জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মাধ্যমিক পরীক্ষার ৭০ দিনের মাথায় এবারের ফল প্রকাশ। শুক্রবার সকাল ৯টায় সাংবাদিক বৈঠক শুরু করেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। ফল প্রকাশের পর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং এসএমএস-র মাধ্যমে তাদের ফল জানতে পারবে।
এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ার পর প্রশ্ন উঠে, মাধ্যমিকের ফল প্রকাশে কোনও রকম বিলম্বিত হবে না তো? তবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আশ্বাস দিয়েছিলেন, যথাসময়েই মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হবে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদও এই একই কথা জানায়। এবছর ৭০ দিনের মাথায় মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হল। ২০২৪ এবং ২০২৩ সালের চেয়েও কম সময়ে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হচ্ছে।
মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে দুজন। ১. নিরোল উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব বর্ধমানের মহঃ সেলিম, যার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২। ২. কন্টাই মডেল ইনস্টিটিউটের সুপ্রতীক মান্না, যার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২।
২০২৫ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সারা রাজ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে পূর্ব বর্ধমানের নিরোল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মহম্মদ সেলিম। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৩। মা মারা যাওয়ার পর ছোট থেকেই মামার কাছেই মানুষ। তার এই কৃতিত্ব সে তার মামাকেই উৎসর্গ করতে চায়। এই খবর পেয়ে অত্যন্ত খুশি তার পরিবার পরিজনরা।
মাধ্যমিকে মহমদ সেলিমের এই চোখ ধাঁধানো সাফল্য তার স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে। নিরোল হাইস্কুলের পড়ুয়া মহম্মদ সেলিম। মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে রাজ্যের মধ্যে চতুর্থ হয়েছে। সেলিমের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২।
এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে সবচেয়ে এগিয়ে পূর্ব মেদনীপুর। দ্বিতীয় কালিম্পং ও তৃতীয় হয়েছে কলকাতা। এবছরে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৯৪ জন। গত বছরের চেয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০ শতাংশ বেশি। পরীক্ষার ৭০ দিনের মাথায় মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ। মাধ্যমিকে এবারে চতুর্থ হয়েছে কেতুগ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সেলিম। তার এই সাফল্যে অভীভূত তার পরিবারের সকলে।
মাধ্যমিকের চতুর্থ স্থানাধিকারী মহম্মদ সেলিম বলেছেন, 'আমার খুবই ভালো লাগছে। পরীক্ষার ফল আমি ৯টার সময় জানতে পারি। চেষ্টা করেছিলাম খুব ভালো রেজাল্ট করার। কিন্তু এতটা পাবো তা আমি ভাবতে পারিনি। ভালো গাইডেন্স পেলেই ভালো ফল হবে, শুধুমাত্র যে শহরে থাকলেই যে ভালো ফল হবে এমনটা নয়। আমি খুব গল্পের বই পড়তে ভালোবাসি। আমি পরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাই।'
প্রসঙ্গত মহম্মদ সেলিমের মা ছোটবেলায়ই মারা যায়। মা-বাবার গাইডেন্স ছাড়া বেড়ে ওঠা ছেলেই আজ মাধ্যমিকে প্রথম। যদিও প্রথম থেকেই তার পাশে ছিলেন তার মামাই। তার মা মারা যাবার পর থেকেই তার মামার সানিধ্যেই সে বেড়ে উঠেছে। তাই তার এই সাফল্য সে তার মামার সঙ্গেই ভাগ করে নিতে চায়। তার এই খুশিতে তার পরিবারের মানুষজন যেমন খুবই খুশি তেমনই তার স্কুলের শিক্ষকরাও খুবই খুশি। তার স্কুলের শিক্ষকরা বলেছেন, ছোটো থেকেই সে খুব ভালো ছেলে ছিল। তার যে এমন ভালো রেজাল্ট হতে পারে তা তাঁরা আগে থেকেই জানতেন। তার এই রেজাল্টে তাদের স্কুলের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। তার মামা বলেছে, তিনি খুবই খুশি। তার জন্য গর্বিত পরিবারের সকলে।
প্রতিবন্ধীকথা জীবনের বাধা হতে পারে না তা প্রমাণ করল কেতুগ্রামের মহম্মদ সেলিম, খুব ছোট বয়সে মাকে হারায়, বাবা থাকলেও সঙ্গে পাইনি, বাবা মাঝে মাঝে এসে ছেলেকে কিছু টাকা দিয়ে চলে যেতেন। ছোটবেলা থেকেই মামার বাড়িতে মানুষ, মামা সাহায্য পেয়েছে ছোট থেকে। পড়াশোনা বাইরে শুধু বাগান তৈরি করত।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও ব্যাক্তিগত জীবনেও ঝঞ্ঝা কাটিয়ে মাধ্যমিকে চতুর্থ কেতুগ্রামের মহম্মদ সেলিম। রয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অনেক ছোটোতেই মারা গেছেন মা। তারপর থেকেই বাবা মা হারা মহম্মদ সেলিম। ছোট থেকেই মামার কাছেই মানুষ। তবে এতোকিছু সত্বেও মা বাবার অভাব শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনোও কিছুই তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নাই। অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর অধ্যাবসায় আজকে সাফল্য এসেছে সেলিমের।
আরও পড়ুন: Fish Scale Business: চাহিদা আকাশছোঁয়া, মাছের আঁশ থেকেই বিকল্প আয়ের সন্ধান!
মাধ্যমিকে সারা রাজ্যের মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম সিরুন্দির বাসিন্দা মহম্মদ সিরাজ। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২। টিভিতে রেজাল্ট শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে সেলিম ও তার পরিবারের সদস্যরা। পুরোনো দিনের কথা মনে করে চোখে জল আসে সেলিমের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকারও। সেলিম বলে, জীবনে চলার পথে বাধা আসবেই সব কিছুকেই পেরিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই।
নিরোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, সেলিমের সাফল্য উদাহরণ হয়ে থাকবে সেই সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের কাছে যারা হীনমন্যতায় ভোগেন। চেষ্টা করলে সাফল্য আসা নিশ্চিত। ছেলের এই সাফল্যের কথা শুনে ছুটে এসেছে সেলিমের বাবাও। তিনি বলেন, আমি ওর সাফল্যে খুবই খুশী, আমি চাই ও যেন আরও বড় হয়। জীবনে আরও উন্নতি করুক স্কুলে যাওয়ার পরেই সেলিমকে নিয়ে খুশীতে মেতে ওঠেন তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের। আনন্দের খবর শুনে মিষ্টিমুখ করালেন সেলিমকে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)