রণজয় সিংহ: বেসরকারি স্কুলে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে অষ্টম শ্রেনীর এক ছাত্রের। সুবিচারের দাবিতে সেই ছাত্রের মৃতদেহ এখন সৎকার করেনি পরিবার। হাইকোর্টের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয় কল্যানীর এইমসে। সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসেছে মঙ্গলবার। সেই রিপোর্টেও আত্মহত্যায় মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই রিপোর্ট মানতে নারাজ ছাত্রের পরিবার। আগামীকাল মৃতদেহ সৎকার করবে পরিবার। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ও স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই লড়াই চলবে বলে দাবি পরিবারের।
চলতি মাসের ২ তারিখ রাতে মানিকচকের রোজমেরী মিশনারী স্কুলের আবাসন থেকে দেহ উদ্ধার হয় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রের। ছাত্রের পরিবার অভিযোগ করেন, বেসরককারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের অত্যাচারে মৃত্যু হয় শ্রীকান্তের। ছাত্রের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি মানিকচক থানার পুলিস। তাঁদের ছেলে ন্যায়বিচার পায়নি তাই সৎকার না করে ছাত্রের মৃতদেহ তার বাড়িতেই বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এরপর সঠিক ময়নাতদন্তের দাবি করে পরিবার।
পরিবারের দাবিতে, প্রথমে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত হয়। সেই রিপোর্টে আত্মহত্যার কথা জানানো হয়। সেই তথ্য মানতে নারাজ ছিল ছাত্রের পরিবার। মৃতদেহ সৎকার না করে বাড়িতেই ফ্রীজার করে রাখে বিচারের আশায়। দাবি করে পুনরায় ময়নাতদন্তের। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রের পরিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য। কল্যানী AIIMS ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও এল আত্মহত্যার কথাই।
ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ পুলিস অভিযুক্ত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাজির হোসেনকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। অভিযুক্তের সঙ্গে যোগসাজশ করে ছাত্রের মৃত্যুর পিছনে আত্মহত্যার তথ্য খাড়া করছে। আর তাই নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয়েছে ছাত্রের পরিবার। আর পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য ছাত্রের দেহটি ১৩ দিন ধরে সৎকার না করে ফ্রীজার করে রেখেছিল। গ্রামবাসী ও ছাত্রের মা-বাবার দাবি অভিযুক্তদের ধরা হোক। তাদের ফাঁসির দাবি গ্রামবাসীদের।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ বিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়নি। ছাত্রটি আবাসনের যে ঘরে আত্মহত্যা করেছে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন সেই ঘরে ৪০ জন ছাত্র একসঙ্গে থাকে। রাতে সকল ছাত্র ঘুমিয়ে পড়েছিল। এমন যুক্তিও মানতে নারাজ পরিবার। ফলে এই অষ্ঠম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যুর পিছনে রহস্য রয়েছে। আর পুলিস ওই রহস্য সমাধান না করে অভিযুক্তকে আড়াল করছে। গ্রেফতার করা হয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই ময়দানে বিজেপি। মালদা দক্ষিণ বিজেপির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক গৌড় চন্দ্র মন্ডলের দাবি, চটি চাটা পুলিস তৃণমূল কংগ্রেসের অঙ্গুলিহেলনে চলে। তারই প্রমাণ মানিকচকের ঘটনা। এখনও পর্যন্ত পুলিস তদন্ত করেনি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগের পরও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেনি। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ইমরান হাসানের অভিযোগ বিজেপি ছাত্রের মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করছে। এর পিছনে বড়সড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। বহিরাগত ব্যক্তির মদতে এমন ঘটছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)