সন্দীপ ঘোষচৌধুরী: কেউ কথা রাখেনি। কেউ কথা রাখে না। দুর্ঘটনাস্থলে এসে নেতা মন্ত্রীরা অনেক বড় বড় কথা বলে গেলেন, কিন্তু কার্যকরী কিছুই হল না। স্বজনও হারালাম, সম্পদ ও গেল... এমনই আক্ষেপ মঙ্গলকোটর বাসিন্দা, করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় মৃত আরমান খাঁর পরিবারের। অভিশপ্ত ট্রেন কেড়ে নিয়েছে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যকে। সঙ্গে দিয়ে গেল ঋণের বোঝা!
বালেশ্বরের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত আরমান খাঁয়ের দেহ আজ কাটোয়া মহুকুমা হাসপাতালে শনাক্ত করে তাঁর পরিবার। ময়নাতদন্তের জন্য কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে আনা হয়েছিল দেহ। জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোট থানার মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দেউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন বছর ৩৬-এর যুবক আরমান খাঁ। সংসারের অভাব মেটানোর তাগিদে সুদূর দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন আরমান। বাড়িতে মা, স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। ১৫ দিন আগে চেন্নাই থেকে বাড়ি ফিরছিলেন আরমান। আবার কাজে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে সেদিন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে করে রওনা দিয়েছিলেন আরমান। শুক্রবার ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর।
পরিবারের সদস্যরা দুর্ঘটনা খবর পাওয়ার পর থেকে ফোন করে না পেয়ে প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে ছেলেকে খুঁজতে রওনা দেন বালেশ্বরের উদ্দেশে। সেখানে গিয়ে দু-তিনটে ঘর খুঁজে লাশের গাদা থেকে দেহ শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। এখন সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিখরচে দেহ পাঠানোর কথা থাকলেও, অভিযোগ কোনওরকম সহায়তা পাননি তাঁরা। নিজেরাই ১৫ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে মঙ্গলকোটের দেউলিয়া গ্রামে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসেন দেহ। মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে কোনওরকম সরকারি সাহায্য না পেয়ে, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা ধার করে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া মেটান পরিবারের সদস্যরা। আত্মীয়দের অভিযোগ, রেলের তরফে কোনও সাহায্য মেলে নাই। ময়নাতদন্ত ছাড়া-ই দেহ বাড়ি নিয়ে আসায়, আজ কাটোয়ার এসডিপিও ও মঙ্গলকোট বিডিও-র তত্ত্বাবধানে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে আরমান খাঁয়ের দেহের ময়নাতদন্ত হয়। ছেলের মৃত্যুর শোকে কার্যত পাথরে পরিণত হয়েছেন আরমানের মা। শোকস্তব্ধ স্ত্রী-সন্তানেরারও। এদিকে তার উপর মাথায় চেপেছে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ নেওয়া ধার। কার্যত অথৈ জলে পড়েছে গোটা সংসার।
ওদিকে একই ঘটনা ঘটেছে রেল দুর্ঘটনায় মৃত সাদ্দাম শেখের পরিবারের ক্ষেত্রেও। ২০ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে দেহ কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবার। অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া মেটাতে গয়না বন্ধক দিতে হল পরিবারকে। দুর্ঘটনায় মৃত সাদ্দাম শেখের আত্মীয় নজরুল শেখ অভিযোগ করলেন, 'ওড়িশায় আমরা কোনও সাহায্য পায়নি। রেল থেকে বলা হল, নিখরচায় মৃতদেহ পৌঁছানো হবে। কিন্তু আমরা হাতে-পায়ে ধরে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দেহ নিয়ে এসেছি। আংটি, গলার হার বন্ধক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া মেটাতে হল।'