সব্যসাচী বাগচী: মাত্র চারদিনের ব্যবধান। এই কয়েকটা দিনে ভাল-মন্দ দিক ফের একবার খুব কাছ থেকে দেখলেন ঋদ্ধিমান সাহা। টেস্ট দলের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে ফের একবার আইপিএল জগতে রাজার মতো ফিরে আসা, সবকিছুই ঘটল বেশ নাটকীয়ভাবে।
আইপিএল-এর মেগা নিলামের কয়েকদিন আগে বাজারে ছড়িয়ে যায় একটা খবর। ঋদ্ধিকে নাকি বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছে রাহুল দ্রাবিড়ের টিম ম্যানেজমেন্ট!কারণ বয়স বড় বালাই! সেটা নিয়ে তিনি অবশ্য যা বলার বলেছিলেন। তবে সেই খবরের প্রভাব প্রথম দিনের নিলামে দেখা গিয়েছিল। অবিক্রিত রয়ে গিয়েছিলেন ভারতের সেরা উইকেটকিপার।কিন্তু দ্বিতীয়দিন তাঁকে আটকে রাখা গেল না। ৩৭ বছরের 'সুপারম্যান'কে তুলে নিল হার্দিক পান্ডিয়ার 'গুজরাত টাইটান্স'। দাম পেলেন ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। খুশির খবরটা পেয়েই জি ২৪ ঘণ্টাকে টেলিফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন পাপালি।
প্রশ্ন: ৩৭ বছর ফ্যাক্টর নয়। আসল ফ্যাক্টর হল আপনার ফর্ম ও ফিটনেস। তাই তো?
ঋদ্ধি: সেটাই তো সবসময় মাপকাঠি হওয়া উচিত। (ওঁর স্ত্রী দেবারতি বলে উঠলেন, 'কোন রাজ্যের হয়ে খেলছে সেটাও ফ্যাক্টর!)। বয়স যদি ফ্যাক্টর হয় তাহলে শিখর ধওয়ন, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৩৬-৩৭ বছর বয়সে কীভাবে খেলছে? সেই উত্তরটা আগে পেলে ভাল হয়।
প্রশ্ন: প্রথমদিনের নিলামে অবিক্রীত থাকার পর আপনি চিন্তায় ছিলেন?
ঋদ্ধি: চিন্তায় ছিলাম না। তবে অবাক হয়েছিলাম। সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কারণ ১০টা দল দুটি করে কিপার রাখছে। সেই ২০ জন কিপারের মধ্যে জায়গা করতে না পারলে অবাক তো হতেই হবে। প্রথমদিন অবিক্রীত থাকার পিছনে কোনও বড় কারণ তো নিশ্চয়ই হবে।
আরও পড়ুন: IPL 2022 Auction,Wriddhiman Saha: প্রায় ২ কোটি টাকায় বাংলার ঋদ্ধিমান গুজরাতে
প্রশ্ন: চারদিন আগে আপনাকে নিয়ে একটা বিতর্কিত খবর ক্রিকেট দুনিয়ায় দাবানলের ছড়িয়ে পড়েছিল। সেটা নিলামের প্রথমদিন অবিক্রীত থাকার অন্যতম বড় কারণ?
ঋদ্ধি: অবশ্যই মনে হয়। প্রথমদিন যখন কেউ আমাকে ডাকল না, তখন সেই খবরটার কথাই মনে পড়ছিল। আমার মনেও একটা সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। আমাকে টেস্ট দল থেকে একেবারে ছেঁটে ফেলার পরিকল্পনা তো অনেক আগে থেকেই হচ্ছিল। কিন্তু এমন খবর আইপিএল নিলামের ঠিক চারদিন আগে কেন প্রকাশ করা হল? সেটা নিয়ে আমার মনে একাধিক প্রশ্ন আছে। আমি যখনই জানালাম যে রঞ্জি ট্রফি খেলব না, এর দুই দিনের মধ্যেই এমন একটা বিতর্কিত খবর 'লিক' করে দেওয়া হল!
প্রশ্ন: গুজরাত টাইটান্স-এ আপনাকে দলে নেওয়ার মুহূর্ত কি আপনি টিভি-তে দেখেছেন?
ঋদ্ধি: না, আমি কালীঘাট মাঠ থেকে ট্রেনিং করে ফিরছিলাম। আমার বন্ধুর গাড়িতে। (পড়ুন, বাংলার প্রাক্তন জোরে বোলার সৌরভ সরকার)। সেই সময় আমাদের ক্যাম্পের একটি ছেলে সুখবর দেয়।
প্রশ্ন: দেবারতি ও আপনার বাবা-মা, কোচ জয়ন্ত ভৌমিক অনেকটা স্বস্তি পেয়েছেন?
ঋদ্ধি: ওদের মুখে হাসি ফুটে এসেছে। দেবারতির মুড এখন বেশ ভাল। আপনার সঙ্গে কথা বলার আগে বাড়ির বড়দের সঙ্গেই কথা বলছিলাম। আমি শনিবার একটু অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু পরে নিজের মনকে শান্ত করে কালীঘাট মাঠে বাচ্চা ছেলেদের প্র্যাকটিস করাতে চলে গিয়েছিলাম। তবে দেবারতি খুব চিন্তিত ছিল। শেষ পর্যন্ত ওর মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
প্রশ্ন: কেরিয়ারে অনেক উত্থান পতন দেখেছেন। কিন্তু গত চারদিন আপনার সঙ্গে যেটা হয়েছে, সেটা কি সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল?
ঋদ্ধি: না, না। আমি এ ভাবে জীবনকে দেখি না। 'এক কান দিয়ে ঢোকাই আর কান দিয়ে বের করে দি'। এটাই আমার স্বভাব। ভারতীয় দলের জন্য আগেও যেমন গায়ে গতরে পরিশ্রম করেছি, এখনও সেই মানসিকতা বজায় রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।
প্রশ্ন: গুজরাত টাইটান্স দলে আপনার সঙ্গে রয়েছেন অজি কিপার ম্যাথু ওয়েড। ওঁর সঙ্গে দেখা হলে সেই বিখ্যাত ক্যাচ নিয়ে কথা হবে?
ঋদ্ধি: সেটা তো অতীত হয়ে গিয়েছে। এখন কথা বলে কি লাভ! আমি সেই ক্যাচ নিয়ে কথা বলতে চাই না। ওয়েড যদি কথা বলে সেটা অন্য ব্যাপার।
প্রশ্ন: আপনি রশিদ খানের বলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে দীর্ঘদিন কিপিং করেছিলেন। গুজরাতে দলে আপনাকে নেওয়ার কি সেটা বড় কারণ? তাছাড়া আপনাদের বোলিং লাইনআপ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ঋদ্ধি: গুজরাতে আমাকে নেওয়ার জন্য এটাও বড় কারণ হতে পারে। ওদের দলে ভাল কিপার ছিল না। তাছাড়া আমি অনেকটা সময় রশিদের বলে কিপিং করেছি। হয়তো সেটা নিয়ে ওদের কেউ পরামর্শ দিতে পারে। আমার ধারণা নতুন দল পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা বড় ফ্যাক্টর।
প্রশ্ন: গুজরাতের পাশাপাশি আপনার জন্য চেন্নাই সুপার কিংস ডেকেছিল। শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। এটা কি 'সাপে বড়' হয়েছে? সিএসকে-তে গেলে তো আবার রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকতে হত!
ঋদ্ধি: একজন খেলোয়াড়ের মাঠে থাকা খুব জরুরি। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে গুজরাতে গিয়ে ভালই হয়েছে।