West Bengal Weather Updates: প্রতি মাসে নিম্নচাপ বঙ্গোপসাগরে! কেন এত ঘন ঘন নিম্নচাপ বঙ্গোপসাগরে? বৈজ্ঞানিক ও ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা করেছেন আবহাওয়াবিদরা।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ফের নিম্নচাপ বঙ্গোপসাগরে। মে মাসের পর ফের জুন মাসে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এই নিম্নচাপের বর্তমানে অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশ এবং সংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ।
পূর্বাভাস বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই নিম্নচাপ আরও শক্তি বাড়াবে। এই নিম্নচাপের অভিমুখ রয়েছে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে। এই নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে আজ ও কাল বৃষ্টি বাড়বে। গতি পাবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি অক্ষরেখাও।
যে কারণে মৎস্যজীবীদের উদ্দেশেও সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। আজ ও কাল বাংলা এবং ওড়িশার উপকূলে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকবে। সমুদ্রে ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো বাতাস বইবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এত ঘন ঘন নিম্নচাপ বঙ্গোপসাগরে? প্রতি মাসে নিম্নচাপ! কী কারণে? আবহাওয়াবিদরা বলছেন বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার পিছনে কাজ করে বেশ কয়েকটি ফ্যাকটর।
যার মধ্যে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চ তাপমাত্রা, কম বাতাসের প্রবাহ, নদী এবং বৃষ্টিপাতের দরুণ বাতাসে মিশে থাকা আর্দ্রতার মতো ৬ কারণ। এই ফ্যাকটরগুলি নিম্নচাপ সৃষ্টির অনুঘটক হিসেবে কাজ করে থাকে। চলুন বিশদে জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে-
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চ তাপমাত্রা: আরব সাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগরে সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেশি থাকে। ২৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য আদর্শ। উষ্ণ জলরাশি বাতাসেরও তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। ফলে গরম বাতাস উপরে উঠে গিয়ে নিম্নচাপ তৈরি হয়।
কম বাতাসের প্রবাহ: আরব সাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগরে সাধারণত বাতাসের প্রবাহ কম। ফলে ফলে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। একজায়গায় স্থির থেকে তার শক্তি বাড়িয়ে চলে। কারণ বাতাসের গতি নিম্নচাপ তৈরি ও শক্তি বৃদ্ধির পক্ষে অন্তরায়।
বঙ্গোপসাগরের আকৃতি ও গভীরতা: তিন দিক ভূমি দিয়ে ঘেরা বঙ্গোপসাগর তুলনামূলকভাবে আরবসাগরের থেকে কম গভীর। যা নিম্নচাপ গঠনে অবদান রাখে। বঙ্গোপসাগের ভূপ্রাকৃতিক আকৃতি তাপ এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাব: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরিতে মৌসুমি বায়ু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপসাগরে তৈরি নিম্নচাপ সিস্টেম মৌসুমি বায়ুকে ভারতের দিকে টেনে আনতে সাহায্য করে। ফলে বৃষ্টিপাত হওয়ার পাশাপাশি ও মৌসুমি বায়ুর গতিপ্রবাহও প্রভাবিত হয়।
মিষ্টি জলের প্রভাব: বঙ্গোপসাগরে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী থেকেও প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি জল এসে মেশে। এই মিষ্টি জলের প্রবাহ উপসাগরের উপরিভাগের জলকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি নীচের শীতল জলের সঙ্গে তা মেশে না। নিম্নচাপ তৈরির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিম্নচাপ: অনেক সময় পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলি কখনও কখনও পশ্চিম দিকে সরে এসে নিম্নচাপ হিসেবে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। প্রধানত এই ৬ কারণেই বঙ্গোপসাগের এত ঘন ঘন নিম্নচাপ তৈরি হয়ে থাকে।