জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ ডেঙ্গি-পরিস্থিতি ক্রমশ আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে। পশ্চিমবঙ্গে শুধু গতকালই ৯০৫ জন নতুন করে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। গোটা রাজ্যে ডেঙ্গি-পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সব মহল। গত কয়েকদিন ধরেই হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। প্রত্যেকটি জেলায় তাই সতর্কীকরণের কাজ শুরু হয়েছে, কাজ পুরোদমে চলছেও। গোটা রাজ্য জুড়ে জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের এলাকায় বেরিয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করতে। পাশাপাশি চলছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ। ছড়ানো হচ্ছে মশা মারার কীটনাশক তেল, ব্লিচিং পাউডার। সমগ্র ডেঙ্গি-পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নও যথারীতি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। নবান্ন থেকে বিশেষ নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এরই জেরে গোটা রাজ্যে জনপ্রতিনিধিরা বেরিয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে।
আরও পড়ুন: Dengue: ডেঙ্গিতে মৃত্যু বৈদ্যবাটির কিশোরীর, হুগলিতে মৃত বেড়ে ৯
কেন এরকম ভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ডেঙ্গি-পরিস্থিতি? এ নিয়ে করা হচ্ছে সমীক্ষাও। তা থেকে বেরিয়ে এসেছে নানা জরুরি তথ্য। নানা ভয়-ধরানো তথ্য। জানা গিয়েছে, রাজ্যে ৪৬ হাজার ৯৬০টি চৌবাচ্চা রয়েছে। যার অধিকাংশই খোলা থাকে! ভবানীপুর-মানিকতলা এলাকার মধ্য়ে ৩৫০টি বাড়ির জলাধারের ঢাকনা খোলা থাকে! এ শহরে রয়েছে ৫ হাজার ৫৬৯ টি ফাঁকা জমি! যা যথারীতি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন। শহর জুড়ে রয়েছে নির্মীয়মাণ বাড়ি। এই ধরনের নির্মীয়মাণ বাড়িগুলিকে ডেঙ্গি-মশার আস্তানা মনে করা হয়। অধিকাংশ নির্মীয়মাণ বাড়িই রয়েছে দক্ষিণ কলকাতায়। আর কলকাতা জুড়ে রয়েছে ৩ হাজার ৫৫টি পুকুর!
কলকাতায় ডেঙ্গি-সংক্রমণ রীতিমতো ভয়-ধরানো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গিতে মৃত্যু অব্যাহত শহরে। হাসপাতালে-হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা উপচে পড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪৪৪ জনের ডেঙ্গি পরীক্ষা হয়েছে। পিয়ারলেস হাসপাতালে ইতিমধ্যেই এক যুবকের ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতায় ডেঙ্গি সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ১৪ বছরের এক কিশোরীর। তবে সব মিলিয়ে জানা গিয়েছে সংক্রমণে শীর্ষে রয়েছে শহরের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে আক্রান্ত ৪৪৯ জন। উদ্বেগজনক ওয়ার্ডের তালিকায় রয়েছে স্বয়ং মেয়রের ওয়ার্ডও। সেখানে আক্রান্ত ৯৯ জন। কলকাতায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনসচেতনতার লক্ষ্যে ঘুরছেন কাউন্সিলররা। কলকাতার ডেঙ্গি-চিত্র যা জানা গিয়েছে, তা এরকম: এ শহরে ২০১৯ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৭৭০, ২০২০ সালে আক্রান্ত ৯৫৬ জন, ২০২১ সালে আক্রান্ত ৮৯৮ জন। কিন্তু ২০২২ সালের আক্রান্তের সংখ্যা চোখ কপালে তুলে দেবেই-- সেই সংখ্যাটা ৫,৪২৪ জন।
ডেঙ্গিতে পর পর মৃত্যু ঘটছে হুগলিতে। এবার মারা গেল হুগলির বৈদ্যবাটির বাসিন্দা কায়ানাত পারভিন (১৫)। বৈদ্যবাটি পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিল কায়ানাত। পরিবারসূত্রে জানা গিয়েছে, সে কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিল। শুক্রবার দুপুরে তাকে শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই মৃত্যু হয় তার। গত বুধবারই উত্তরপাড়ার এক প্রৌঢ়েরও মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে। এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি সংক্রমণের জেরে ৯ জন প্রাণ হারিয়েছে হুগলিতে। জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজারের গণ্ডি পার করে গিয়েছে। এলাকাবাসী পুরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থার ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ নেই। নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে আছে। ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না। মশা নিধনের ক্ষেত্রেও প্রশ্নের মুখে পুরসভার ভূমিকা।
উল্লেখ্য, বাংলায় ডেঙ্গি সংক্রমণ নিয়ে তুঙ্গে পৌঁছেছে রাজ্য-কেন্দ্র দ্বৈরথ। শুক্রবার রাজ্যের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভারতী প্রবীণ পাওয়ার। তাঁর অভিযোগ, জাতীয় ভেক্টর কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে গত মে মাসে শেষ তথ্য দিয়েছিল রাজ্য। সেখানে ২৩৯ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। এই সংখ্যাটা বর্তমানে পৌঁছে গিয়েছে ৫২০০০-এর উপরে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আধিকারিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে তিনি দেখেছেন, রাজ্যর তরফে নতুন করে ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও তথ্যই দেওয়া হয়নি কেন্দ্রকে! তিনি বলেন, 'কেন্দ্র সরকার এই বিষয়ে রাজ্যকে ক্রমাগত দিকনির্দেশ দেয়। তাদের ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল এই বিষয়ে কাজ করে। রাজ্য সরকারের এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকারকে তথ্য দেওয়া উচিত। কিন্তু বার বার বলার পরেও পশ্চিমবঙ্গ এই বিষয়ে কোনও রিপোর্টিং করেনি।'