সন্দীপ ঘোষ চৌধুরী: জেঠুকে বাবা সাজিয়ে ভুয়ো ভারতীয় পাসপোর্ট বানিয়ে পাড়ি দিয়েছিল কুয়েতে। বাংলাদেশের বাসিন্দা যুবকের এহেন কীর্তি পুনর্নবীকরণ করতে গিয়ে ধরা পড়ল জেলা গোয়েন্দা দপ্তরের হাতে। অভিযুক্ত যুবক সায়ন বাগচী বর্তমানে কুয়েতে রয়েছে। পাশপোর্টে ভুয়ো বাবা প্রমথ বাগচি কাটোয়ায় জেলা গোয়েন্দা দপ্তরে গিয়ে ঘটনা স্বীকার করে মুচলেখা দিয়ে জানিয়েছে, সায়ন বাগচী তার ছেলে নয়।
ভুয়ো বাবা দেখিয়ে বাংলাদেশি যুবকের ভারতীয় পাশপোর্ট করিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি একাইহাট এলাকায় এসব ভুয়ো নথি জমা করে ভোটারকার্ড পাশপোর্ট করিয়ে বিজেপি লাভবান হচ্ছে। এদিকে বিজেপি নেত্রী সীমা ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূলের কর্মীরা তাদের শাসন ক্ষমতায় ভুয়ো আধার কার্ড ভোটার কার্ড তৈরি করে পাশপোর্ট তৈরি করাচ্ছে। বিজেপির দাবি এই চক্র তৃণমূলের কর্মীরা চালায়। এখন ধরা পড়ে বিজেপির ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায় দশ বছর আগে ভারতে বেড়াতে আসা বাংলাদেশি যুবক কৌশলে ভারতীয় পাসপোর্ট বানিয়ে সোজা পাড়ি দেয় কুয়েতে। পাসপোর্ট নবীকরণের সময়ে গোটা ঘটনা সামনে আসতে জালিয়াতি সামনে উঠে আসে। চোখ কপালে ওঠার জোগাড় জেলা গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদের। পাসপোর্ট জেঠুকে বাবা দেখিয়ে তৈরি হয়েছে আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড।
কাটোয়া গোয়েন্দা দপ্তরের তদন্ত রিপোর্ট কলকাতা পাসপোর্ট অফিসকে জানিয়ে দিয়েছে যে সায়ন বাগচীর জমা করা সব নথি জাল। জানা গেছে, সায়ন বাগচী বাংলাদেশের ফরিদপুরের নাগরিক। ২০১৪ সালে সায়ন বাগচী ভারতে বেড়াতে আসে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া-১ ব্লকের খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের একাইহাট গ্রামে তার জেঠু প্রমথ বাগচী এবং জেঠিমা প্রান্তি বাগচীকে বাবা মা হিসেবে উল্লেখ করে। জেঠু প্রমথ বাগচী ও জেঠিমা প্রান্তি বাগচীকে বাবা-মা সাজিয়ে কৌশলে বিভিন্ন ভারতীয় নথি ও পাসপোর্ট বানিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। কয়েকবার বাংলাদেশে যাতায়াত করার পর ২০১৬ সালে ভারতীয় পাসপোর্ট হাতে পেয়ে সে পাড়ি দেয় কুয়েতে। সম্প্রতি কুয়েত থেকে সায়ন বাগচী পাসপোর্ট নবীকরণের জন্য আবেদন করে। নবীকরণ প্রক্রিয়ার পুলিশি তদন্তে সমস্ত বিষয়টি গোয়েন্দাদের নজরে আসে। তদন্তে নেমে জেলা গোয়েন্দা আধিকারিকরা জানতে পারেন যাঁদের মা-বাবা বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা আদতে সায়নের জেঠু ও জেঠিমা। সায়নের প্রকৃত বাবা-মা, প্রশান্ত বাগচী ও মনিকা বাগচী, এখনও বাংলাদেশের বাসিন্দা। সেখানে রয়েছে তাদের নাগরিক পরিচয়পত্র।
আরও পড়ুন-জায়গা নিয়ে চুলোচুলি... ২ মহিলার কিল-চড়-ঘুষি, ফাটল মাথা! লেডিস স্পেশালে রক্তারক্তি কাণ্ড!
আরও পড়ুন-আগামিকাল থেকে ফের হাওয়াবদল, টানা ৫ দিন প্রবল বৃষ্টিতে ভাসবে এইসব জেলা
একাইহাটে প্ৰমথ বাগচীর বাড়িতে যায় জেলা গোয়েন্দা কর্মীরা। ঘটনার কথা জানতে পেরে তারা হতবাক। প্রমথবাবু জানান, "আমরা কিছুই জানতাম না। ভাইপো বেড়াতে এসেছিল মাঝে মধ্যে আমাদের বাড়িতে থাকত। কিন্তু এমন কিছু যে করেছে, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝিনি। এখন শুনছি আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মা-বাবা সাজিয়ে পাসপোর্ট করে কুয়েত চলে গেছে! পাসপোর্ট তৈরির সময় পুলিস কোন তদন্ত করতে আমাদের বাড়ি আসেনি বলে দাবি করেন প্রমথ বাগচী।
অন্যদিকে জেলা গোয়েন্দা দফতর সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে পাসপোর্ট দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি জেলা পুলিসকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। কীভাবে এমন জাল নথি ব্যবহার করে পাসপোর্ট তৈরি হল, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত। তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,খাজুরডিহি পঞ্চায়েত কীভাবে সায়ন বাগচিকে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট দিয়েছে তার তদন্ত করা হবে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)