নিজস্ব প্রতিবেদন: তিনি যেন এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। বড় ম্যাচে দীপক টাংরির বদলি ‘সুপার সাব’ হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন। তখন ফিরতি ডার্বির বয়স ৬১ মিনিট। এটিকে মোহনবাগান এক গোলে পিছিয়ে রয়েছে। এমন অবস্থায় সমতা ফিরিয়েছিলেন কিয়ান নাসিরি। এরপর ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে আবার দুই গোল। ৯০ ও ৯১ মিনিটে এসসি ইস্টবেঙ্গলের জালে বল ঢুকিয়ে ডার্বির রঙ সবুজ-মেরুন করে দিয়েছিলেন জামসিদ নাসিরির ছেলে।
২১ বছরের কিয়ান যে চাপের ম্যাচে জ্বলে উঠতে পারেন সেটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন জুয়ান ফেরান্দো। তাই এই তরুণকে ‘নাম্বার নাইন’ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। আর তাঁর ছকেই আইএসএল-এর ডার্বিতে ‘চারে চার’ করে মাঠ ছাড়ল সবুজ-মেরুন।
তিন পয়েন্ট নিশ্চিত হতেই ‘হ্যাটট্রিক হিরো’ কিয়ানকে জড়িয়ে ধরেন দলের হেড স্যার। এরপর ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে এই স্প্যানিশ কিয়ানের প্রশংসা করে বলেন, “কিয়ানের জন্য আমি খুশি। ও অনুশীলনে খুবই পরিশ্রম করে, উন্নতিও করেছে অনেক। ম্যাচটা যখন বেশ কঠিন জায়গায় চলে যাচ্ছিল, তখন আমরা সিস্টেম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিই। কিয়ানকে ‘নাম্বার নাইন’-এর মতো ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। ও যে সফল হয়েছে, সে জন্য আমি খুবই খুশি। ওর মতো তরুণ ফুটবলার সফল হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি।“
আরও পড়ুন: Exclusive: Kiyan Nassiri: ‘ভাইপো’ কিয়ানের সাফল্যে উল্লসিত ‘কাকা’ মজিদ, ইরান থেকে এল বার্তা
হ্যাটট্রিক করে দলকে লিগ টেবিলের চার নম্বরে তুলে এনেছেন কিয়ান। একই সঙ্গে নজিরও গড়ে ফেললেন জামসিদ পুত্র। সবুজ-মেরুনের জার্সি গায়ে চাপিয়ে চতুর্থ স্ট্রাইকার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন মোহনবাগান অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা কিয়ান। এই তালিকায় অমিয় দেব (১৯৩৩), অসিত গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৩৭), চিডি এডের (২০০৯) প্রাক্তনদের নাম রয়েছে। এ বার সেই তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেললেন এই ‘বিস্ময় বালক’।
২০২০ সালের আই লিগকে ধরলে এই নিয়ে পরপর পাঁচটি ডার্বিতে চিরপ্রতিদ্বন্দীর বিরুদ্ধে জয় পেল সবুজ-মেরুন। স্বভাবতই এই ‘বড় ম্যাচ’ সমর্থকদের উৎসর্গ করলেন ফেরান্দো। তবে দলের রক্ষণ নিয়ে চিন্তা কিন্তু থেকেই গেল। লিস্টন কোলাসো গোল করার একাধিক চেষ্টা করলেও, তাঁর ভুলের জন্যই এগিয়ে গিয়েছিল লাল-হলুদ। সেটা মেনেও নিলেন ফেরান্দো।
তিনি বলেন, “মনবীর বা লিস্টন, দলের স্বার্থে তাদের যা করা দরকার, সেটা করতে হবে। আমরা যে স্টাইলে খেলি, তাতে আমাদের বল পায়ে রাখতে হবে, জায়গা তৈরি করে আক্রমণে উঠতে হবে। এরপর দ্রুত নেমে এসে ফের ডিফেন্স করতে হবে। এই ব্যাপারগুলো দলের সবাই ধাপে ধাপে বুঝে নিতে পারলে দল ভাল খেলবে। তবে আমার কাছে ওদের তরতাজা থাকাটা খুবই জরুরি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজ আমাদের ফুটবলাররা ভাল খেলতে পারেনি। সব দলের ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে। কোভিডের জন্য সবাইকে ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হচ্ছে। অনুশীলন ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেইউ। এমন পরিস্থিতিতে ফুটবলারদের পারফর্ম করা খুব কঠিন।“
কিয়ান হ্যাটট্রিক করে দলের মান না বাঁচালে ডার্বির ছবি অন্য রকম হতেই পারত। কারণ মোক্ষম সময় পেনাল্টি নষ্ট করেছিলেন ডেভিড উইলিয়ামস। যদিও এই সুযোগ নষ্টকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছেন না ফেরান্দো। তিনি যোগ করেছেন, “এই সময়ে ডেভিডের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। পেনাল্টি মিস করলেও ও আমাদের প্রচুর সাহায্য করেছে। গোলের সুযোগ তৈরি করা থেকে বিপক্ষকে চাপে রাখা—সবই করেছে ও। হায়দরাবাদ, ওডিশার বিরুদ্ধেও খুব ভাল খেলেছিল ডেভিড। পেনাল্টি থেকে সবাই গোল করতে চায়। ভুল হয়ে গিয়েছে। তবে আমরা ওর পাশে আছি।“
১১ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে উঠে এল এটিকে মোহনবাগান। আগামী গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে নামবেন প্রীতম কোটাল-প্রবীর দাসরা। সেই ম্যাচ জিতলে যে ফেরান্দোর দলের আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।