জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ থেকে ২৯ জুন ২০২৪। ঠিক সাত মাসের মধ্য়ে চিত্রটা পুরোপুরি বদলে গেল। পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছিল ভারতকে। চোখের জল মুছতে মুছতে মাঠ ছেড়েছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। তবে এবার ক্রিকেট বিধাতা নিষ্ঠুর হলেন না, কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে (T20 World Cup 2024) তিনি নাম লিখে দিলেন টিম ইন্ডিয়ারই। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘাড়ে 'চোকার্স' তকমা চাপিয়েই চ্যাম্পিয়ন ভারত। এবারও রোহিত কাঁদলেন। তবে সেই কান্না আনন্দের।
আরও পড়ুন: বিরাটদের 'বন্দে মাতরম', কোরাসে ৩৩ হাজার দর্শক, কুর্নিশ রহমানেরও...
২০১৩ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল ভারত। ১১ বছর পর এল ভারতের আইসিসি! বিগত ৫টি আইসিসি ট্রফির ফাইনালে উঠেও বৈতরণী পার করতে পারেনি ভারত। তবে এবার ইতিহাস। ২০০৭ সালের পর ফের ভারত টি-২০ বিশ্বকাপ চ্য়াম্পিয়ন। সাত রানে রুদ্ধশ্বাস বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতে ভারত প্রমাণ করে দিয়েছে যে, এই কাপ ছিল তাঁদেরই। ১৭ বছর পর টি-২০ বিশ্বকাপ জিতে, ভারতে পা রাখার পর থেকে রোহিত ও বিরাটরা এক দণ্ড দম ফেলার সময় পাননি। দেশে পা রেখেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে যাওয়া থেকে আরম্ভ করে বিকেল-সন্ধে ধরে, মেরিন ড্রাইভে হুড খোলা বাসে চেপে ট্রফি ট্য়ুর। তবে এখানেই শেষ নয়। রোহিতদের সংবর্ধনার শেষ পর্বের অনুষ্ঠান ছিল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে।
আর এই ওয়াংখেড়েতে উপস্থিত ছিলেন রোহিতের বাবা গুরুনাথ শর্মা ও মা পূর্ণিমা শর্মা। মায়ের শরীর ভালো নেই। তবুও এমন দিনে কী করে তিনি ভুবনজয়ী ছেলের না পাশে থাকেবন! অসুস্থ শরীর নিয়েও এসেছিলেন মাঠে। আর ছেলেকে হাতের কাছে পেয়ে আদরে ভরিয়ে দিয়েছেন মা। সেই ভিডিয়ো কেউ একজন তুলে নিয়ে নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। যা দেখে চোখ ভিজছে সকলেরই। এখানেই শেষ নয়, রোহিত বাড়ি ফিরেও পেয়েছেন সারপ্রাইজ। তাঁর বন্ধুরা অপেক্ষা করছিলেন রোহিতের বাড়ির নীচে। বন্ধুদের তালিকায় রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটার তিলক বর্মাও। রোহিতকে দেখতে পেয়েই তাঁরা একসঙ্গে কুর্নিশ জানান। সকলের পরনেই ছিল একরকম টি-শার্ট। তাঁরা রোহিতের ট্রফি সেলিব্রেশনের ভঙ্গিমা নকল করেই, তাঁর দিকে এগিয়ে আসেন। এরপর রোহিতকে কোলে তুলে সেলিব্রেশনে মাতলেন।
রোহিত কাপযুদ্ধে ছিলেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বাধিক রানশিকারি। সেই চেনা মেজাজেই ওপেন করতে নেমে বেছে নিয়েছিলেন বেদম প্রহারের রাস্তা। ৮ ইনিংসে করেছিলেন ২৫৭ রান। তাঁর গড় ছিল ৩৬.৭১। স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫৬.৭০। তিনটি অর্ধ-শতরান করেন 'হিটম্য়ান'। বিশ্বকাপ জিতেই তিনি বিরাট কোহলির মতো টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান। রোহিত সাংবাদিকদের চমকে দিয়ে বলেছিলেন, 'আমিও বিরাটের মতোই দেশের জার্সিতে শেষ টি-২০ ম্য়াচ খেলে ফেললাম। এই ফরম্য়াটকে গুডবাই বলার জন্য় এর চেয়ে ভালো সময় হতে পারত না। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। টি-২০-র হাত ধরেই ভারতের হয়ে আমার অভিষেক। ভীষণ ভাবে এই কাপটা জিততে চেয়েছিলাম। শব্দে প্রকাশ করতে পারব না এই আনন্দ। আমার জন্য় খুব আবেগঘন মুহূর্ত। জীবনে মরিয়া হয়ে এই খেতাব চেয়েছিলাম। আজ খুশি যে ফিনিশিং লাইন পার করতে পেরেছি।'
আরও পড়ুন: ১৬ ঘণ্টার উড়ানের পর বেজায় খিদে, ডায়েটকে গুলি মেরে বিরাট-রোহিত খেলেন...
১২ জুন ২০১০, জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে বিরাটের দেশের জার্সিতে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে অভিষেক। সেদিন হারারেতে তিনি ২১ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ২৯ জুন ২০২৪, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্য়াচ খেললেন বিরাট। শেষ ইনিংস করে রাখলেন স্মরণীয়। ৫৯ বলে ৭৬ রান করে তিনি আউট হন। দেশের হয়ে ১২৫টি টি-২০ ম্য়াচে বিরাট করেছেন ৪১৮৮ রান। ১টি সেঞ্চুরি ও ৩৮টি হাফ-সেঞ্চুরি আছে তাঁর। সর্বাধিক ইনিংস অপরাজিত ১২২ রানের। এমনকী এই ফরম্য়াটে তিনি হাত ঘুরিয়ে নিয়েছেন চার উইকেটও। ১৪ বছরের টি২০আই কেরিয়ার ঠিক এমনই।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)