জাপান: ২ ('৭৫ রিতসু দোয়ান, '৮৩ তাকুমা আসানো)
জার্মানি: ১ ('৩৩ ইকে গুন্ডোগান)
সব্যসাচী বাগচী
চার বছর পরেও মন্দ ভাগ্য পিছু ছাড়ল না। ২০১৮ সালের ১৭ জুন এবং ২৭ জুনের পর এবার ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর। রাশিয়া বিশ্বকাপের (Russia World Cup 2018) পর এবার কাতার (Qatar)। জার্মানদের জাত্যভিমান বারবার মাটিতে মিশে যাচ্ছে। চার বছর আগে সেই দুটি 'কালো রাত' এখনও তাড়া জার্মানদের করে বেড়াচ্ছে। সেবার জোয়াকিম লো-র (Joachim Low) জার্মানি জোড়া লজ্জার হার হজম করেছিল। প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর (Mexico) বিরুদ্ধে ০-১ গোলে হেরে যাওয়ার পর, ১০ দিনের মাথায় ফের মাথায় বজ্রাঘাত। এশিয়ার 'রেড ডেভিলস' দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) কাছে ২-০ ব্যবধানে হেরে সেবার প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল। গোল করেছিলেন কিম ইয়ং গুউন এবং সং হিউন মিন। চার বছর আরও এশিয়ার আরও এক জায়ান্ট জাপানের কাছে উড়ে গেল ম্যানুয়েল নুয়্যারের (Manuel Neuer) দল। তবে এবার এগিয়ে থেকেও হারতে হল। ফলাফল ২-১। ইকে গুন্ডোগানের (Ilkay Gundogan) গোলে এগিয়ে থাকলেও, ম্যানুয়েল নুয়্যার ও ডিফেন্ডারদের ভুলে দুই 'সুপার সাব' রিতসু দোয়ান (Ritsu Doan), তাকুমা আসানো-র (Takuma Asano) জোড়া গোলের সৌজন্যে দোহার খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে জাপানের সূর্যোদয় ঘটালেন।
এটা কি তাহলে অঘটনের বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে? আর্জেন্টিনার পর জার্মানি, পরপর দুই দিন দুই শক্তি এবং প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ৯০ মিনিটের যুদ্ধে ধরাশায়ী! লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে ১-২ গোলে হারিয়ে মাটিয়ে নামিয়ে ছিল সৌদি আরব। বুধবার জার্মানিকে হারিয়ে আরও একটা অঘটন 'উপহার' এশিয়ারই আর এক দল জাপান। সেটাও কী অবিশ্বাস্যভাবে! ১-০ গোলে পিছিয়ে যাওয়া ম্যাচটা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জাপান জিতে নিয়েছে ২-১ গোলে। ঠিক যে ভাবে নীল-সাদা বাহিনীর বিরুদ্ধে সৌদি প্রত্যাবর্তন করেছিল। দুটি ম্যাচের মধ্যে আরও একটি মিল আছে। মেসি ও গুন্ডোগান পেনাল্টি থেকে গোল করে তাঁদের দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি।
বিরতির আগে জার্মানিই বেশি দাপট দেখিয়েছে। জপান শুরুটা অবশ্য করেছিল জার্মানিকে কাঁপিয়ে দিয়ে ৮ মিনিটের সময় মাঝমাঠে গুন্ডোগানের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে জাপানি মিডফিল্ডার দাইচি কামাদা বল বাড়ান সতীর্থ জুনিয়া ইতোকে। ইতোর লম্বা ক্রস যায় দাইজেন মায়েদার পায়ে। বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি মায়েদা। কিন্তু সাইডলাইনে তখন দেখা যায় সহকারী রেফারির অফসাইডের পতাকা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে জার্মানি।
ওই গোলটা না হওয়ায় জাপান যেমন কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পরে, জার্মানি চাঙ্গা হয়ে উঠে দারুণভাবে। ১৬ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে ইয়োশুয়া কিমিখের ক্রসে হেড করেছিলেন আন্টনিও রুডিগার। কিন্তু লক্ষ্যে থাকেনি সেটা। ২৮ মিনিটে গুন্ডোগানের একটা শট সেভ করেন জাপানি গোলকিপার শুইচি গোন্দা। এর মিনিট তিনেক পরেই এগিয়ে যায় জার্মানি।
৩১ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতরে আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে জার্মান ডিফেন্ডার ডেভিড রোউমকে ফাউল করে বসেন জাপানি গোলরক্ষক শুইচি গোন্দা। রেফারি সঙ্গেও সঙ্গেই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন, পরে ভিএআর দেখেও অটল থাকেন সেই সিদ্ধান্তে। গুন্ডোগানের স্পট কিকে এগিয়ে যায় জার্মানি।
আরও পড়ুন: FIFA World Cup 2022: কার বিরুদ্ধে মুখে হাত দিয়ে প্রতিবাদ জানাল ম্যানুয়েল নুয়্যারের জার্মানি?
