Home> PUJA 2016
Advertisement

কৃষ্ণকায়া

কৃষ্ণকায়া


অনুবাদ- (লা নেগ্রিতা, কোষ্টারিকা)

সোনালী দত্ত

সেটা ছিল ১৬৩৫ সাল। কার্থেজ শহরে বাস করত একদল সংকর প্রজাতির মানুষ, যাদের 'প্রাদো' নামে ডাকা হত। সেকালে একটা বিশ্রী প্রথা ছিল। এই বাদামী বর্ণের সংকর প্রজাতির মানুষদের শহরের মধ্যে সাদা চামড়ার মানুষের সাথে বাস করার অধিকার ছিল না। তাদের থাকতে হত শহরের বাইরে। প্রাদোরাও তাই থাকত। এমনকী, দুই জাতের মানুষের মধ্যে বিবাহ পর্যন্ত আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হত।

প্রাদোরা ছিল বড্ড গরীব। জঙ্গলে গিয়ে গাছের শুকনো পাতা, ডাল এইসব কুড়িয়ে এনে জ্বালানির ব্যবস্থা করত। সেই জ্বালানি সংগ্রহের কাজেই এক খুব দরিদ্র মেয়ে একদিন জঙ্গলে গেল। সেটা ছিল ২'রা অগাষ্টের সকালবেলা।  হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটা নিকষ কালো পাথর। আর সেই পাথরের উপরে 'পবিত্র কুমারী' মাতা মেরীর প্রতিকৃতি  খোদাই করা। তাঁর কোলে সেই মহান শিশু। প্রতিকৃতিটা ছোট বটে, তবে ভারি সুন্দর। কৌতূহল বশত সেই মেয়ে পাথরটা তার বাড়িতে নিয়ে এসে একটা ছোট্ট কাঠের বাক্সের মধ্যে রেখে দিল।

দুপুরে মেয়েটা আবার জঙ্গলে গেল। কী আশ্চর্য! ওই একই জায়গায় একই রকম পাথর আবার তার চোখে পড়ল। নাহ্, এ হতে পারে না। পাথরটা তো তার বাক্সে? এটা নিশ্চই অন্য পাথর। মেয়েটা বাড়ি ফিরে গিয়ে তাড়াতাড়ি বাক্সটা খুলল। যাহ্, বাক্স যে খালি! হে ঈশ্বর, এসব কী হচ্ছে?

মেয়েটার জেদ চেপে গেল। সে তৃতীয় বার গেল জঙ্গলে। আবার সেই পাথর! আবার সেই পবিত্র কুমারীর প্রতিকৃতি! এবার শুধু বিস্মিত নয়, মেয়েটা ভয়ও পেল খুব। পাথরের এ কী অদ্ভুত ব্যাপার! মেয়ে তো ছুট লাগাল গ্রামের পুরহিতের কাছে। শেষ বার পাওয়া পাথরটা সে তুলে দিল তাঁর হাতে। তারপর তাঁকে খুলে বলল সবকথা।
শোনা যায়, সেই পুরোহিতের নাম ছিল আলোনসো সানদোভাল। তিনি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করলেন পাথরটা। তারপর তাঁর ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলেন।

পরদিন সকালে সানদোভাল ঠিক করলেন, পাথরটা পরীক্ষা করবেন। আরে, কী আশ্চর্য!  ড্রয়ার ফাঁকা! সেদিনও সেই দরিদ্র মেয়ে জঙ্গলে গিয়েছিল। যথারীতি একই জায়গায় একই পাথর! ভীত মেয়ে তো আবার ছুটে এল পুরোহিতের কাছে।

সানদোভাল এবার সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি নিজেই সদলবলে জঙ্গলে যাবেন। গেলেন, পাথরটা সংগ্রহ করলেন, মিছিল করে ফিরেও এলেন গ্রামে। চার্চের পবিত্র প্রাঙ্গণে পূর্ণ শ্রদ্ধার সাথে পাথরটা রাখা হল। হায়! পরের দিন পাথর উধাও; ফের তাকে দেখা গেল জঙ্গলে।

এইবার প্রাজ্ঞ পুরোহিত পবিত্র কুমারীর ইচ্ছেটা বুঝলেন। জঙ্গলের ঐ জায়গায় তাঁর একটা মন্দির হোক, আসলে তিনি তাই চান। জায়গাটা খুবই রুক্ষ। সেখানে মন্দির বানানো প্রায় অসম্ভব। তবু মাতা মেরীর ভক্তরা সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করল। শেষপর্যন্ত এক অনন্য সুন্দর মন্দির মাথা তুলে দাঁড়াল সেই অপরূপা নারীর আরাধনার উদ্দেশ্যে ---- সেই স্বর্গীয় রমণী,  সেই দেব কুমারী অথবা সেই কৃষ্ণকায়া!

Read More