সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রথম দিনের খেলার শেষে
ভারত টসে জিতে বোলিং
অস্ট্রেলিয়া, প্রথম ইনিংস: ৮৫ ওভারে ৩ উইকেটে ৩২৭ রান
(ট্রাভিস হেড: ১৪৬*, স্টিভ স্মিথ: ৯৫*, ডেভিড ওয়ার্নার: ৪৩)
সব্যসাচী বাগচী
আচ্ছা কোন ইস্যুকে নিয়ে ডিনার টেবলে জোর আলোচনা হবে! রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ছাঁটাই করে অধিনায়ক রোহিত শর্মার নিজের বিপদ ডেকে আনা! নাকি সেই মোক্ষম সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মারকাটারি মেজাজে ট্রাভিস হেড ও স্টিভ স্মিথের জোড়া শতরান সেরে নেওয়া। কারণ প্রথম দিনের শেষে দুই অজি তারকার জোড়া শতরানের জন্যই অস্ট্রেলিয়া ৩.৮৫ রান রেট বজায় রেখে ৮৫ ওভারে ৩ উইকেটে ৩২৭ রান তুলে ফেলেছে। ট্রাভিস হেড ১৫৬ বলে ১৪৬ রানে অপরাজিত রয়েছেন। তাঁর ইনিংস ২২টি চার ও একটি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল। অন্যদিকে স্মিথের ইনিংসে ছিল ধৈর্য ও দৃঢ় সংকল্প। তিনি ২২৭ বলে ৯৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন। আর দুই অজি ব্যাটারের দাপটে সতীর্থদের ঝুলে যাওয়া কাঁধ সাইডলাইনের ধারে বসে দেখতে বাধ্য হলেন ৯২টি টেস্টে ৪৭৪টি উইকেট নেওয়া বিশ্বের এক নম্বর বোলার।
ফলে কোনও সন্দেহ নেই যে, অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটার ও প্রাক্তন অধিনায়ক বিশ্ব টেস্ট ফাইনালের প্রথম দিন জমিয়ে দিয়েছেন। কারণ ঘাসে ভরা ওভালের বাইশ গজের পুরো ফায়দা না তুলতে পারার জন্য মেগা ফাইনালের প্রথমদিনেই প্রবল চাপে টিম ইন্ডিয়া। কারণ চাপের মুখে লড়াই করে চতুর্থ উইকেটে হেড ও স্মিথ ২৫১ রান যোগ করে কাপ যুদ্ধের ফাইনালে চালকের আসনে দলকে বসিয়ে রাখলেন।
টসের পর সেরা একাদশ ঘোষণা হতেই রোহিতের সিদ্ধান্তকে একহাত নিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে রিকি পন্টিং। মহম্মদ আজহারউদ্দিন থেকে রবি শাস্ত্রী। তবে ওভালের ঘাসে ভরা পিচের সঙ্গে লাল ডিউক বলের দারুণ মেলবন্ধন ঘটল। শুরুটাও দাপটের সঙ্গেই করলেন মহম্মদ শামি ও মহম্মদ সিরাজ। সঙ্গ দিলেন শার্দুল ঠাকুর। তবে সেই সুখের সময় ২৪.১ ওভার পর্যন্ত স্থায়ী হল। উসমান খোয়াজা, ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্নাস লাবুাশানে ফেরার সময় অজিদের স্কোরবোর্ডে ৭৬ রানে ৩ উইকেট লেখা ছিল।
ওভালের ভারতীয় দলের দাপাদাপি দেখে মনে হচ্ছিল ক্রিকেট পণ্ডিতদের পর্যবেক্ষণ রোহিত ও তাঁর পেস বোলাররা ভুল প্রমাণিত করে ছাড়বেন। কিন্তু কোথায় কি! চাপের মুখে চুপসে না গিয়ে পালটা মারতে শুরু করে দিলেন ট্রাভিস হেড। অবশ্য আধুনিক যুগের ক্রিকেটের 'ফ্যাব ফোর'-এর অন্যতম মুখ স্টিভ স্মিথও বা কীভাবে শান্ত থাকতে পারেন। ট্রাভিস বিপক্ষের উপর চাপ বাড়িয়ে চোখের নিমেষে ১০৬ বলে সেরে নিলেন তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের ষষ্ঠ শতরান। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম। অন্যদিকে স্মিথ ছিলেন সংযমী। অশ্বিন তাঁর বরাবরের যম! লাল বলের ক্রিকেটে প্রাক্তন অজি অধিনায়ককে ছয়বার আউট করেছেন অভিজ্ঞ অফ স্পিনার। কিন্তু রোহিত ও হেড কোচ রাহুলের দ্রাবিড়ের ভুলে এই ফাইনালে তো অশ্বিন নেই। বেলা বাড়তেই ওভালের সবুজে পিচে বল সুইং করা বন্ধ করে দিয়েছে। রবীন্দ্র জাদেজা প্রভাব ফেলতে একেবারে ব্যর্থ। উইকেট তোলা তো অনেক দূরের কথা, বরং বেধরক মার খেলেন।
