্চর্য কিছুর আশায় ছিলেন পিতা। তিনি পুত্রকে 'লাইফ সাপোর্ট' থেকে বার করতে চাননি। এ বছরের জুনে ইদ-উল-আজহায় অন্য পুত্রদের নিয়ে 'ঘুমন্ত রাজপুত্র' কে দেখতে গিয়েছিলেন খালিদ। পুত্রের আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করেন। কিন্তু শেষমেশ না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ওয়ালিদ।
রবিবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। রাজপুত্রকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আল-ফকিরিয়া জেলায় তাঁর প্রাসাদে পুরুষ এবং মহিলারা আলাদা আলাদা করে যেতে পারবেন। তবে সেটা ২৩ জুলাইয়ের পরে।
রিপোর্টে প্রকাশ, ২০০৫ সাল থেকে ওয়ালিদের অবস্থার কোনও রকম উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকেরা ওয়ালিদকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার সব আশা ত্যাগ করলেও, তাঁর বাবা খালিদের আশা ছিল ছেলে এক দিন ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবে।
তাঁর বাবা, প্রিন্স খালেদ বিন তালাল, ছেলেকে নিয়ে এক মুহূর্তও ভরসা হারাননি। কখনও লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার অনুমতি দেননি। তাঁর বিশ্বাস ছিল, মৃত্যু কবে হবে তা একমাত্র আল্লাহই নির্ধারণ করেন।
ছেলের মৃত্যুতে শোকবার্তা দিয়েছেন প্রিন্স খালেদ। বিবৃতিতে লেখেন, 'আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে, গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আজ আমাদের প্রিয় পুত্র আলওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল আল সৌদ পরলোকে পাড়ি দিলেন। আল্লাহ যেন তাঁর ওপর করুণা করেন।'
সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন ও গোটা রাজপরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন দ্য গ্লোবাল ইমামস কাউন্সিল। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, 'দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রাজপুত্র আলওয়ালিদ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এই শোকের সময়ে সৌদি রাজপরিবারের পাশে রয়েছি আমরা।'