ই গোপী: মানুষের জীবন কখনও কখনও গল্পকেও হারমানায়। প্রত্যন্ত গ্রামবাংলা থেকে কারও লড়াই সবার অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। তেমনই এক লড়াইয়ের গল্প সামনে এল বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত পাবড়া গ্রাম থেকে। গ্রামের হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছোটন কর্মকার তার বাবা কানাই কর্মকারের সঙ্গে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ফেরি করতো। বাবা-ছেলে সাইকেল টেনে মনোহারি সামগ্রী বিক্রি করতো এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। এবার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল সেই ছোটন। আইআইটি প্রবেশিকা পরীক্ষায় এবার সফল হল ছোটন। ভর্তি হল খড়গপুর আইআইটির ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং-এ।
আরও পড়ুন-তিনি 'ভক্তের ভগবান', একেবারে চোখের সামনে রোহিত, চোখে জল অনুরাগীর!
কীভাবে এই প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে এই তাক লাগানো সাফল্য? পরিবারের আর্থিক সামর্থ নেই। কিন্তু স্বপ্ন ছিল আইআইটিতে পড়ার। সেই কাজে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ছোটনের স্কুলের শিক্ষক, একাধিক স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা। তাদের সাহায্য ছাড়া যে এই স্বপ্ন সফল হতো না তা বারবার করে বলছে চোটন। লক্ষ্য যেহেতু আইআইটি তাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুয়োগ পাওয়ার পরও আইআইটি প্রবেশিকার ফলের জন্য অপেক্ষা করছিল ছোটন। শেষপর্যন্ত তাতে সফল হল বাঁকুড়ার এই মেধাবী পড়ুয়া।
ছোটনের লড়াই যদি হয় তার দারিদ্রের সঙ্গে তাহলে নদিয়ার পিয়াসা মহলদারের লড়াইটা ছিল তার শারীরিক প্রতিবন্ধকরার সঙ্গে। 'ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট' বা 'নেট' পরীক্ষায় ৯৯.৩১ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন নদিয়ার শান্তিপুর পটেশ্বরী স্ট্রিটের এই পিয়াসা। মাত্র তিন ফুট উচ্চতার পিয়াসা জন্ম থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার। নিজে থেকে চলাচল করতে পারেন না। ভালো করে বসতেও পারেন না। হাত থাকলেও হাত দিয়ে কিছু বহন করতে পারেন না। শুয়ে একদিকে পাশ ফিরে ছোট্ট দুটো হাত দিয়ে পেন ধরে কোনও রকমে লিখতে পারেন, পড়াশোনাও করেন ওই ভাবেই। কিন্তু এসব তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি। এই সব প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় জয় করে অনন্য সাফল্য পেয়েছেন তিনি।
নিজের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে পিয়াসা বলেন, শান্তিপুরের একটি কেজি স্কুলে ভর্তি হই। সেখানে ক্লাস করার মতো পরিকাঠামো ছিল না। তাই সেই স্কুল ছেড়ে স্থানীয় আমড়াতলা গার্লস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখানেই চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করি। এরপর শান্তিপুরের রাধারানী নারীশিক্ষা মন্দিরে ভর্তি হই। সেখানে ক্লাস ফাইভ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করি। তারপর শান্তিপুর কলেজ থেকে স্নাতক হই। এরপর কৃষ্ণনগর গভর্মেন্ট কলেজ থেকে বাংলায় এমএ। এবার প্রথম নেট পরীক্ষায় বসে ৯৯.৩১ শতাংশ নম্বর পেয়েছি।