জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia Ukraine War) থামার কোনও লক্ষণই নেই। প্রতিদিনই যুদ্ধরত দুই দেশের লড়াই নতুন নতুন মোড় নিয়ে আরও কঠিন হচ্ছে। সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে ইউক্রেন। তারা বলছে যে, রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা S-500 এর রাডার নাকি তারা ধ্বংস করে দিয়েছে! রাশিয়ান S-500 সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলেও যা বিশ্বে প্রসিদ্ধ। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তে ভারতেরও কিন্তু রক্তচাপ বাড়ল!
কী জানা যাচ্ছে!
ইউক্রেনের তদন্তকারীরা নিশ্চিত করেছেন যে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক উৎক্ষেপিত একটি ড্রোন, রাশিয়া-অধিকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চল ক্রিমিয়ায় অত্যাধুনিক S-500 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত এক রাশিয়ান রাডার সফল ভাবে ধ্বংস করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত একটি ফুটেজ সাইবারবোরোশনো সংস্থা বিশ্লেষণ করেছে। যদিও প্রাথমিকভাবে S-400-এর 96L6 রাডারে আক্রমণটি করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি যে, এটি 98L6 রাডার কোডেড, যা S-500 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়!
আরও পড়ুন: যুদ্ধে চড়ল শুল্ক! ভারতের স্বাধীনতা দিবসেই মুখোমুখি ট্রাম্প-পুতিন! গলবে বরফ? মিলবে স্বস্তি?
ইউক্রেন কি আদৌ S-500 রাডার ধ্বংস করেছে?
98L6 কোড নামের রাডারটি ২০২০-২১ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এটি মাল্টি-এলিমেন্ট অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিকলি স্ক্যানড অ্যারে (এইএসএ) প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত, যা খুব উচ্চ স্তরের জানকিম ক্ষমতা প্রদান করে। এই রাডারটি ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব এবং ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় অ্যারোডাইনামিক এবং ব্যালিস্টিক উভয় লক্ষ্যবস্তু সনাক্ত এবং ট্র্যাক করতে সক্ষম। বাইরে থেকে দেখলে এই রাডারের সঙ্গে S-400-র 96L6E রাডারের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে এবং এটি এক ফোর-অ্যাক্সেল MZKT চ্যাসিসে মাউন্ট করা হয়েছে। এর ৩৬০-ডিগ্রি নজরদারি ক্ষমতার পাশাপাশি ন্যারো সেক্টর মোডে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে, যা ব্যালিস্টিক লক্ষ্যবস্তু সনাক্ত করতে সহায়তা করে। রাশিয়া ক্রিমিয়ায় এই রাডারটি স্থাপন করেছে, যা তারা ২০১৪ সালে দখল করেছিল।
কেন ভারত চাপে?
অপারেশন সিঁদুরের সময়ের কথা। গত ৭-৮ মে রাতে মাঝ আকাশে, পাকিস্তানের সব মিসাইল ও ড্রোন বলে বলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনার এস-৪০০। ভারতের পাক ড্রোন-মিসাইলের মাটিতে তার আঁচও পড়েনি। অপারেশন সিঁদুরেই অভিষেক হয়েছে এস-৪০০-র। ভারতীয় সেনাবাহিনীও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এস ৪০০-র। অপারেশন সিঁদুরের পরেই জানা গিয়েছিল যে, ভারত আকাশ প্রতিরক্ষায় ব্যবস্থায় আরও জোরদার করতে চেয়ে রাশিয়ার থেকে নাকি এস-৫০০ কিনতে চেয়েছে। নিশ্চিতভাবেই বিরাট সমস্যায় পড়বে। এস-৪০০-র চেয়েও অনেক উন্নত এস-৫০০।
এস ৫০০-র ক্ষমতা
৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে বিমান, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং এমনকী ব্যালিস্টিক মিলাইল খুঁজে নিয়ে ধ্বংস করতে পারে এস-৪০০। এস-৫০০-র রেঞ্জ কিন্তু ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। আর এস ৫০০ কিন্তু হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে থামিয়ে দিতে পারে এবং মহাকাশের নিম্ন কক্ষপথে উপগ্রহগুলিকেও টার্গেট করতে পারে। এস-৫০০-র বিশেষত্বই হচ্ছে তার 91N6E রাডার। যা ৮০০-১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তু চিনে ফেলে। এমনকী স্টেলথ বিমান এবং ড্রোন ট্র্যাক করার ক্ষমতাও রয়েছে তার। একসঙ্গে ১০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করে ধ্বংস করতে পারে। এস-৫০০ সজ্জিত 77N6-N এবং 77N6-N1 ক্ষেপণাস্ত্রে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হাইপারসনিক গতিতে আক্রমণ করে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেডও ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পারমাণবিক এবং প্রচলিত হুমকিকে নির্মূল করতে পারে।
আরও পড়ুন: ভারত-পাক-বাংলাদেশ-চিন, ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কগুঁতোর ভিন্ন ধাক্কা! জলের মতো বুঝুন...
এস-৪০০ স্কোয়াড্রন
রাশিয়ার থেকে ভারত ৫টি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন কিনেছে। যার মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যেই সক্রিয় এবং আগামী বছরের মধ্যে আরও দু'টি স্কোয়াড্রন আসবে বলেই আশা করা হচ্ছে। পাঁচটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ভারত ৩৫০০০ কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। ভারত এস-৫০০ কিনলে তাহলে ফের নতুন চুক্তি হবে। যদিও কিছু বছর আগে রাশিয়ার থেকে ভারত পেয়েছিল দারুণ প্রস্তাব। পুতিনের দেশ বলেছিল দুই দেশের যৌথ প্রযোজনায় ভারতে তৈরি হোক এস-৫০০। বছরের শেষে পুতিনের ভারত ভ্রমণের কথা রয়েছে। এখন দেখার ভারত এস-৫০০ নিয়ে কী ভাবে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)