Home> রাজ্য
Advertisement

Cancer patient fighting back: যেন রূপকথা! বিবাহ বিচ্ছেদ, কর্কট রোগের যন্ত্রণার পাহাড় পেরিয়ে হার না মানার লড়াই...

Dakshin Dinajpur: অভাব আর অসুস্থতা যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসার ব্যয়, একা মেয়েকে বড় করার দায়িত্ব—সবকিছুই মিলিয়ে পলি তখন ভীষণভাবে দিশেহারা। জীবনের প্রতি সমস্ত আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। একসময় মনে হয়েছিল, আর হয়তো বেঁচে থাকার দরকার নেই। কিন্তু তখনই ভিতর থেকে জেগে ওঠে জীবনের প্রতি এক নতুন আকাঙ্খা। 

Cancer patient fighting back: যেন রূপকথা! বিবাহ বিচ্ছেদ, কর্কট রোগের যন্ত্রণার পাহাড় পেরিয়ে হার না মানার লড়াই...

শ্রীকান্ত ঠাকুর: পতিরাম থানা এলাকার বিদয়পুর গ্রামের পলি মন্ডলের জীবন যেন এক রূপকথার গল্প—তবে সেই গল্পে আছে চোখের জল, যন্ত্রণার পাহাড়, আবার আছে অদম্য মানসিকতা আর হার না মানার জেদ। ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির সঙ্গে লড়ে কেবল নিজে বেঁচে থাকার লড়াই জেতেননি, বরং আশেপাশের অন্তত একশো জন নারীর জীবন বদলে দিয়েছেন এই সাহসিনী।

আরও পড়ুন, Cyclone Shakti: বাংলার কোথায় ও কবে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় 'শক্তি', চলে এল নতুন আপডেট

২০০১ সালে পলির বিয়ে হয় গঙ্গারামপুরের পৈতা দিঘি এলাকায়। ২০০৩ সালে কন্যা রিয়া সৈয়দের জন্মের কিছুদিন পরেই ধরা পড়ে গলায় ক্যান্সার। তখন থেকেই বদলে যেতে থাকে পলির জীবন। ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসার দায় নিতে রাজি হয়নি শ্বশুরবাড়ির কেউ। উপরন্তু, নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অসুস্থ শরীর আর তিন মাসের শিশু কন্যাকে নিয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন বাবার বাড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিদয়পুর গ্রামে। 

২০০৭ সালে হয় বিবাহবিচ্ছেদ। এরপর থেকেই জীবন বদলানোর প্রত্যয় আরও দৃঢ় হয়। আর্থিক কষ্ট ও নিজের সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে বুঝতে পারেন—প্রত্যেক নারীর জন্য স্বনির্ভরতা কতটা জরুরি। হার না মানা মানসিকতা নিয়ে শুরু করেন নতুন পথচলা। সেই ভাবনা থেকেই শুরু করেন আত্মনির্ভরতার এক নতুন অধ্যায়। ২০১৫ সালে আত্মীয় বাড়িতে গিয়ে কার্পেট তৈরির প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ২০১৮ সালে একটি কার্পেট তৈরির প্রশিক্ষণ নেন এবং একটি মাত্র মেশিন নিয়ে নিজের বাড়িতেই শুরু করেন কার্পেট বানানোর কাজ।

প্রথমেই চারজন স্থানীয় মহিলাকে শেখান এই কাজ। ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরের বছর আটজন মহিলা যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই পলির নেতৃত্বে কার্পেট তৈরির প্রশিক্ষণ ও উৎপাদনের কাজ শুরু করেন ৪০ জন মহিলা। এখন তার ঘরে চলছে ৮ টি মেশিন। শুধু তাই নয়, তার সহায়তায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নারী স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। এই নারী উদ্যোক্তা আজ শুধুই একজন কার্পেট প্রস্তুতকারক নন, বরং গোটা এলাকার নারীদের কাছে তিনি এক আলোকবর্তিকা। তাঁর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে এক শক্তিশালী স্বনির্ভর মহিলাদের দল, যারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। এখন তাঁর বাড়িতেই কাজ করছেন ৪০ জন মহিলা, যারা প্রত্যেকেই আজ আর্থিকভাবে সাবলম্বী।

পলি মন্ডল নিজের চিকিৎসার ব্যয় যেমন নিজে চালাচ্ছেন, তেমনি একমাত্র মেয়ের উচ্চশিক্ষার দায়িত্বও নিজেই বহন করছেন। বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া একটি ছোট্ট জমিতে গড়ে তুলেছেন নিজের বাড়ি। কিন্তু এখানেই থেমে নেই তাঁর স্বপ্ন। তাঁর লক্ষ্য—বিদয়পুর-সহ গোটা এলাকার সমস্ত নারীদের স্বনির্ভর করে তোলা। ক্যান্সারের যন্ত্রণা আজও তাঁর শরীরে আছে, কিন্তু তার চেয়ে অনেক বড় তাঁর মানসিক শক্তি। নারীর ক্ষমতায়নের সবচেয়ে শক্তিশালী উদাহরণ হয়ে উঠেছেন পলি মন্ডল। তাঁর জীবন কেবল একটি ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প নয়, বরং শত শত নারীর জন্য এক নতুন আশার আলো। এই গল্প বলে—সাহস, মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে জীবনকে নতুনভাবে গড়ে তোলা যায়, যতই কঠিন হোক না কেন পথ।

আরও পড়ুন, West Bengal Weather Update: বৃহস্পতিবার থেকে বদলে যাবে আবহাওয়া, জেলায় জেলায় প্রবল শিলাবৃষ্টি-ঝড়ের তাণ্ডব

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

Read More