বিরতির আগে আরও দু'বার ভালো সুযোগ পেয়েও শট বাইরে মারে জার্মানি। একবার ইয়োশুয়া কিমিখ। আর একবার জামাল মুসিয়ালা। তবে প্রথমার্ধের যোগ হওয়া সময়ে জাপানের জালে ঠিকই বল পাঠিয়ে দেন কাই হাভার্টজ। কিন্তু দুর্ভাগ্য জার্মানির, সেই গোলও অফসাইডের কারণে এবার বাতিল হয়ে যায়।
বিরতির পর মাঠের নামার মিনিট চারেকের মধ্যেই দারুণ আরেকটা গোলের সুযোগ পায় জার্মানি। প্রতি আক্রমণে নিজেদের বক্স থেকে রোউম বল বাড়ান মুসিয়ালার দিকে। জাপানের পাঁচজন ফুটবলারকে টপকে শটও নিয়েছিলেন মুসিয়ালা। কিন্তু সেটা বেরিয়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকা গুন্ডোগানে বিরতির পরেও ছন্দে ছিলেন। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণভাগ, সব জায়গাতেই ছিল তাঁর সদর্প উপস্থিতি। তবে ফিনিশিংটা জুতসই হচ্ছিল না জার্মানির। গুন্ডোগান নিজেই যেমন ৬০ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়ে হেলায় নস্ট করেন। ৬৬ থেকে ৭০-এই চার মিনিটে তো জাপানের বক্সে বেশ কয়েকটা সুযোগই পেয়েছিল জার্মানি। কিন্তু জাপান গোলকিপার গোন্দা ঠিক যেন সৌদির গোলকিপার মহম্মদ বিন খালিল বিন ইব্রাহিম আল-ওয়েসের (Mohamed Al-Owais) মতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন।
জাপান অবশ্য একেবারে বসে থাকেনি। সুযোগ পেলেই প্রতি আক্রমণে উঠেছে, বেশ কয়েকবার জার্মানদের ডিফেন্সের পরীক্ষাও নিয়েছে। ৭৩ মিনিটে ইতোর একটা শট দারুণ সেভ করেন নুয়্যারে। তবে গতির সঙ্গে ফুটবল খেলা জাপান হাল ছাড়েনি। এর পুরস্কার তারা পেয়ে যায় ৭৫ মিনিটে। কারোকু মিতোমার পাস থেকে বল পেয়ে শট নেন তাকুমি মিনামিনো। তাঁর শট নুয়্যার ধরতে না পারলেও ফিস্ট করে রুখে দেন। তবে রিতসু দোয়ানের ফিরতি শট আর আর ঠেকাতে পারেনি। ফলে সমতা ফেরায় জাপান।
এরপর জাপান একেবারে তেতে উঠে। ফ্রি-কিক থেকে ইতাকুরার লম্বা পাস যায় তাকুমা আসানোর কাছে। যিনি জার্মান ডিফেন্ডার নিকো শ্লোটারবেককে বোকা বানিয়ে নুয়্যারের মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন। জার্মান দর্শকদের স্তব্ধ করে গর্জন করে উঠেন জাপানি সমর্থকরা। কারণ দোহার খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের রাতে যে জাপানের সূর্যোদয় ঘটল।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)