প্রবীর চক্রবর্তী: যত চেষ্টাই করা হোক বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। কেউ বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গায়ে আঁচড় কাটতে পারবে না। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি অমিত শাহ হন তাহলে বাংলারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা মনে রাখবেন। মালদহের সুজাপুরের সভা থেকে এভাবেই বিজেপিকে নিশানা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-ফের উত্তপ্ত বাসন্তী, শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বোমাবাজির অভিযোগ
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে অভিষেক বলেন, অনেক জায়গায় নিজেদের মধ্য়ে বোঝাবুঝি করে প্রার্থী দিয়েছে বিরোধীরা। অনেক জায়গায় বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে। সিবিএম, কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। অনেক জায়গায় কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি, সিপিএম দেয়নি। অনেক জায়গায় আবার সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু তৃণমূল সব জায়গায় প্রার্থী দিয়েছে। কারণ তৃণমূলের সঙ্গে একমাত্র মানুষের বোঝাপাড়া রয়েছে। অন্য দলের সেই বোঝাপাড়া নেই। মালদার মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ কারণ ২০২১ সালের লড়াইয়ে যেকটি জেলা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছিল তার মধ্যে মালদহের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জেলার ১২ বিধানসভার মধ্যে ৮টি আসনে তৃণমূলকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছিলেন। আপনাদের কথা দিচ্ছি মালদহের সার্বিক উন্নয়ণের দায়দায়িত্ব আমাদের। বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে আমারা দেব না। যারা ভেবেছিল, ধর্মে ধর্মে বিভেদ তৈরি করে বাংলায় মানুষকে অতিষ্ট করে ছাড়ব তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ায়ের হাত শক্ত করেছে। আপনাদের বলতে এসেছি, এবার ভোটে কানে শুনে নয় চোখে দেখে ভোট দিতে হবে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর মালদহ থেকে বিজেপি ও দক্ষিণ মালদহ থেকে কংগ্রেস জিতেছিল। আপনারা দেখুন দুজন যে সাংসদ হয়েছেন তার একটা বৈঠক করেছেন যদি দেখাতে পারেন তাহলে আপনাদের সামনে আসব না। গত ১১ বছরে শুধু মালদহ জেলার জন্য রাজ্য সরকারের ৪টি দফতর সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার কাজ করেছে। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদী সরকার মালদহের জেতার পর একশো দিনের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমাদের সামনে তিনটে রাস্তা খোলা রয়েছে, প্রথমত দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রকে বোঝানো যে আমাদের প্রাপ্য টাকা আপনারা আটকে রাখতে পারেন না। টাকা ছাড়তে হবে। মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক করে ওই টাকা ছাড়তে অনুরোধ করেছেন। কেন্দ্র টাকা ছাড়েননি। এখন আমাদের বাকী দুটো রাস্তা, এক মোদী পায়ে ধরো নয়তো দিল্লি গিয়ে আন্দোলন করে টাকা আদায় করে আনা। আপনারা কী চান বলুন।
কেন্দ্রকে নিশানা করে অভিষেক বলেন, অমিত শাহ বলেছিলেন, এনআরসি করে মানুষের মধ্যে বিভাজন করে সংখ্যালঘুদের দেশছাড়া করে ছাড়ব। সেই অমিত শাহকে যে প্যারামিলিটারি নিরাপত্তা দেয় তারাই অধীর চৌধুরীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। অধীর চৌধুরীর দিদির পুলিসের উপরে আস্থা নেই। দাদার পুলিসের উপরে আস্থা। দাদার নাম কী? নরেন্দ্র মোদী। কোনও দিন দেখেছেন, মোদী, অমিত শাহ. দিলীপ ঘোষকে, শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছে? দেখাতে পারবেন? সবাই আক্রমণ করছে কাকে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? চেষ্টা করছে ইডি, সিবিআই করে ঘরে বসিয়ে দিতে। পারেনি। দিল্লির গদ্দারদের কাছে তৃণমূল কংগ্রেস মাথা নত করব না। ওরা বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে। চারশো টাকার গ্যাসের দাম বারোশো টাকা। কোনওদিন দেখেছেন অধীর চৌধুরী এনিয়ে মোদীকে আক্রমণ করেছে? এনআরসি নিয়ে বিজেপি যখন বড়বড় ভাষণ দিচ্ছিল তখন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি যতদিন আছি ততদিন বাংলায় এনআরসি হবে না। এখানে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন করতে দেব না। যতদিন বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস থাকবে ততদিন বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে কেউ একটা আঁচড় কাটতে পারবে না। ভারতের স্বারাষ্ট্র মন্ত্রীর নাম যদি অমিত শাহ হয় তাহলে বাংলার স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এটা মনে রাখবেন। রাজ্যের উন্নয়নের জন্যই তৃণমূলকে জেতাতে হবে।