Zee 24 Ghanta Ananya Samman 2025: সময় বদলেছে, বদলায়নি জৌলুস। অটুট রয়েছে সম্মানজ্ঞাপনের ধারাবাহিকতা। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মুখ ছড়িয়ে থাকে, যাঁরা আমাদের মত কিন্তু তাঁদের ভাবনাচিন্তা, জীবনবোধ আমাদের থেকে বেশ খানিকটা আলাদা। এঁদের মধ্যে অনেকেই জীবনকে বাজি রেখে, সমাজের চলতি পাওয়ার বিরুদ্ধে হেঁটে তাঁদের অনন্যতার ছাপ রেখেছেন।
বিশেষভাবে সক্ষম, জন্ম থেকেই তাঁর হাত দুটি ছোট, ফলে হাতে জোড় কম। তাতে কী, মনের জোড় আকাশ ছোঁয়া। পা দিয়ে লিখে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। খেলার মাঠ তাঁর সবথেকে প্রিয় জায়গা। খো খো খেলার জাতীয় চ্যাম্পিয়ানরা অনেকেই তাঁর ট্রেনিংপ্রাপ্ত। নদীয়া জেলার চকদহের দোয়ারডাঙ্গার শিশু থেকে যুবক যুবতীর আইডল তিনি। তিনি একজন ক্রিড়াবিদ ও সমাজকর্মী শ্রী জগবন্ধু মণ্ডল।
তিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। ছোট থেকেই দেখেছেন বাবা-মা ও দাদুকে এলাকার অসুস্থ পশু ও পাখিদের সুশ্রুষা করতে। সেই অনুপ্রেরণা বুকে নিয়ে এলাকার যে সমস্ত পশুপাখি, যারা নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আহত হয়েছে বা নিজের বাসস্থান হারিয়ে বিপদে পড়েছে তাদের নিজের উদ্যোগে সেবা সুশ্রুষা করে পুনজীবন দিয়েছেন। গত ১০ বছরে প্রায় ১০০০ বন্য প্রাণীকে বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। নিজের বন্ধুদের নিয়ে উদ্ধারকারী দল তৈরি করেছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং -এর চাকরি ছেড়ে বন্য বাঁচানোই তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্যে।
তিনি ১১ ভাইবোনের সংসারে কনিষ্ঠতম সন্তান। অভাবের সংসারে অতিকষ্টে শিক্ষালাভ। তাঁর জীবনবোধ তৈরি করল ভবিষ্যতের লক্ষ্য। তিনি স্থিন করলেন এলাকার কোন শৈশব যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। কোন কিশোর কিশোরী যেন সমাজের থেকে ভুল পথে চলে যায়, তাঁর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেবেন। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। তেমনই তাঁর হাতের তুলিতে ফুটে ওঠে চিত্রশিল্পও। সীমান্তবর্তী এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া লালগোলা এলাকার ছেলে মেয়েদের ২০ বছর ধরে চিত্রশিল্পের পাঠ শেখাচ্ছেন। শুধু আঁকা নন, বুনে দেন শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন। অনেক ছাত্রছাত্রী আর্ট নিয়ে উচ্চ শিক্ষায় এগিয়েছেন। কেউ কেউ আবার নামী প্রতিষ্ঠানে চাকরিও পেয়েছেন।
