Biswas Kumar Ramesh: এক মাস কেটে গিয়েছে। অহমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি সেই বিমানের একমাত্র জীবিত যাত্রী বিশ্বাসকুমার রমেশ। এখনও ঘোরের মধ্যে আছেন। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। এমনকি, তাঁকে স্বাভাবিক করে তুলতে পরিবারের লোকজন মনোবিদের পরামর্শও নিতে শুরু করেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এ কথা জানিয়েছেন রমেশের আত্মীয়েরা।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাসকুমার ছিলেন লন্ডনগামী ওই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানে একমাত্র ব্যক্তি, যিনি প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন। বিমানটি আমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ে। তাঁর ভাই অজয়-সহ বিমানে থাকা বাকি ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়। মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা আরও ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে বিমানের ধাক্কায়।
গত ১২ জুন অহমদাবাদ থেকে ভাইয়ের সঙ্গে লন্ডন গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রমেশ। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তাঁদের সেই বিমান রানওয়ে ছাড়ার ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে সামনের বহুতলে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণও হয়। তার পরেও বেঁচে গিয়েছেন রমেশ। ছিলেন বোয়িং সংস্থার ওই বিমানের ১১এ আসনটিতে। ২৪২ জনের মধ্যে তিনিই ওই বিমানের একমাত্র জীবিত যাত্রী। মৃত্যু হয়েছে রমেশের ভাই অজয়ের।
রমেশের তুতো ভাই সানি জানিয়েছেন, আতঙ্ক কাটাতে তাঁকে মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখনও ভাল করে ঘুমোতে পারেন না তিনি। সানির কথায়, ‘ঘটনার পর থেকে অনেকে ফোন করেছেন। রমেশের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। এমনকি, আমাদের যে সমস্ত আত্মীয় বিদেশে থাকেন , তাঁরাও ফোন করেছেন অনেক বার। রমেশের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু রমেশ কারও সঙ্গে কথা বলেননি। বিমান দুর্ঘটনা এবং ভাইয়ের মৃত্যুর মানসিক আতঙ্ক এখনও উনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি।’
রাতের ঘুম প্রসঙ্গে সানি বলেন, ‘রাতে বার বার জেগে ওঠেন রমেশ। তার পর ঘুমোতে পারেন না অনেক চেষ্টা করেও। এর সমাধান খুঁজতে আমরা ওঁকে মনোবিদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম দু’দিন আগেই। আপাতত লন্ডনে ফিরে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই ওঁর। চিকিৎসা শুরু হয়েছে।’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই দিন আগে তাঁকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনই লন্ডনে ফেরার কোনও পরিকল্পনা নেই বিশ্বাসকুমারের, কারণ চিকিৎসা সদ্য শুরু হয়েছে।
১৭ জুন আমদাবাদ সিভিল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান বিশ্বাসকুমার। সেদিনই ডিএনএ মিলিয়ে তাঁর ভাই অজয়ের দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। ১৮ জুন, দিউতে ভাইয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন তিনি। ভাইয়ের দেহ নিজেই কাঁধে তুলে নিয়ে যান শ্মশানে।
দুর্ঘটনার পর বিমানের ধ্বংসস্তূপের কাছ থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটেই অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে দেখা গিয়েছিল রমেশকে। কী ভাবে বেঁচে গেলেন, তা নিজেও জানেন না। পাঁচ দিন ছিলেন অহমদাবাদ সিভিল হাসপাতালে। গত ১৭ জুন সেখান থেকে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের দেহও তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রমেশ জানিয়েছিলেন, তিনি বিমানের যে দিকে বসেছিলেন, সে দিকটা হস্টেল ভবনের এক তলায় পড়েছিল। তিনি ভাঙা দরজা দেখে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।
ঘটনার এক দিন পর হাসপাতালে বিশ্বাসকুমারের সঙ্গে দেখা করতে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই তিনি বলেন, ‘বিমানের ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মনে হচ্ছিল কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। আমি যে জায়গায় বসে ছিলাম, সেটাই গিয়ে পড়ে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের নীচতলায়। দরজা খোলা দেখে নিজেকে বলি— এটাই সুযোগ, এখনই বেরোতে হবে। অনেক কষ্টে আমি বেরিয়ে আসি।’