আরও পড়ুন: Sourav Ganguly: পন্টিংয়ের বিদায় আসন্ন, আগামী মরসুমে পন্থ-ওয়ার্নারদের কোচ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই ট্রাভিস হেডের ব্যাটিং ফর্ম ভারতীয় ক্রিকেট শিবিরে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমা করছিল। সেই আশঙ্কাই অবশেষে সত্যি হল। তিনি নিজের সিগনেচার স্টাইলে ব্যাটিং করলেন এবং ভারতীয় পেসারদের কার্যত তুলোধনা করে ছাড়লেন। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঠিক পরেই লাবুশেন যখন সামির বলে বোল্ড আউট হয়ে ফিরে যান, ঠিক সেই সময় ব্যাট করতে নামেন ট্রাভিস হেড। সতীর্থ হিসেবে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দেন স্টিভ স্মিথ। তাঁরা দুজনেই একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রোহিত শর্মার দলের উপরে যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে শুরু করেন।
তবে শুধু জাদেজাকে দোষ দিয়েই বাঁ কী লাভ! অশ্বিনের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া উমেশ যাদব এবং রোহিতের পছন্দের অলরাউন্ডার শার্দুল, কোনও স্পেলেই দাগ কাটতে পারেননি। উলটে অজি ব্যাটারদের দ্রুত রান তোলার সুযোগ দিয়েছিলেন। ভারতের হয়ে নতুন বল শুরু করেন মহম্মদ শামি ও মহম্মদ সিরাজ। তাঁরা খারাপ বল করেননি। খেলতে সমস্যা হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের। রান হচ্ছিল না। প্রথম ১২ ওভারে মাত্র ২৩ রান হয়। বোলিং আক্রমণে প্রথম পরিবর্তন হিসাবে আনা হয় উমেশকে। তার পরেই বদলে যায় খেলার ছবিটা। এ বারের আইপিএলে ভাল ছন্দে ছিলেন না উমেশ। চোটে ভুগছিলেন শার্দুল। ওভালেও সেটা দেখা গেল। বলের লাইন, লেংথ ঠিক করতে পারলেন না দু'জন। হয় খুব ফুল লেংথে বল করলেন, নইলে শর্ট লেংথে বল পড়ল। ফলে শামি ও সিরাজের শুরুর দিকেই লড়াই কাজে এল না।
দ্বিতীয় দিনেও যদি অজি ব্যাটাররা রোহিতের বোলারদের এমনই মহড়া নেয়, তাহলে এবারও ফাইনাল হার শুধু সময়ের অপেক্ষা। কারণ প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, স্কট বোল্যান্ডের সঙ্গে ন্যাথান লিও-তো টিম ইন্ডিয়াকে ছেড়ে দেবে না। কমেন্ট্রি করতে করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী। তিনি এই পারফরম্যান্সের জন্য আইপিএল টুর্নামেন্টকেই দায়ী করলেন।
শাস্ত্রী'র কথায়, টানা ২ মাস আইপিএল টুর্নামেন্ট খেলার পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচ খেলতে এলে এমনই অবস্থা হয়। আইপিএল টুর্নামেন্টে একজন বোলারকে মাত্র ৪ ওভার বল করতে হয়। আর এখানে ৬-৭ ঘণ্টা মাঠে ঠায় ফিল্ডিং করতে হয়। এই পরিস্থিতির সঙ্গে আগে থেকে মানিয়ে না নেওয়ার কারণেই টিম ইন্ডিয়ার এমন হাল হয়েছে। সঙ্গে তিনি আরও যোগ করেছেন, ইংল্যান্ডের ঠান্ডা এমনিতেই একটু বেশি। বুধবার সারাদিন ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেটারদের যে শারীরিক ধকল হবে, সেটা বৃহস্পতিবার সকালেও থাকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে টিম ইন্ডিয়া দ্বিতীয় দিন কেমন পারফরম্যান্স করে, সেইদিকে নজর রাখতেই হবে।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)