অনন্য সাধারণের সম্মান পেয়েছেন তিনি। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক, এলাকায় পরিচিত গাছ মাস্টার নামে। গাছের প্রাণ আছে তিনি কেবল বিশ্বাস করেন এমন নয়, তিনি উপলব্ধি করেছেন, তাই গাছকে পরিচর্যা করে বড় করা তাঁর প্যাশন। গত ২৪ বছরে প্রায় প্রায় দশ লক্ষ গাছ লাগিয়ে উযর মাটিতে খণ্ডবন তৈরি করেছে। নিজে তৈরি করেছেন গাছ ব্যাংক, গাছ গ্রুপ। বর্ধমান জেলা জুড়ে গাছ উপহার দেন তিনি।
তিনি নিজের এলাকায় চা বাগানের মা নামে পরিচিত। দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে চলছে নারী পাচার চক্রের রমরমা বাজার। রোজগারের আশায় চক্রের ফাঁদে পড়েছে চা বাগানের মহিলারা। কীভাবে এই চক্রব্যুহ থেকে এলাকার মেয়েদের মুক্ত করা যায় তা নিয়ে দিনরাত তিনি ভেবেছেন। নিজে বিউটিসিয়ান কোর্সের ট্রেনিং নিয়ে চা বাগানের মা। মেয়েদের নিজের হাতে বিউটিসিয়ানের কোর্স শিখিয়েছেন, সঙ্গে তাঁদের মাসরুম চাষের ট্রেনিং দিয়েছেন। ২০ বছর ধরে ৫০০০ মহিলাকে আয়ের পথ দেখিয়ে প্রকৃত অর্থে স্বনির্ভর করেছেন। ফলে নারীপাচারের হাতছানি থেকে মুক্তি পেয়েছে হাসিমারা এলাকার ২৫টি চা বাগানের মহিলারা।
তিনি রুপালি পর্দার কখনও ঋত্বিক, তো কখনও উত্তম আবার কখনও ভানু থেকে তপসে। সবধরনের চরিত্রে তিনি সাবলীল। অভিনয় যাঁর রক্তে। তিনি শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়।
তাঁদের মিউজিকাল জার্নি প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য। ধ্রুপদী থেকে লোকায়ত। ওয়ার্ল্ড মিউজিকের সর্বত্র। তাঁদের মিউসিকাল কনসার্ট দ্রশকদের সুরমূর্ছনায় মুগ্ধ করে তোলে নিমেষে।
ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর উথ্থান ফিনিক্স পাখির মতো। খেলার ময়দানে লড়াই তাঁর রক্তে আছে। বাবা বিখ্যাত গোলকিপার। মহেন্দ্র সিং ধনীর পর উইকিপার হিসাবে তিনি সেরা। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা এক বাক্যে যাঁকে বলেছেন, ইয়ে বাঙালী কা দম হ্যায়।
তিনি যেমন স্বনাম ধ্ন্যা নৃত্যশিল্পী তেমনই কোরিওগ্রাফার এবং অভিনেত্রীও। 'মৃগয়া' থেকে 'চণ্ডালিকা' সৃষ্টির বিচিত্র উৎসবে তাঁর অবাধ যাতায়াত। বাবা উদয়শঙ্কর, ম অমলাশঙ্কর, কাকা রবিশঙ্কর। স্বনামাঙ্কিত ব্যালে ট্রুপ তৈরি করেছেন তিনি, কাজ করেছেন সত্যজিৎ-মৃণালের ছবিতে। তিনি মমতা শঙ্কর।
তিনি জনপ্রিয় মোটিভেশনাল স্পিকার, প্রেরণা-গুরু। তিনি লাইফস্টাইল প্রশিক্ষক এবং তিনি একাধারে লাখক এবং সন্যাসীও বটে। কর্মজীবন থেকে বেরিয়ে এসে ডুব দিয়েছেন ভারতীয় দর্শন ও কন্টেম্পরারি সাইকোলজি চর্চায়। তাঁর লেখা বই 'লাইফ'স অ্যমেজিং সিক্রেটস', 'এনার্জাইজ ইয়োর মাইন্ড' লক্ষ সক্ষ পাঠকমনকে মুগ্ধ ও সমৃদ্ধ করেছে। রাষ্ট্রসংঘে বক্তব্য রেখেছেন, ব্রিটিস পার্লামেন্টেও। তিনি মোটিভেটর গৌর গোপাল দাস।
ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার তিনি পেয়েছেন এই বছরের জীবনকৃতি সম্মান।